২০১৩ সালের পুরো বছরজুড়েই বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এতে বাদ পড়েনি বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও।
ইমেইল, সার্চ এবং ম্যাপিং সেবার নানামুখী তৎপরতায় রাজনৈতিক ইস্যু চলে আসায় এগুলো বন্ধে অনুরোধ জানানো হয় গুগলকে। একদিকে তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় বিকাশ অন্যদিকে তা বন্ধ করার পায়তারা।
এ প্রসঙ্গে গুগলের লিগ্যাল পরিচালক সুসান ইনফ্যানটিনো জানান, বরাবরই রাজনৈতিক কনটেন্ট মুছে ফেলার অনুরোধ এসেছে। তবে পুলিশের তরফ থেকেও বিভিন্ন সময় ভিডিও, ব্লগ এবং কমেন্টস এসব মুছে ফেলার জন্য গুগলকে লিখিতভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে যতগুলো তথ্য মুছে ফেলার কথা হয়েছে তার মধ্যে রাজনৈতিক ইস্যুই অন্যতম।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন অবধি সরকারের ৩ হাজার ৮৪৬টি অনুরোধের প্রেক্ষিতে ২৪ হাজার ৭৩৭টি কনটেন্ট গুগল সার্ভার থেকে মুছে ফেলা হয়। এটি ২০১২ সালের একই সময়ের তুলনায় ৬৮ গুণ বেশি। এর মধ্যে ৯৩টি কপিরাইট ইস্যুও আছে। আর এ অভিযোগ এবং নির্দেশ দুটোর সংখ্যাই বাড়ছে সমতালে।
বিশ্বের মানুষ এখন অবাধ তথ্যের সুবিধা উপভোগ করতে শুরু করেছে। কিন্তু এ অবাধ স্বাধীনতায় বাঁধ সাজছে রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি আর আন্তর্জাতিক পররাষ্ট্রনীতি। জনগণের সুরক্ষার কথা বলে বিভিন্ন দেশের সরকার ব্যক্তি স্বাধীনতাকে সুনিয়ন্ত্রণ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং অধিকার উপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে আগ্রাসী হয়ে উঠছেন বলেও দফায় দফায় অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ের সপক্ষে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যবিশ্বের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, ইয়াহু এবং গুগল কর্তাব্যক্তিরা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দৃষ্টিআকর্ষণ করেছেন।
ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) অজুহাতে ব্যক্তি তথ্যের ওপর অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অযাচিত হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে বলে প্রতিষ্ঠানগুলো তথ্য দিয়েছে। প্রতিদিনই কারণে-অকারণে হাজারো হাজারো ব্যক্তির তথ্য-উপাত্ত চেয়ে পাঠাচ্ছে এনএসএ।
কিন্তু এসব ব্যক্তিতথ্য কেন চাওয়া হচ্ছে সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ কিংবা আইনের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। ফলে সাধারণ প্রযুক্তি ভক্তরা এসব তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর যোগাযোগমাধ্যম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে প্রযুক্তিশিল্পের বিকাশ হোঁচট খাচ্ছে। এমনকি এ শিল্প পূর্ণাঙ্গ বিকাশ পুরোপুরি ঝুঁকির মধ্যেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা আছে।
মাইক্রোসফট, টুইটার, এওএল, ইয়াহু এবং লিঙ্কডইনের মতো বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সরকার কেন প্রতিনিয়ত এত সংখ্যক ব্যক্তিতথ্য চাইছে এসবের কারণ সুনির্দিষ্ট নয়। নেই কোনো আইনি ভিত্তিও। তাই জনমনে ব্যক্তিতথ্যের অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অনলাইনে তথ্যের অবাধ চর্চার সংস্কৃতিতে এখন অশনিসংকেত। রাষ্ট্রের জনগণের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের সতর্কতার প্রশ্নে গুগল এবং ইয়াহুকে থেকে থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তির তথ্য তলব করা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ থাকলেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনের অনুপস্থিতি থাকছে বলে জানাচ্ছে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।
এ ছাড়াও ইমেইল, সার্চ, চ্যাট, ভিডিও ছাড়াও এ ধরনের সংশ্লিষ্ট সেবার আন্তযোগাযোগের তথ্য চেয়ে প্রতিদিনই গুগল আর ইয়াহুতে জমা পড়ছে হাজারো আবেদন। এসবই আসছে এনএসএয়ের তরফ থেকে।
সরকারি নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করা হলে কোনোভাবেই তা অবাধ প্রযুক্তিশিল্পের বিকাশে সহায়ক হবে না। বরং বিকল্প গণতন্ত্র চর্চার দীর্ঘকালের অবরুদ্ধ পথটি আবার আমলাতান্ত্রিক জটিলতাতেই নিমজ্জিত হবে। সুতরাং এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ আর জনমনে প্রযুক্তিনির্ভর অবাধ তথ্য চর্চায় আস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফটের নির্বাহী সহসভাপতি ব্রাড স্মিথ বলেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে সাধারণ প্রযুক্তি ভক্তরা এ সংস্কৃতি চর্চার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে। এতে অগ্রসরমান এ প্রযুক্তিশিল্পের বিকাশ হুট করেই মুখ থুবড়ে পড়বে।
বাংলাদেশ সময় ২২০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩