মসজিদের চার দেয়ালে বন্দি থাকার নাম ইতিকাফ নয়, ইতিকাফ হচ্ছে মনের ঘরকে মাবুদের ঘর বানানোর এক নিরন্তর প্রচেষ্টা চালানো। আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবন চলার একটি গাইড লাইন বা পথনির্দেশিকা লাভ করার জন্য নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেওয়া হচ্ছে ইতিকাফ।
আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন হয়ে চির মুক্তিতে ধন্য হওয়া। নবী, সাহাবি, আউলিয়া ও দরবেশরা নিজেকে আজীবন এই ইতিকাফের ধ্যানে মগ্ন রেখেছেন। দীর্ঘদিনের ইতিকাফ ধ্যান সাধনার পর নবীজি মুহাম্মদ (সা.) পেয়েছিলেন মানব মুক্তির গাইড লাইন মহাগ্রন্থ আল কোরআন।
ইতিকাফের এই ধ্যান সাধন করেই তিনি হয়েছিলেন নবী মুহাম্মদ (সা.)। সুফিদের ভাষায়, ইতিকাফের উদ্দেশ্য রুহ ও অন্তরকে আল্লাহর সঙ্গে মিলানো। পৃথিবীর সব ব্যস্ততা থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর জন্য ব্যাকুল হওয়া। পার্থিব সব সংশ্রব ত্যাগ করে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করা।
এ সম্পর্ক নির্জন কবরেও কাজে আসবে। কারণ ইতিকাফে জগতের সব মায়াজালকে ছিন্ন করে মনকে একমাত্র আল্লাহর ধ্যানে মগ্ন করা হয়। আপন সত্তাকে মনিবের হাতে সোপর্দ করে তার দুয়ারে মাথা ঠেকানো হয়।
শয়নে স্বপ্নে সব সময় আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত থাকা যায়। আল্লাহ বলেন, বান্দা যদি আমার দিকে আধা হাত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার প্রতি দুই হাত এগিয়ে যাই। আর যে আমার দিকে আস্তে আস্তে আসে আমার রহমত তার দিকে দৌড়ে আসে। বান্দা যেহেতু আল্লাহর ঘরের মেহমান
হয়ে যায় নিশ্চিত বলা যায় দয়াল রাব্বানা কখনই তাকে নিরাশ করবেন না।
আল্লাহকে পেতে যারা ইতিকাফে বসেন, আল্লাহ তাদের কবুল করে নেন। তাদের ক্ষমা ও মুক্তির সম্মান দান করেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ইতিকাফকারী সব পাপ থেকে মুক্ত হয়ে যায় এবং তার জন্য এত বেশি নেকি লেখা হয় যেন, সে জীবনভর সৎকাজ করেছে। (মেশকাত শরিফ)
এ হাদিসে ইতিকাফের দুটি উপকারিতা বর্ণিত হয়েছে। মসজিদের বাইরে
থাকলে রমজানের এই মোবারক সময়েও পাপে লিপ্ত থাকার শঙ্কা ছিল, কিন্তু ইতিকাফের কারণে সিয়াম রক্ষা পেয়ে যায় সব পাপ থেকে। ইতিকাফের কারণে যেহেতু ইতিকাফকারী মসজিদের বাইরে যেতে পারে না, তাই আল্লাহতায়ালা তাকে সব রকম সৎকাজে সওয়াবও দান করেন।
আল্লাহর অফুরান রহমত সব সময়ই বান্দার মুক্তির প্রতীক্ষায় থাকে। আর আমরা আল্লাহর রহমত থেকে সব সময় উদাসীন থাকি। আল্লাহতায়ালা আমাদের সব সময় তার অফুরান রহমতের সন্ধানে নিমগ্ন থাকার তাওফিক দেন। যারা ইতিকাফের ধ্যানে মসজিদে মগ্ন হয়েছেন আর আমরা যারা মগ্ন হতে পারিনি, আমাদের সবাইকে হেদায়াতের নূরে আলোকিত করুন মহান আল্লাহ।
লেখক: মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব; চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৮
এমএ/