সিরাজগঞ্জ: বছরজুড়ে সিরাজগঞ্জ জেলায় বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটনাগুলো নিয়ে সরগরম থেকেছে মিডিয়া।
এর মধ্যে সর্বহারার গুলিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান খুন, মানসিক প্রতিবন্ধীর পেট থেকে কলম অপসারণ, চরমপন্থি সদস্যদের আত্মসমর্পণ ও তাদের পুনর্বাসন এবং তরুণের প্রেমে ভারতীয় গৃহবধূর আগমন ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ছিল অন্যতম।
এছাড়া খুন, ধর্ষণ ও উত্তপ্ত রাজনীতি নিয়ে সারাবছরই আলোচনায় ছিল যমুনাপাড়ের জেলা সিরাজগঞ্জ।
সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস হত্যা:
বছরের শুরুতে ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় তাড়াশের দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ভোগলমান চারমাথা বাজারের নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসে থাকা অবস্থায় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস। তার মৃত্যু নিশ্চিত করে সর্বহারার নামে স্লোগান দিয়ে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। লোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ড সারা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ২ মাস পর ১৪ এপ্রিল এ খুনের সঙ্গে জড়িত ৮ জনকে গ্রেপ্তার হয়। এ সময় রান্ধুনীবাড়ী পুলিশ ক্যাম্পে লুট হওয়া একটি এসএমজিসহ ৩টি আগ্নেয়াস্ত্র, ১১ রাউন্ড তাজা গুলিসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তদন্তে উঠে আসে পূর্ব বাংলা সর্বহারা দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাধা মনে করেই আব্দুল কুদ্দুসকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
উত্তপ্ত বেলকুচির রাজনীতি
বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল বেলকুচির উত্তপ্ত রাজনীতি। স্থানীয় এমপি মমিন মণ্ডলের সাথে ও সাবেক মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। মেয়র সমর্থক বলে পরিচিত পত্রিকার এজেন্টপুত্রকে মারধর করা হয়। এ মামলার প্রধান আসামি করা হয় এমপি আব্দুল মমিন মণ্ডলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের জিএম ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলাম ও কাউন্সিলরপুত্র শাহাদত হোসেন মুন্নাকে।
১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ব্যানারে এমপির ছবি না থাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। এতে তিনজন আহত হন।
১৩ মে পুলিশের সামনে এমপি মমিন মন্ডল ও মেয়র সাজ্জাদুল হক রেজা গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন। ওই সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে এমপির সমর্থকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন স্থানীয় দুই সাংবাদিক।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি আহ্বান করে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপ। এ নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করলেও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে দু’পক্ষ পৃথক স্থানে কর্মসূচি পালন করে।
চরমপন্থি আত্মসমর্পণ ও তাদের কর্মসংস্থান
আলোর পথে ফিরে আসতে ৭ জেলার ৩ শতাধিক চরমপন্থির আত্মসমর্পণ ছিল জেলার আরও একটি আলোচিত ঘটনা। র্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা বেশ কয়েকটি চরমপন্থি সংগঠনের সক্রিয় তিন শতাধিক সদস্য ২১ মে দুপুরে সিরাজগঞ্জের সলঙ্গায় র্যাব-১২ সদর দপ্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ
করেন।
সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, মেহেরপুর কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও টাঙ্গাইল জেলার ৩১৪ জন চরমপন্থি সদস্য প্রায় ২১৬টি অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা করে অনুদান পান ৩১৪ চরমপন্থি।
অস্ত্রোপচার ছাড়াই মানসিক রোগীর পেটে থেকে বের হলো ২৩ কলম!
সিরাজগঞ্জে আব্দুল মোতালেব নামে একজন মানসিক রোগীর পেট থেকে দুই দফায় ২৩টি কলম বের করে আলোচিত হন শহীদ এম মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা। ২৭ ও ২৯ মে অস্ত্রোপচার ছাড়া অ্যান্ডোস্কোপির মাধ্যমে কলমগুলো বের করা হয়।
চিকিৎসকরা বলেন, অস্ত্রোপচার ছাড়া একবারে ২৩টি কলম বের করার ঘটনা এটাই প্রথম। বেলকুচি উপজেলার আটার
দাগ গ্রামের মোতালেব হোসেন নামে ওই ব্যক্তি ১২ বছর ধরে মানসিক রোগে ভুগছিলেন। এক বছর ধরে তিনি পেটের ব্যথায় কাতরালেও চিকিৎসকরা তার রোগ নির্ণয় করতে পারছিলেন না। শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তির পর অ্যান্ডোস্কপির মাধ্যমে পাকস্থলীতে অনেক কলম দেখতে পান চিকিৎসকরা। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তারা এন্ডোস্কপির মাধ্যমে কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সফল হয়।
অসম প্রেমের টানে সিরাজগঞ্জে ভারতীয় গৃহবধূ
স্বামী-সন্তান থাকতেও নিজেকে কুমারী পরিচয় দিয়ে নার্গিসা বেগম নামে এক ভারতীয় গৃহবধূ ফেসবুকে প্রেমের সূত্র ধরে উল্লাপাড়ায় এসে জুয়েল সরকার নামে এক তরুণকে বিয়ে করেন। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে বিয়ে করলেও পরে সেটা মিডিয়ার মাধ্যমে জানাজানি হয়। তবুও প্রেমিক জুয়েল তাকে মেনে নেন। কিন্তু তারা সংসার করা অবস্থায় ২২ জুন স্ত্রীকে ফিরে পেতে ছুটে আসেন ভারতীয় স্বামী ফজলুল হক মীর। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বাসিন্দা ফজলুর রহমান মীর স্ত্রীকে ফিরে পেতে পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু খালি হাতেই ফিরতে হয় তাকে। অবশেষে ১ আগস্ট ভোরে প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার হন সেই নার্গিসা বেগম ও তার বাংলাদেশি স্বামী জুয়েল রানা।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩
এসএএইচ