ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সালতামামি

ফিরে দেখা-২০১৮

সবদলকে নির্বাচনে আনাই ইসির সফলতা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৯
সবদলকে নির্বাচনে আনাই ইসির সফলতা নির্বাচন কমিশন ভবন।

ঢাকা: একটি চ্যালেঞ্জের বছর পার করলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনে সহিংসতা-কারচুপি কমাতে না পারলেও সংসদ নির্বাচনে সবদলকে আনাটাই ছিলো ইসির বড় সফলতা। পুরোটা বছরই মূলত আলোচনার জন্মদিয়েই পার করেছে ইসি। শেষটাও তাই হয়েছে।

২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারায়, বিশেষ করে কোনও সহিংসতা না হওয়ায় সবমহলে প্রশংসিত হয় ইসি। এ সফলতার রেশ দেশবাসীকে বহুদিন চায়ের কাপ গরম রাখতে সাহায্যই করেছে বটে।

তারপরেই ২০১৮ সালের জুনে চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রস্তুতি শুরু করে ইসি। তখনই শুরু হয় নানা সমালোচনা। বিরোধী দলের প্রার্থীদের ওপর নানা নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইসি তেমন কোনও ভূমিকা রাখতে পারেনি।

২৬ জুন অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম জয় লাভ করেন। আর ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজশাহী সিটিতে আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটন, বরিশাল সিটিতে সাদিক আব্দুল্লাহ ও সিলেট সিটিতে বিএনপিপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী জয়লাভ করেন। তবে রাজশাহী ও বরিশাল সিটিতে ব্যাপক কারচুপি হয়। তিন সিটি নির্বাচনে কয়েকজন মৃত্যুবরণও করেন। ৩০ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ওইদিন প্রথা ভেঙে ভোটগ্রহণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন করা থেকে বিরত থাকেন। অনেকটাই আস্থা হারাতে বসেন তিনি।

২০১৭ সালে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে কৃতিত্ব দেওয়ায় যে সুবাতাস তিনি নির্বাচনী মাঠে বইতে দিয়েছিলেন, তা থমকে যায় যেন তিন সিটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে যেয়ে পড়ে আরেক চাপের মুখে। বিরোধী দলগুলো এই মেশিন ব্যবহারের বিপক্ষে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে ব্যবহারের পক্ষে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। ইসি প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার আগেই বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ১ লাখ মেশিন কেনার জন্য তড়িঘড়ি প্রক্রিয়া শুরু করে। পরে কিনে ফেলে। কিন্তু তীব্র চাপের মুখে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ছয়টি আসনে সম্পূর্ণভাবে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। সেটা বাস্তবায়নও করে।

১০ হাজার মেশিন যার প্রতিটির দাম ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। সেগুলো ব্যবহার করেও ভোটের হার বাড়াতে পারেনি ইসি। ছয় আসনে ইভিএমে প্রদত্ত ভোটের হার ছিলো ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ। যেখানে ব্যালটে প্রদত্ত ভোটের হার ৮০ শতাংশের মতো। ইভিএম নির্বাচনের আগ পর্যন্ত ইসিকে সমালোচনার মধ্যে রাখে।

নানা আশ্বাসের পর ২৮ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করেন সিইসি। সেসময় বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন পেছানোর দাবি করলে সিইসি ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ভোটের তারিখ দেন ৩০ ডিসেম্বর।

এর আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন হাইকোর্টের আদেশের পাঁচ বছর পর বাতিল করে দেশবাসীর কাছে ইতিবাচক ধারণা জন্ম দেয়।

তফসিল পেছানোয় সবদলের মধ্যে বর্তমান কমিশনকে নিয়ে কিছু আস্থা তৈরি হয়। যখন প্রধানমন্ত্রীও দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন। রাজনীতির সুবাতাস এসে পড়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেও। ফলে ইসিতে নিবন্ধিত ৩৯টি দল প্রার্থী দেয়, যেখানে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলো ১২টি দল।

এবারের নির্বাচনে মোট ১ হাজার ৮৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৭৩৩ জন আর স্বতন্ত্রপ্রার্থী ১২৮ জন।

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের আগে বিএনপির দেওয়া তালিকা ও অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের অনেকেই প্রত্যাহার করে নেয়। পুলিশকে ফৌজদারি মামলা ব্যতিত বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মী এবং প্রার্থীদের হয়রানি না করতেও কঠোর নির্দেশ দেন সিইসি। প্রথম দিকে হয়রানির অভিযোগ আনলেও শেষের দিকে তা কমে গিয়েছিল।

কিন্তু ভোটের ফলাফল ইতিহাসকে হার মানালো বলেও খোদ ইসি কর্মকর্তাদের মন্তব্য। ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়।

গাইবান্ধা-৩ আসনের এক প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় সেখানে পুনঃতফসিল দিয়ে ২৭ জানুয়ারি ভোট করবে ইসি। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের ৩টি কেন্দ্র অনিয়মের কারণ স্থগিত করে সেখানে ৯ জানুয়ারি পুনঃভোট করবে ইসি। আর বাকি ২৯৮টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫৯টি আসন, জাতীয় পার্টি ২০টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ দু’টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ দু’টি, জাতীয় পার্টি-জেপি একটি ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন একটি আসন পেয়েছে।

আর বিএনপি পাঁচটি আসন, গণফোরাম দু’টি আসন ও স্বতন্ত্র দু’জন প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। বিএনপি এতো কমসংখ্যক আসন পাওয়ায় ইসির ভূমিকা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। যদিও অন্যান্যবারের তুলনায় সহিংসতা তেমন ঘটেনি। প্রাণহানি হয়েছে অনেক কম। পর্যবেক্ষকরাও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে বলেছেন। কিন্তু অনেক গণমাধ্যমেই খবর প্রচারিত হয়েছে ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয়েছে। আর এজন্যই ব্যালটে ভোটের হার ইভিএমের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি। ৮০ শতাংশ ভোটের হারও অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন অনেকে।

ভোটের আগেই সিইসির পদত্যাগ চেয়েছিলো বিএনপি। আর ভোটের পর দলটি এই ভোট বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। আর সিইসি জানিয়ে দিয়েছেন, আবার নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৯
ইইউডি/আরবি/এসএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।