রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। দেশের অন্যতম ও উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ।
২০১৩ সালের শুরুর দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা না ঘটলেও বছরের মাঝমাঝি সময় থেকে শিক্ষার্থীদের রক্তে রঞ্জিত হতে থাকে ক্যাম্পাস।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায়ের পর সারাদেশের ন্যায় রাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ক্যাম্পাসে গড়ে তোলা হয় ‘গণমঞ্চ’। যত দিন যায় ততই উত্তাল হয়ে ওঠে এ আন্দোলন।
২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান অবসরে গেলে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ প্রায় এক মাস অভিভাবকহীন থাকার পর ২০ মার্চ নতুন উপাচার্য হিসেবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মুহম্মদ মিজান উদ্দীন ও উপ-উপাচার্য হিসেবে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর সাওয়ার জাহান চার বছরের জন্য নিয়োগ পান।
১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের উৎসবের দিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচন্ডি এলাকায় রবিউল ইসলাম নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে দুর্বৃত্তরা। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
একই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমানকে কুপিয়ে জখম ও বাম পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাসকুলারে পাঠানো হয়। অবশেষে ২০ এপ্রিল তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়।
২০ জুলাই ঘোষিত রাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে বির্তকিত নেতা তৌহিদ আল হোসেন তুহিনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। গণমাধ্যমগুলোতে বিষয়টি ফলাও করে পরিবেশিত হয়। ২২ আগস্ট রাতে ক্যাম্পাসে সেই বিতর্কিত ছাত্রলীগ নেতা তুহিনের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির। এ সময় শাওন নামে আরেক ছাত্রলীগ নেতা গুলিবিদ্ধ হয়। তুহিনকে প্রথমে রামেকে ভর্তি করার পর সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ২৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতিসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ছাত্রলীগ।
১৭ সেপ্টেম্বর দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাবিতে প্রথম শিক্ষার্থীদের হাতে ডিজিটাল পরিচয়পত্র প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
২২ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে মহড়া দেওয়াকে কেন্দ্র শিবির-ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে এক সাধারণ শিক্ষার্থীসহ দুই শিবির নেতা গুলিবিদ্ধ হয়।
২৫ সেপ্টেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আসিফ কবির চৌধুরী রনি। রনি শেরপুর জেলার মাধবপুর গ্রামে মাওলা বক্স চৌধূরীর ছেলে ছিলেন।
৮ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর এলাকায় ছাত্রলীগের নেতা শরিফুল ইসলাম সাদ্দামের ডান হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির কর্মীরা। এ সময় আরেক ছাত্রলীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। প্রথমে তাকে রামেকে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।
২৬ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলা এলাকায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের অর্থ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ নামের এক শিবির নেতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। এ সময় ২০ গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ৫০ জন শিবির নেতাকর্মী।
১৪ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে জামায়াত-শিবিরের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখদুম হল শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম খলিলুর রহমান মামুন নিহত হয়। মামুন নৃ-বিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স শেষ করে পুলিশের উপপরিদর্শক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
২৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিক্ষোভ মিছিলে ককটেল হামলা চালায় শিবির। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ সাত নেতাকর্মী আহত হয়।
২৯ নভেম্বর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাবরিনা জাহান নিহত হয়। এ সময় তার বান্ধবী চারুকলা বিভাগের ছাত্রী জীবন নাহার সুমিও আহত হয়। নিহত সাবরিনা বগুড়ার কাহালু উপজেলায় কচুয়া গ্রামের হামিদুর রহমানের মেয়ে ছিলেন।
১৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সামনে রিকশা থেকে নামিয়ে রাজশাহীর মতিহার থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শিমুল আহমেদ ডিউকের হাত-পায়ের রগ কেটে দেয় শিবির। ডিউক নগরীর অগ্রণী স্কুল স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র ও ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেহেচন্ডী পূর্ব পাড়ার নবী আহমেদ নবীর ছেলে ছিলেন।
২৪ ডিসেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫০তম সিন্ডিকেটের বৈঠকে যৌন হয়রানির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক শাওন উদ্দিনকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া সিন্ডিকেট বৈঠকে একই অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সংস্কৃতি কেন্দ্রের (টিএসসিসি) প্রশিক্ষক সানোয়ার হোসেনকেও বরখাস্ত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: সোহেলুর রহমান, নিউজরুম এডিটর