ঢাকা: ‘সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচার-কর্মবিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকবে’- সংবিধানের এমন অনুচ্ছেদ (১১৬) পরিবর্তন নিয়ে বিদায়ী বছরের শেষ দুই মাসে বেশ সরব হয়ে উঠেছেন বিচার বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি বিভিন্ন আলোচনায় সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
পাশাপাশি বিচার-কর্মবিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ নিয়েও আদালত-নির্বাহী বিভাগ সরগরম হয়ে ওঠে। গেজেট প্রকাশের আদেশ দিয়ে দুই সচিবকে ডেকে সর্বোচ্চ আদালতে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি গেজেট প্রকাশের দরকার নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন।
বিচার বিভাগ পৃথককরণের ৯ম বর্ষপূর্তিতে বিদায়ী বছরের ৩১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বাণী সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
বাণীতে তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগের অধস্তন সকল আদালত ও ট্রাইব্যুনালের ওপর উক্ত বিভাগের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রয়েছে। অপরদিকে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বিচার বিভাগের ধীরগতির অন্যতম কারণ। ১১৬ অনুচ্ছেদের ফলে অধস্তন আদালতের বিচারকদের পদোন্নতি, বদলি এবং শৃঙ্খলামূলক কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্টের পক্ষে এককভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্বৈত শাসনের ফলে বহু জেলায় শূন্যপদে সময়মতো বিচারক নিয়োগ প্রদান সম্ভব হচ্ছে না। এতে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে। এবং বিচার প্রার্থী জনগণের ভোগান্তি বেড়ে যায়’।
‘উল্লেখিত প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে প্রণীত ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদটি পুনঃপ্রবর্তন হওয়া সময়ের দাবি। যাতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দ্বায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত থাকবে। বিধানটি পুনঃপ্রবর্তন করলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আরো সমুন্নত ও সংহত হবে এবং বিচার বিভাগের সার্বিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ হবে’।
পর দিন সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘আমি প্রধান বিচারপতিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। তার বক্তব্য আমি শুনেছি, পড়েছি এবং দেখেছি। অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রধান বিচারপতি যেটি বলেছেন, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। আজকে যখন নতুন করে সবকিছু হয়ে গেছে, তখন এ রকম প্রস্তাব আসাটা আমার কাছে আশ্চর্যজনক লাগছে’।
এর প্রায় একমাস দশ দিন পর গত ১০ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি প্রাঙ্গনে এক সভায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘আমাদের ১১৬ এবং ১১৬ (এ) সংবিধানের প্রিন্সিপালসের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে এ দুই বিধান সংবিধানের পরিপন্থী। যা আমাদের পবিত্র বই থেকে অতি তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এটি থাকায় আমাদের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে’।
‘আমি কোনো এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, এদেশে দ্বৈত শাসন চলছে। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইনমন্ত্রী বললেন যে, চলে না। প্রধান বিচারপতি আইনের অভিভাবক, সংবিধানের অভিভাবক হয়ে বলছি, এটি যদি না হয়, তাহলে আজকে আমরা বিচারকদের ডিসিপ্লিন রুলস কে করবে? সরকার করবে না আমরা বিচারকরা করবো? তাদের কন্ট্রোল, বদলি কোনো কিছুই আমরা করতে পারছি না। তাই এ অসাংবিধানিক প্রভিশনগুলো তাড়াতাড়ি সরিয়ে দেওয়া হবে বলে আমি আশা করি’।
সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে,‘বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে রত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি দান ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকিবে এবং সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে’।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৬
ইএস/এএসআর