রমজানকেন্দ্রিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তারা। এসব অনুষ্ঠানে মুসলমানদের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়তে থাকে।
থাইল্যান্ডে যারা কোরআন মুখস্ত করে তাদেরকে সামাজিকভাবে খুব মূল্যায়ন করা হয়। বাচ্চাদেরকে কোরআন মুখস্ত করায় উৎসাহিত করার জন্য নানাপন্থা অবলম্বন করা হয়। এক অভিনব পদ্ধতিতে থাইল্যান্ডের হাফেজে কোরআনদের খুশি করা হয়। প্রতিবছর রমজানকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে যারা পূর্ণ কোরআন মুখস্ত করেছে তাদেরকে কাঁধে চড়িয়ে পুরো গ্রাম কিংবা শহর ঘুরানো হয়। যাতে অন্যরা কোরআন মুখস্তের প্রতি উৎসাহিত হয়।
এ ছাড়া স্থানীয় হিফজুল কোরআন ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে হাফেজদের নিয়ে কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়, প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়।
প্রতিবছর নতুন রমজানকে বরণ করে নিতে রমজানের প্রথম দিন মেতে ওঠে থাইল্যান্ডের মুসলমানরা রমজানবরণ উৎসবে। এদিন প্রতিটি মুসলিম পরিবার একটি করে পশু জবাই করে। দরিদ্র পরিবারগুলো একটি পাখি হলেও জবাই করে থাকে। থাই জাতির চিরায়ত ঐতিহ্যের পরিচয়বাহী এই নিয়ম তাদের কাছে অনেক প্রাচীন। প্রতিটি পরিবার এই নিয়ম পালন করতে বেশ আগ্রহবোধ করে। অনেক প্রাচীন এই প্রথাটি আজও মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে।
ইফতারের আগে নারীরা দল বেধে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের হয় এবং সুবিধামতো কোনো একটি বাড়ির সামনে বা উঠানে বসে সবাই একসঙ্গে ইফতার করেন। পুরুষরাও একসঙ্গে মসজিদে ইফতার করেন। পুরুষরা রমজানে সাধারণত তাদের স্ত্রীদের রান্না করা খাবার খান না। বরং একজনের স্ত্রীর রান্না করা খাবার অন্য অন্যজন খায়। এই রীতি তাদের পরস্পরের ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। প্রতিটি বাড়ি খাবার তৈরি করে অন্যের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
রমজানে থাইল্যান্ডের মুসলমানরা প্রচুর ফলমূল খায়। আরব দেশের হালুয়া তারা চিনেও না। থাইল্যান্ডের মুসলমানরা তাদের পরিবারের সঙ্গে নিজ দেশে রমজান মাস কাটান। চাকরি বা পড়াশোনার জন্য যারা বাইরে থাকেন তারাও রমজানে দেশে ফিরে যান পরিবারে সঙ্গে রমজান কাটানোর জন্য।
থাই সমাজে চাল ও দুধ দিয়ে তৈরি এক ধরনের কেক পাওয়া যা। সাহরিতে তারা সাধারণত এই কেকটি খায়। যেসব পরিবারের আত্মীয়-স্বজন দূরবর্তী শহরে থাকে কিংবা সন্তান-সন্ততি বিয়ে করে বাইরে থাকে তাদের সঙ্গে রমজানে দেখা সাক্ষাতের প্রচলন রয়েছে থাই সমাজে। পরিবারের লোকেরা তাদের সঙ্গে কাছে কিছুদিন কাটানোর জন্য বেড়াতে যায়।
মজার ব্যাপার হলো, সাহরির সময় বাচ্চা ও যুবকরা ঘরে থাকে না। তারা রাস্তায় বেরিয়ে ফলমূল দিয়েই সাহরি সম্পন্ন করে। ফাওয়ানিস নামে গাছের ছাল ও তেলের মিশ্রণে তৈরি এক ধরনের বিশেষ খাবার পাওয়া যায় থাইল্যান্ডে। সাহরিতে তারা এই খাবার খায় প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে।
পবিত্র রমজান মাসে প্রায় সব মসজিদে আলোকসজ্জা করা হয়। বিভিন্নভাবে মসজিদকে সাজায় তারা। থাইল্যান্ডে সর্বমোট মসজিদের সংখ্যা ১ হাজার ৮৩০টি।
থাইল্যান্ডের মুসলমানরা ইফতারের সময় বড় একটি ড্রামের স্বজোরে আঘাত করে আওয়াজ করেন। যিনি আঘাত করেন তাকে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মোয়াজ্জিন হজরত বিলাল (রা.)-এর নামে ‘বিলাল’ বলে ডাকে। থ্যাইল্যান্ডে সাধারণত খতম তারাবি হয় না। সূরা তারাবিতে সূরা দুহা থেকে নাস পর্যন্ত সূরাগুলো তেলাওয়াত করা হয়। তবে কিয়ামুল লাইলের প্রচলন রয়েছে।
থাই মুসলমানরা রমজান মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন। তারা ইবাদত-বন্দেগি একসঙ্গে একত্রিত হয়ে সম্পন্ন করেন। ইফতার, সাহরি, তারাবি, কোরআন তেলাওয়াত এসব ইবাদত তারা এক জায়গায় একত্রিত হয়ে পালন করেন।
থাইল্যান্ডের মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, শবে কদর বিভিন্ন আলামত নিয়ে আগমন করে। যেমন গাছগুলো নুয়ে যায়, কূপের পানি স্বচ্ছ হয়ে থাকে ইত্যাদি। এসব আলামত দেখেলে তারা আল্লাহতায়ালার কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া ও কান্নাকাটি করেন তারা।
থাই মুসলমানদের কাছে প্রাচীনকালে থেকে একটি অভ্যাস প্রচলিত রয়েছে। রমজানের ২৭তম রাতে তারা পুরো কোরআন তেলাওয়াত করে থাকেন। কারণ, ২৭তম রাত হলো কোরআন নাজিলের রাত।
-আরবি পত্রিকা আল বিলাদ অবলম্বনে
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৭
এমএইউ/