২০১৬ সালে পরিবহন জগতের এ বিপ্লব শুরু হলেও জনপ্রিয় হয়েছে ২০১৭ সালে এসে। পুরো বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল উবার, পাঠাও, স্যামের মতো অ্যাপসভিত্তিক পরিবহন সেবা।
বছর শেষ হওয়ার আগেই স্মার্টফোনে ট্যাক্সি সেবার ওয়ার্ল্ডওয়াইড অ্যাপ ‘উবার’ রাজধানীতে একবছর পার করেছে। তবে স্মার্টফোন ব্যবহার করে ঢাকায় মোটরসাইকেল ‘রাইড শেয়ারিং’-এর পথিকৃৎ বাংলাদেশই। ‘উবার’ শুরুর ৭ মাস আগে ঢাকায় বিশ্বের প্রথম ‘মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং’ শুরু হয়। অ্যাপটির নাম ‘স্যাম’। এ হিসেবে ঢাকায় স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার বয়স দেড়বছরের বেশি।
তবে ‘উবার’ সার্ভিস চালুর পর রাজধানীতে রাইড শেয়ারিং ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। পুরো ২০১৭ সালে একের পর এক অ্যাপের যাত্রা শুরু যার প্রমাণ। যদিও এখন পর্যন্ত সরকার এসব সেবার কোনো ‘বৈধতা’ দেয়নি। খসড়া তৈরি হলেও চূড়ান্ত হয়নি নীতিমালা।
গত বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকায় যাত্রা শুরু করে উবার। তখনই স্মার্টফোন অ্যাপে প্রাইভেটকার, ট্যাক্সি ডেকে আনার সুবিধা পান রাজধানীবাসী। এরপর দ্রুতই এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তবে বাংলাদেশে সড়ক পরিববহন কর্তপক্ষ বিআরটিএ উবারকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে ক’দিন পরেই। পরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করে এসব সেবা চলতে কোনো বাধা নেই বলে জানান। আর ‘লিগ্যাল ফ্রেমে’ আনার জন্য বিআরটিএকে নির্দেশ দেন।
নীতিমালা তৈরির প্রক্রিয়া তখনই শুরু হয়। যা এখনও শেষ হয়নি। পাঁচমাস আগে বিআরটিএ খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। যা এখন মন্ত্রিসভায় তোলার অপেক্ষায়।
উবার আসার আগে ২০১৬ সালের ৭ মে ঢাকায় বিশ্বের প্রথম মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের ঘোষণা দেয় ‘স্যাম’ কর্তৃপক্ষ। এটি বাংলাদেশি উদ্যোগ। এদিন ‘স্যাম’ স্মার্টফোন অ্যাপভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং চালু করে। শুরু হয় নতুন যুগের। বিআরটিএ বিষয়টি জানার পর ‘বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে এটি বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরপর কার্যক্রম শিথিল থাকে স্যাম এর। পরে উবার চালুর সঙ্গে স্যাম কর্তৃপক্ষ কার্যক্রম অব্যাহত রাখে।
তৃতীয় অ্যাপ হিসেবে পাঠাও- ও শুরু করে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং। শুরুতে পাঠাও মোটরসাইকেল ট্যাক্সি সার্ভিসের মতো নামিয়েছিলো। বেশ কিছু মোটরসাইকেল কিনে ড্রাইভার নিয়োগ দিয়ে তারা রাস্তায় নামায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে ‘পাঠাও’ডেলিভারি সার্ভিস প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেল ট্যাক্সি সার্ভিস শুরু করে। এক বছরের মধ্যে ট্যাক্সি সার্ভিস থেকে পুরোপুরি ফ্রিল্যান্সার দিয়ে এখন মোটরসাইকেল ‘রাইড শেয়ারিং’ অ্যাপ হিসেবে পাঠাও ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে।
‘ভাড়ার হার’ বেশি থাকায় ‘ফ্রিল্যান্সার’ হিসেবে অনেক বাইকার অ্যাপটি দিয়ে মানুষকে সেবা দিতে শুরু করেন। বিনিময়ে তারাও আয় করছেন।
চলতি বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি উবার অ্যাপে কার, ট্যাক্সির পাশাপাশি মোটরসাইকেল সেবা যুক্ত করা হয়। এ নিয়ে ঢাকায় মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিং করছে ‘উবার’, ‘পাঠাও’ ও ‘স্যাম’। এছাড়া ‘মুভ’, ‘বাহন’ ও ‘ইজিয়ার’ নামে আরও তিনটি অ্যাপ রয়েছে। তবে উবার, পাঠাও ও স্যাম ছাড়া বাকিগুলো এখনও ততটা সক্রিয় নয়।
বছরের শেষের দিকে অন্যভাবে আলোচনায় আসে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা জনপ্রিয় হওয়ায় কমতে শুরু করে তাদের আয়। এক সময় তারা অ্যাপভিত্তিক সেবা বন্ধ করতে আন্দোলনে নামে। কিন্তু তাতে সাড়া না পেয়ে শেষ পর্যন্ত তারাও অ্যাপের আওতায় আসতে বাধ্য হয়। সিএনজি অটোরিকশাকে মোবাইল অ্যাপের আওতায় এনেছে গতি ও মুভ। নতুন বছর থেকে এই অ্যাপ চালু হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।
তবে ‘উবার’, ‘স্যাম’, ‘পাঠাও’ কার্যত মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ে কতটা সক্রিয় তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ একজন বাইকার তার কাছে যাত্রীর অনুরোধ আসা মাত্র গন্তব্যে নিয়ে যেতে বাধ্য হতে হয়। নিজস্ব পছন্দমতো গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে না। এর ফলে কোনো বাইকার তার রাইডে আরেকজন একই গন্তব্যের যাত্রীকে যুক্ত করে রাইড শেয়ার করতে পারেন না।
এ কারণে এখনও পুরোপুরি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ বলা যাচ্ছে না উবার, পাঠাও স্যামকে। অনেকটা ট্যাক্সি সার্ভিসের আদলে চলছে তাদের এ সেবা।
তবে ঢাকায় স্মার্টফোন অ্যাপে প্রথম যখন মোটরসাইকেল সেবা শুরু হয় তখন এটি ততটা জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশে আগে থেকে মোটরসাইকেল ট্যাক্সি সার্ভিস চালু ছিল।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল রাইড শেয়ারিংয়ের দ্বিতীয় অ্যাপ ‘পাঠাও’ সিএনজি অটোরিকশার অর্ধেক ভাড়ায় এ সেবা দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও তাদের ভাড়া বেশি বলে মনে করেন যাত্রীরা।
রাইড শেয়ারিং পলিসি অনুযায়ী, নতুন অ্যাপ আসা মাত্রই তাকে ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হয়। বাড়তি ভাড়া প্রথমে বাইকার/ড্রাইভার কাড়তে হয় এরপর রাইডার বা যাত্রী পাওয়া যায়। এ কারণে শুরুর পর থেকে একের পর রাইড শেয়ারিং অ্যাপ আসছে এবং ভাড়াও বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এসএ/এএ