ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

পদ্মা সেতু-মেট্রোরেলে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৩
পদ্মা সেতু-মেট্রোরেলে অনন্য উচ্চতায় বাংলাদেশ

ঢাকা: কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ খাতে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু’ ছাড়া আর কোনো আইকনিক স্থাপনা ছিল না। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নের জন্যে একাধিক প্রকল্প হাতে নেয়।

সেই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে উদ্বোধন করা হয়েছে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে, মধুমতি সেতু।

এতে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সড়ক যোগাযোগ খাত এগিয়েছে কয়েক ধাপ। উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও বিস্তৃত হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন সড়ক নেটওয়ার্ক।

পদ্মা সেতু
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হয়েছেও। তাই এটিকে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডের ভিত্তি বলা হচ্ছে।

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম পদ্মা সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয়। ১৯৯৮-৯৯ সালে প্রথম সেতু নির্মাণের প্রাক-সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়। এরপর ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সেতু নির্মাণের গতি থমকে যায়। সবশেষে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার আবারও ক্ষমতায় এলে পদ্মা সেতু নির্মাণে গতি পায়।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুকে শুধু সড়কে সীমাবদ্ধ না রেখে এতে রেল সংযুক্ত করেন। ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি রেলপথ যুক্ত করায় ব্যয় বেড়ে একনেকে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকায় পদ্মা বহুমুখী সেতু সংশোধিত নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১২ সালের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলেন। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যে দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর ৪২টি পিয়ারে ৪১টি স্প্যান বসানো হয়। তারপর ২০২২ সালের ২৫ জুন সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতুর।

মেট্রোরেল 
বর্তমান সরকারের আরেকটি মাইলফলক মেট্রোরেল। গত ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। তারপর থেকে মেট্রোরেল দুরন্ত গতিতে ছুটে চলছে উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে।

ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল যেটি এমআরটি লাইন-৬ নামে পরিচিত, এ প্রকল্প সরকার হাতে নেয় ২০১২ সালে। এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পের প্রথমে ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। পরে মতিঝিল থেকে কমলাপুর বাড়তি অংশ যোগ হওয়ায় ব্যয় বাড়ে ১১ হাজার ৪৯৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে সর্বমোট ব্যয় দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থায়ন করছে ১৯ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। আর সরকারি অর্থায়ন রয়েছে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে
ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা মহাসড়ক রুটের বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে। এটি দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত ৫৫ কিলোমিটারের এ এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীর সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সংযোগ ঘটিয়েছে।

আগে এ পথে ফেরি দিয়ে পার হতে সময় লাগতো ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। এখন এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে যেতে সময় লাগে ১ ঘণ্টার কম।

মধুমতী সেতু
১১ অক্টোবর মধুমতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম নাসিম ওসমান তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৯৬০ কোটি টাকায় নির্মিত মধুমতি সেতু দেশের প্রথম ছয় লেইনের সেতু। এর প্রস্থ ২৬ দশমিক ১ মিটার। সেতুর উভয় পাশে ৬ লেইনের সংযোগ সড়ক রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার।

মধুমতি সেতু নির্মাণ হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও ঝিনাইদহের প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ কমে গেছে। ফলে যাতায়াতে সময় কম লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।

একদিনে ১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন
২১ ডিসেম্বর দেশের ১০০টি সড়ক-মহাসড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫১টি জেলায় ২ হাজার ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের উন্নয়নের মাধ্যমে শক্তিশালী হয় দেশের সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫, ০১ জানুয়ারি, ২০২৩
এনবি/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।