ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

পাপমুক্ত থাকার ঢাল হয়ে ওঠে রোজা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৮
পাপমুক্ত থাকার ঢাল হয়ে ওঠে রোজা পাপমুক্ত থাকার ঢাল হয়ে ওঠে রোজা

মানবজীবনে শুদ্ধতা লাভের এক সূবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে সিয়াম সাধনা। মানবিক গুণাবলী অর্জন ও ঈমানি বোধকে জাগ্রত করার জন্য রোজার ভূমিকা অনন্য। অন্যায়-অশ্লীল কাজ ও প্রবৃত্তি নির্দেশিত পথ দূরে ঠেলে তাকওয়ার পথে চলাই রোজার শিক্ষা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো ও সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলো শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন।

আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করলো। (সুরা আহজাব: ৭০-৭১) 

রমজানের তাকওয়ার দীক্ষা, ধৈর্য ও ত্যাগের মহিমায় মুসলমান মাত্রই এ মাসে প্রবৃত্তিকে পুড়িয়ে শুদ্ধ মানুষ হওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। তাই রমজানুল মোবারক দৈহিক, আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিশুদ্ধির প্রশিক্ষণের মাস। দিনের বেলা রোজা ও রাতের বেলা ইবাদতের মাধ্যমে মানুষ দেহ-মনকে পরিশুদ্ধ করতে পারে রমজান মাসে।  

পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতার জন্য সিয়াম আসে ফিরে ফিরে। সিয়াম ফিরে আসে আত্মশুদ্ধির জন্য, পরিচ্ছন্নতার জন্য, ঈমানী বোধকে জাগ্রত করার জন্য, পার্থিব আকাঙ্ক্ষাকে নিবৃত্ত রাখার জন্য, বিনয় এবং নম্রতা প্রতিষ্ঠার জন্য, সহমর্মিতা ও সৌহার্দের চেতনা উজ্জ্বীবনের জন্য, সর্বোপরি মহান প্রভু আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য।  

রাসুল (সা.) বলেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালের মতো। যতক্ষণ না তাকে ছিঁড়ে ফেলা হয়। (নাসয়ী শরিফ) ঢাল হওয়ার অর্থ এই যে, ঢাল দিয়ে মানুষ যেমন শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করে তেমনি রোজা রাখলে শয়তানের চক্রান্ত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।  

অন্য এক বর্ণনায় আছে, রোজা আল্লাহর আজাব ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়। তাই রোজাকে ঢাল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দয়াল নবীজী (সা.)। রমজানের এ মাসে অত্যধিক ইবাদত-বন্দেগি ও আত্মসংযমের মাধ্যমে সিয়ামের ঢালটি অর্জন করতে হবে আমাদের।  

আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যমে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিতে হবে এ মাসে। তাহলে বাকি ১১টি মাস আমরা সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারবো। আমরা পাবো আল্লাহ ঘোষিত ক্ষমা আর করুণার পুরস্কার।

হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, রমজান মাসের প্রত্যেক দিন এবং রাতে আল্লাহতায়ালা অসংখ্য জাহান্নামিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন, আর এই মাসে প্রত্যেক দিনে এবং রাতে প্রত্যেক মুসলমানের অন্তত একটি নেক দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। (তারগিব)  আরও অনেক বর্ণনায় রয়েছে, রোজাদারের দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। কোনো কোনো বর্ণনায় ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয় বলে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।  

দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, আমরা দোয়া কবুলের পবিত্র ইফতারের সময়ে খাবার-দাবারে এমনভাবে ডুবে যাই যে মাগরিবের নামাজেও অনেকে শরিক হতে পারি না। আমাদের ইফতারের খাবার দেখলে মনে হয় আমরা যেন সারা দিন রোজা রেখে বেশি বেশি খাবার গ্রহণের প্রশিক্ষণ নিয়েছি।  

প্রতিযোগিতা করে আমরা বাহারি ইফতারির আয়োজন করি। এটা লজ্জার কথা। এটা সম্পূর্ণ রোজার বিপরীত কাজ। এটি প্রবৃত্তির প্ররোচনা। এসব বর্জন না করলে আমাদের সিয়াম সাধনা বৃথা যাবে। ৩০ দিন ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট শেষে আমরা থেকে যাবো সেই আঁধারেই, যে আঁধারে আমরা ডুবে ছিলাম এগারো মাস।  

রমজানের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমাদের সবার অন্তরে ঈমানের প্রদীপ জ্বলে উঠুক। মুসলমান জীবন ভর যেন রোজার ঢালটি ব্যবহার করে পাপমুক্ত থাকে। হে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। দান করুন জান্নাতি জীবন।  

লেখক: মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৭ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।