আসলে মাহে রমজানের রোজার পরিপূরক কোনো কিছুই হতে পারে না। কিন্তু মুমিনরা যাতে কিয়ামতের দিন পরিত্রাণ লাভ করতে পারে সেজন্য ইসলামী শরিয়তে রোজার কাফফারা হিসেবে লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখার বিধান দিয়েছে।
তিনি বলেন, একবার এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.) এর দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.) আমি হালাক (ধ্বংস) হয়ে গেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাকে কিসে ধ্বংস করলো? তিনি বললেন, আমি রমজান মাসে দিনের বেলায় স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে ফেলেছি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি একটি গোলাম আযাদ করো। আগন্তুক বললেন, আমার সে সামর্থ্য নেই। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি একাধারে ষাট দিন রোজা রাখো। আগন্তুক বললেন, আমি একাধারে ষাট দিন রোজা রাখতে অক্ষম। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তাহলে তুমি ষাটজন মিসকিনকে খাবার খাওয়াও। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ২৬, সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস: ১৬৭১, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯৭৮৬, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৭৭৭৬)
আর কাফফারার রোজা রাখতে গিয়ে যদি ষাট দিনের মাঝে কোন এক দিনেরও রোজা ভাঙা পড়ে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে তাহলেও কাফফারা বাতিল হয়ে যাবে। পুনরায় ষাট দিন রোজা রাখতে হবে। তবে নারীদের মাসিক রক্তস্রাব ও সন্তান প্রসবজনিত রক্তস্রাবের কারণে কাফফারার রোজা ভাঙা পড়লে তাতে কাফফারা বাতিল হবে না। একই বছরের মাহে রমজানে যে কয়টা রোজাই ভাঙা পড়ুক না কেন কাফফারা একটাই আদায় করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ: কেউ যদি ২০২০ সালের রমজান মাসের পাঁচটি রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে তাকে পাঁচটি কাজা ও একটি কাফফারা মোট পঁয়ষট্টি দিন রোজা রাখতে হবে।
মাহে রমজানের একদিনের রোজা শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ভাঙলে, কোনো কিছু দিয়েই তার কাফফারা আদায় করা সম্ভব নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন- তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগ ব্যতিরেকে রমজান মাসের এক দিনের রোজা ভাঙবে সে যদি অবিরতভাবে এক যুগ ধরেও রোজা রাখে তাহলেও তার পরিপূরক হবে না। (সহিহ আল-বোখারি, হাদিস: ১৯৩৫, সুনানে ইবনে মাযা, হাদিস: ১৬৭২, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৯৬, মুসনাদে আব্দুর রাজ্জাক, হাদিস: ৭৪৭৫, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৯৭৮৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৯৭০৫, সুনানে দারেমি, হাদিস: ১৭৫৫)
হজরত আবু হুরায়া (রা.) বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে কেউ কোনো প্রকার গ্রহণযোগ্য কারণ ও অসুস্থতা ছাড়া রমজান মাসের এক দিনের রোজা ইচ্ছাকৃত ভেঙে ফেলবে সে যদি এক যুগ ধরেও রোজা রাখে তাহলেও ওই এক যুগের রোজা রমজান মাসের একদিনের রোজার পরিপূরক হবে না। (সুনানে দারেমি, হাদিস: ১৭৫৫) সুতরাং, কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া মাহে রমজানের একটি রোজাও ভঙ্গ করা উচিত নয়।
বিভিন্ন কারণে মাঝে মধ্যে একটু খারাপ লাগতেই পারে। তাই অকারণে নিজেকে অসুস্থ ভেবে রোজা ভেঙে ফেলা ঠিক নয়। কারণ বর্তমান মাহে রমজানকে আর দ্বিতীয়বার পাওয়া যাবে না। আবার সত্যি সত্যি অসুস্থ হওয়ার পরেও অতিআবেগী হয়ে রোজা রেখে নিজের ক্ষতি ডেকে আনা যাবে না। কারণ আল্লাহর হুকুম পালন করতে গিয়ে কেউ অসুস্থ হোক বা মারা যাক বা ক্ষতির সম্মুখীন হোক এটা ইসলাম অনুমোদন করে না।
কোনো প্রকার শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে রমজান মাসের দিনের বেলায় খাবার খেলে, কোনো পানীয় পান করলে অথবা স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গম করলে রোজার কাজা ও কাফফারা আদায় করতে হবে। তবে ভুলবশত যদি কেউ রমজানের দিনের বেলায় পেটপুরে খায় অর্থাৎ সে যে রোজা আছে একথাটাই বেমালুম ভুলে গেছে। তাহলে তার রোজা নষ্ট হবে না এবং কাজা ও কাফফারা কিছুই আদায় করতে হবে না। তাকে খাবার মাঝখানে রোজার কথা মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং অবশিষ্ট সময় রোজা পূরণ করতে হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিনি কলেন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভুলে রমজান মাসে দিনের বেলায় খাবার খেলো অথবা পানীয় পান করলো, সে যেন রোজা ভেঙে না ফেলে। কারণ সে যে খাবারটা খেয়েছে তা এমন খাবার যা আল্লাহ তাকে রিজিক হিসেবে খাইয়েছেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৭২১, মুখতাসারুল আহকাম, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৩৬৪, সুনানে দারু কুতনি, হাদিস: ২২৪৮, আস সুনানুল কুবরা, হাদিস: ৮০২৯)।
বছর ঘুরে পুনরায় রমজান মাসের সাক্ষাৎ লাভের নিশ্চয়তা কারো জীবনেই নেই। আবার একটা রোজার ক্ষতিপূরণ যখন এক যুগের রোজা দ্বারাও সম্ভব নয় তাই রমজানের রোজা যেন কোনো ক্রমেই ছুটে না যায় সেদিকে অত্যন্ত সতর্ক থাকা জরুরি।
লেখক: পেশ ইমাম, রাজশাহী কলেজ কেন্দ্রীয় মসজিদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০২০
এসএস/এএ