সিডনির ল্যাকেম্বা, গ্রীনএকর, ব্যাঙ্কসটাউন, অবার্নের মতো এলাকাগুলোতে রোজার আমেজ অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। ইফতারের সময়, তারাবিপূর্ব ও তারাবি পরবর্তী সময়ে এ এলাকাসমূহ যে কোনো মুসলিম অধ্যুষিত জনপদ থেকে পৃথক করার উপায় নেই।
ইফাতারের পূর্বে দোকানীরা দোকানের সামনে রকমারি ইফতারির পসরা বসায়। এ সময় দোকানীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় ক্রেতা সামলাতে। আমাদের দেশিয় পরিচিত ইফতার সামগ্রী- জিলাপি, মুড়ি, পিঁয়াজু, বেগুনিও পাওয়া যায়। বিক্রি হয় এরাবিয়ান নানা উপাদেয় খাবার সবকিছুই।
এসব এলাকার মসজিদগুলো তারাবির সময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। প্রতিটি মসজিদে রকমারী ইফতার ও রাতের খাবারের এবং মাঝে-মধ্যে সাহরিরও আয়োজন করা হয়।
মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মসজিদে স্থান পেতে নামাজ শুরুর অনেক আগেই মসজিদে পৌঁছতে হয়। কেননা দেরীতে পৌঁছলে নামাজের স্থান না পেয়ে ফেরত যেতে হবে। মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে হলরুম ভাড়া করে তারাবির নামাজের ব্যবস্থা করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় তারাবির ইমামতি করতে বিভিন্ন দেশ থেকে আলেম, হাফেজ ও কারীরা আসেন। মিসর ও সাউথ আফ্রিকার অনেকেই এখানে নিয়মিত আসেন।
সেদিন কথা হয় শায়খ আহমদের সঙ্গে। তিনি সাউথ আফ্রিকা থেকে দ্বিতীয়বারের মতো এসেছেন সিডনিতে। অত্যন্ত সুন্দর তেলাওয়াত এবং গভীর ইসলামিক জ্ঞানের অধিকারী। অনেক সময় একাই বিশ রাকাত তারাবির নামাজের ইমামতি করেন। নামাজ শেষে তেলাওয়াতকৃত অংশের সংক্ষিপ্ত তাফসিরও করেন তিনি। যা অনেকের নিকট অত্যন্ত প্রিয়।
অস্ট্রেলিয়ায় ঈদের সময় ভিন্ন আমেজ পরিলক্ষিত হয়। শপিংমলগুলোতে ঈদের অনেক আগে থেকেই কেনা-কাটার ধুম চলে। মুসলিম দোকান ছাড়াও অমুসলিমরা ঈদকে সামনে রেখে পণ্যের নানা সমারোহ ঘটায়। শপিং মলে ‘ঈদ মোবারক’ লেখা ব্যানার শোভা পায়।
প্রতিটি মসজিদে ঈদের একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন পার্ক বা ইনডোর খেলার মাঠে ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়।
অস্ট্রেলিয়ায় রোজা উপলক্ষে অফিসের সময়সূচিতে পরিবর্তন না আসলেও মুসলমান স্কুলগুলোতে স্কুলের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়। এসব স্কুলের ক্যান্টিনগুলো বন্ধ থাকে। সাধারণ সময়সূচির প্রায় দুই ঘন্টা আগে স্কুল শেষ হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ বাচ্চাদের ইসলামিক কৃষ্টি ও কালচারে অভ্যস্থ করতে কোরআন প্রতিযোগিতা, ক্লাসরুম ডেকোরেশন ইত্যাদি নানা কর্মসূচির আয়োজন করে থাকেন রমজানে।
নানা কারণে পশ্চিমাদেশগুলোর ন্যায় অস্ট্রেলিয়ায়ও ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে অমুসলিমদের মাঝে নানা প্রশ্ন ও নেতিবাচক ধারণার বিস্তার ঘটছে। অমুসলিমদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরী করতে মুসলমানদের একটি অংশ দাওয়া গ্রূপ নামে অমুসলিমদের মাঝে লিফলেট, কোরআনের অনুবাদকৃত কপি, রাসূল (সা.)-এর জীবনী, ইসলামে নারীর অধিকার ইত্যাদি বিষয়ক গ্রন্থ, পুস্তিকা কিংবা লেখাসমৃদ্ধ প্রচারপত্র বিতরণ করে থাকেন। যা অত্যন্ত প্রশংশনীয় উদ্যোগ।
রমজান মাসে বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়। এসব আয়োজনে অমুসলিমদেরও দাওয়াত দেওয়া হয়। ইসলাম সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরির জন্য এটি একটি প্রশংশনীয় উদ্যোগ।
অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বারা পরিচালিত সংগঠন IPDC (ইসলামিক প্র্যাকটিস ও দাওয়া সার্কেল) এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তারা স্থানীয় একটি ইনডোর খেলার মাঠে ইফতারের আয়োজন করেছে। গত বছর তারা এ প্রোগ্রামে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট সদস্যদের আমন্ত্রণ করেছিলেন।
গতবছর প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মুসলমান নেতাদের সাথে প্রধানমন্ত্রী ভবনে ইফতার করেছেন। এ ইফতার পার্টির আয়োজন অস্ট্রেলিয়ায় মুসলমানদের শক্তিশালী অবস্থানের কথাই জানান দেয়।
লেখক: সিডনি প্রবাসী প্রকৌশলী
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৭
এমএইউ/