ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

যাদের কাজে এগিয়ে বাংলানিউজ

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
যাদের কাজে এগিয়ে বাংলানিউজ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ছবি)

খুব দ্রুত কয়েকটি নাম উচ্চারণ করলেন এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। সাজেদা সুইটি, জাহিদ সায়মন, সঞ্জয় বিশ্বাস।

একটু থেমে আবার বললেন, রহমান মাসুদ, ইলিয়াস সরকার, মাজেদুল নয়ন, উর্মি মাহবুব, কাশেম হারুন, রমেন দাশগুপ্ত, আসিফ আজিজ।

প্রশ্ন ছিলো কেনো এতো নাম?

উত্তর না দিয়ে এডিটর ইন চিফ সাজেদা সুইটির প্রশংসা শুরু করেন। এই মেয়েটি ভীষণ সাহসী। যেমন গোছানো তার লেখা তেমনি তার পেশার প্রতি দায়িত্বশীলতা। কতদিন ধরে বিছানায় পড়ে আছে। কবে যে মেয়েটি আবার কাজে যোগ দিতে পারবে! --আক্ষেপ ঝরলো তার কণ্ঠে।

গত ২৬ নভেম্বর বিএনপি’র নয়াপল্টন অফিসের সামনে রাতে দায়িত্বপালনের সময় বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সাজেদা সুইটিকে লক্ষ করে ককটেল ছোড়ে ‘দুর্বৃত্ত’রা। দুই পায়ে পাঁচটি ক্ষত নিয়ে সাহসী এই সাংবাদিক প্রথমেই কাছে থাকা কর্তব্যরত সহকর্মী ফটো করেসপন্ডেন্ট শেখ রেহানাকে ডাকেন এবং ঘটনার ছবি তুলতে বলেন। পরে যখন দেখতে পান রক্তাক্ত হয়ে উঠছে দুটি পা তখন বসে পড়েন পাশেই একটি গাড়ির পাদানিতে। এরপর তাকে ধরাধরি করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। সেখানে চিকিৎসা শেষে একমাসের বেশি সময় ধরে আঘাতের ক্ষত নিয়ে ঘরে বিছানায় পড়ে আছেন সাজেদা সুইটি। দিনরাত খাটুরে এই সাংবাদিকের জন্য এডিটর ইন চিফের কষ্টটা স্বাভাবিক।

একই ধরনের কষ্ট তার জাহিদ সায়মনের জন্য। বললেন, এত চটপটে ছেলেটা। হাওয়ার মতো ছুটতো আর ছবি তুলতো। সেই ছেলেটি আজ একমাস পাঁচ দিন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। যে পায়ে মোটরবাইক ছোটাতো সায়মন সেই পায়ের একটি আঙ্গুলের প্রায় সবটাই ক্ষতে কেটে ফেলেছেন চিকিৎসক। হাতের ব্যান্ডেজ এখনো রয়েছে। তবে তার সবচেয়ে বড় ক্ষতটি হয় পেটে। চিকিৎসকের ভাষ্যে স্পিøন্টার পেটের ভেতরে ঢুকে গেলে বড় ধরনের ক্ষতিই হয়তো হয়ে যেতে পারতো বাংলানিউজের।

সায়মনকে লক্ষ্য করে ছোড়া দুর্বৃত্তের ককটেলটি পড়ে সুইটির ওপর হামলার ঠিক একদিন আগে ২৫ নভেম্বর। সেদিন ছিলো ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার দিন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা দেবেন---সজেন্য অধীর অপক্ষো। ১৮ দলীয় জোটের আগে থেকেই ঘোষণা, তফশিল দিলেই শুরু হবে কঠোর আন্দোলন। বাংলানিউজের কর্মীরাও প্রস্তুত। জাহিদ সায়মনের দায়িত্ব মহাখালী এলাকায়। মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে গিয়ে মোটরবাইকটি থামিয়ে কেবল দাঁড়িয়েছেন। তখনই তাকে লক্ষ্য করে ছুড়ে মারা হয় ককটেল। যার ক্ষত ও ভোগান্তি বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। তবু  অস্থির হয়ে উঠেেছন, কবে সুস্থ হবেন, কবে ফিরবেন কাজে।

হঠাৎই প্রসঙ্গ পাল্টালেন এডিটর ইন চিফ। প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল। বিজ্ঞাপনদাতারা ভালো সাড়া দিচ্ছেন। বিভিন্ন বড় বড় নামী কর্পোরেট হাউজ খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে বাংলানিউজের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে।

এ প্রসঙ্গে সঞ্জয় বিশ্বাসের কথা বলেন তিনি। বলেন, ছেলেটির মধ্যে একধরনের গতিশীলতা লক্ষ্য করি। মানুষকে কনভিন্সড করার ক্ষমতা আছে। এছাড়া অমায়িক ব্যবহার মুগ্ধ হওয়ার মতো। বাংলানিউজের ডেপুটি চিফ অব মার্কেটিং সঞ্জয়ের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি কেবলই যে অর্থ আর বিজ্ঞাপনের কথা ভাবেন তা নয়। কোন নিউজটি ভালো হলো... ক্লায়েন্টরা কি ধরনের প্রতিক্রিয়া দিলেন এ নিয়েও তার এক ধরনের উচ্ছ্বাস কাজ করে। নতুন নতুন আইডিয়া দেওয়া সেগুলো বাস্তবায়নে নিজেই লেগে পড়া এগুলো সঞ্জয়ের বাড়তি গুণ।

এ বছর সেপ্টেম্বরে রহমান মাসুদ আর ইলিয়াস সরকারকে মায়ানমার সীমান্তে টেকনাফ পাঠিয়ে ভীষণ উদ্বেগে কাটাতে হয়েছিলো, বলেন আলমগীর হোসেন। বললেন, ছেলে দুটো যতদিন ওই এলাকায় ছিলো উদ্বেগ কাটে নি। ভীষণ ঝুঁকি নিয়ে এরা দুজন ওই এলাকা থেকে বের করে আনে ইয়াবা পাচারের ভয়াবহ সব চিত্র। ধারাবাহিকভাবে তা প্রকাশিত হতে থাকে বাংলানিউজের পাতায়। পাঠকের ব্যাপক প্রশংসা পায়। আর সবচেয়ে বড় কাজটি হয়, এর রিপোর্টের পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের অভিযান। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনী থেকেও বাংলানিউজকে প্রশংসা করা হয়, বিষয়টি এমন গভীরভাবে সামনে আনার জন্য।

রহমান মাসুদ ও ইলিয়াস সরকার এর আগেও কক্সবাজারের মহেশখালীর সন্ত্রাসীদের চিত্র, এই পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের চিত্র তুলে ধরেন তাদের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের মাধ্যমে। সাহসী এসব কাজের পাশাপাশি বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রহমান মাসুদ তার নিজস্ব বিট নির্বাচন কমিশনের অনেক এক্সক্লুসিভ খবর যেমন তুলে আনছেন, তেমনি দ্রুত খবর দেওয়ার ক্ষেত্রেও হারিয়ে দিচ্ছেন অন্য মিডিয়াকে, যার প্রশংসা করেন এডিটর ইন চিফ।

আর ইলিয়াস সরকার উচ্চ আদালতের খবর প্রকাশে তার যোগ্যতার সবটুকু নংিড়ে দচ্ছিনে। একই সঙ্গে আদালতের এক্সক্লুসিভ রিপোর্টও তার হাতে উঠে আসছে বাংলানিউজের পাতায়। তার রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা হয় জাতীয় সংসদের অধিবেশনেও। বিশেষ করে সংবিধান বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী রির্পোটিং মুগ্ধ হওয়ার ও প্রশংসা পাওয়ার মতো বলেই মনে করেন আলমগীর হোসেন।

মাজেদুল নয়নকে সুদুর মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে একই ধরনের উদ্বেগে পড়েছিলেন এডিটর ইন চিফ। সেখানে তার সাহসী সব রিপোর্ট একদিকে যমেন পেয়েছিলো প্রশংসা, অন্যদিকে যাদের বিরুদ্ধে এইসব রিপোর্ট লেখা হয় তারা লেগে পড়ে মাজেদুল নয়নের পেছনে। ফলে দূরদেশে তরুণ এই রিপোর্টারকে পাঠিয়ে উদ্বেগেই কাটাতে হয় বাংলানিউজকে। কিন্তু এর পাশাপাশি বাংলানিউজ পায় বিশাল পাঠকপ্রিয়তা। মালয়েশিয়ায় তৈরি হয় এর বিশাল পাঠকশ্রেণী।

মাজেদুল নয়নের কথা বলতে গিয়ে তার ঝরঝরে লেখার প্রশংসার পাশাপাশি যে অ্যাসাইনমেন্টই দেওয়া হোক না কেন সেখান থেকে সেরা রিপোর্টটি উপহার দেওয়ার যে অসাধারণ একটি যোগ্যতা রয়েছে সে কথা উল্লেখ করেন আলমগীর হোসেন।

পাশাপাশি বলেন, একই কথা খাটে উর্মি মাহবুবের ক্ষেত্রেও। মেয়েদের মধ্যে এমন কর্মচঞ্চল সংবাদকর্মী খুব কম দেখ যায়, বলেন আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, উর্মিকে সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা টানা কাজ করতে দেখি। হরতাল-অবরোধে মাঠে তার সক্রিয় উপস্থিতি বাংলানিউজকে দিচ্ছে নতুন নতুন রিপোর্ট। অভিনবত্বে ভরা এই রিপোর্টগুলো পাঠকপ্রিয়তা যেমন পাচ্ছে তেমনি প্রশংসিত হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। নিজের বিট, তৈরি পোশাকশিল্পের উপর উর্মি দারুণ সব রির্পোট লখিে চমকে দিচ্ছেন অন্য মিডিয়ার কর্মীদের।

বাংলানিউজের সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট কাশেম হারুণকে বরাবরই নীরব কর্মী বলে সম্বোধন করেন এডিটর ইন চিফ। তিনি বলেন, কখনো এমনটা শোনা যায় নি কাশেম হারুণ তার অ্যাসাইনমেন্ট মিস করেছে। আর তার হাতে ছবি ভালো হয়। কোনো ঘটনায় সঠিক ছবিটি তুলতে পারা একজন ফটো সাংবাদিকের বড় গুণ। কাশেম হারুনের ওপর সেই ভরসা করা যায়। আর সবচেয়ে বড় গুণ সময়ানুর্বততিা, যা কাশেম হারুনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, বলেন আলমগীর হোসেন।

এ পর্যায়ে চট্টগ্রাম ব্যুরোর সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট রমেন দাশগুপ্তের কথা তোলেন এডিটর ইন চিফ। তিনি বলেন, নিট অ্যান্ড ক্লিন কাজ করে রমেন। ওর লেখার হাত খুব ভালো। নির্ভুল রিপোর্ট লেখে। আর প্রতিটি রিপোর্টেই একধরনের পূর্ণতা থাকে। অনলাইনের জন্য দ্রুত লিখতে গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া এবং উদ্ধৃতি দেওয়ার বিষয়টিতে রমেনকে সচেতন দেখা যায়। এছাড়াও রাজনৈতিক এই অস্থিরতার সময় তার কিছু সাহসী রিপোর্টিং বাংলানিউজকে চট্টগ্রামে জনপ্রিয় করেছে। স্থানীয় মিডিয়াগুলোও বাংলানিউজের খবরের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। রমেন দাশগুপ্তকে তার কাজের প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করেন আলমগীর হোসেন।

আরও একটি নাম উচ্চারিত হয় বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফের কণ্ঠে। তিনি আসিফ আজিজ। উপরে যতগুলো নাম এসেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে নতুন কর্মী। আসিফ বাংলানিউজের নিউজরুম এডিটর। তবে তার হাতে দায়িত্ব অনেক। তিনিই বাংলানিউজের ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ পাতার সম্পাদক। এই পাতাকে শিশুদের উপযোগী সব কনটেন্টে দারুণভাবে সাজিয়ে রাখেন সব সময়। একই সঙ্গে তার ওপর দায়িত্ব পড়েছে রাশিফলের মতো একটি নিয়মিত পাতা পরিচালনার। প্রতিদিন জ্যোতিষীর কাছ থেকে লেখা সংগ্রহ, যথা সময়ে তা প্রকাশ করার কাজটি আসিফ করে যাচ্ছেন অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে। এছাড়াও নতুন কোনো আইডিয়া এলেই তার বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে আসিফের ওপর। নীরবে যে কোনো দায়িত্ব সূচারুভাবে পালন করে যান বাংলানিউজের এই কর্মী।

বাংলানিউজের কৃতিত্বের ক্যনভাসে ২০১৩ সালটিকে কড়া কড়া দাগে আঁচড় কেটে যাওয়া এই কর্মীরাই বছরের সেরা দশ। এদের মধ্যে সাজেদা সুইটি, জাহিদ সায়মন ও সঞ্জয় বিশ্বাস সেরাদের সেরা। আর বাড়তি সুখবর রমেন দাশগুপ্তর জন্য বছরের প্রথম দিন থেকেই তার নামের সঙ্গে যোগ করা হবে স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট। এদের প্রত্যেকের জন্যই রয়েছে বিশেষ পুরস্কার।

এভাবে কাজ করলে বাংলানিউজ তার শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারবে। এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন সেটাই মনে করেন। তিনি বলেন, “যারা বর্ষসেরা হলো তারাই যে কেবল ভালো কাজ করেছে তা নয়, বাংলানিউজের প্রতিটি কর্মীই তার নিজ নিজ অবদান রেখে যাচ্ছে, তার তাতেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলানিউজ। অভিনন্দন সহকর্মীদের সবাইকে। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা। ”

বাংলাদেশ সময় ২১২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
জুয়লে মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।