ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

সালতামামি

হবিগঞ্জে বছরজুড়ে আলোচনায় ৫ শিক্ষার্থীর নির্যাতন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
হবিগঞ্জে বছরজুড়ে আলোচনায় ৫ শিক্ষার্থীর নির্যাতন

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে শিক্ষকদের বর্বরোচিত পাঁচটি ঘটনা দেশজুড়ে জন্ম দেয় আলোচনা-সমালোচনা। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হবিগঞ্জ সদর উপজেলার হাতির থান মাদরাসায় ৩০ মিনিট ধরে ছাত্রের চোখ বেঁধে নির্যাতন, বানিয়াচংয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর চেষ্টার অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বহিস্কার, মাধবপুরে শিক্ষকের পিটুনিতে ছাত্রী অজ্ঞান, হবিগঞ্জ সদরে শিক্ষকের ছুড়ে দেওয়া বেতের আঘাতে হাবিবা নামে এক শিক্ষার্থীর চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং বাহুবলে খণ্ডকালীন শিক্ষকের পিটুনিতে ছাত্র আহত হওয়ার ঘটনা। সংক্ষিপ্ত বিবরণের মাধ্যমে ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো।
 

৩০ মিনিট মোজাম্মেলকে বেত্রাঘাত করেন শিক্ষক
গত ২০ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়নের হাতির থান হাফিজিয়া মাদরাসার ছাত্র মোজাম্মেল হোসেনকে (০৭) প্রায় ৩০ মিনিট ধরে চোখ বেঁধে বেত্রাঘাত করেন শিক্ষক হাফেজ নাঈম।  

জানা যায়, মাদরাসার অন্য ছাত্রদের সঙ্গে একটি বাড়িতে দাওয়াত খেতে যায় মোজাম্মেল।

সেখান থেকে মোজাম্মেলকে ২০ টাকা উপহার দেওয়া হয়। দাওয়াত খেয়ে মাদরাসায় ফিরে এলে লুডু কেনার জন্য ২০ টাকা দিয়ে দিতে মোজাম্মেলকে বলেন শিক্ষক হাফেজ নাঈম। এতে সম্মত না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হন শিক্ষক। পরে মাদরাসা বসে লুডু খেলছিলেন শিক্ষক নাঈম। তখন মোজাম্মেল গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চায়। বিরক্ত হয়ে মোজাম্মেলকে বেত্রাঘাত শুরু করেন শিক্ষক। মারধরে মোজাম্মেলের দুই চোখ থেঁতলে যায়। এছাড়া শরীরের বিভিন্নস্থান বেতের আঘাতে রক্তাক্ত হয়। পরে ঢাকায় দীর্ঘ চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয় ছেলেটি। এ ব্যাপারে মোজাম্মেলের বাবা বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে নিযার্তনকারী শিক্ষক হাফেজ নাঈম আহমেদ ও তার বাবা ওই মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা তাজুল ইসলাম আলফুকে আসামি করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
 
ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টাকারী প্রধান শিক্ষক বহিষ্কার
বানিয়াচং উপজেলার চৌধুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্লীলতাহানী চেষ্টার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক মোজাম্মিল হোসেন খানকে বহিস্কার করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক একেএম সাফায়েত আলম ওই  শিক্ষককে বহিষ্কার করেন। এছাড়া অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়।

ওই ছাত্রীর বাবা জানান, ১৬ এপ্রিল সকালে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে প্রাইভেট পড়তে যায় তার মেয়ে। তখন অন্য ছাত্র-ছাত্রীরা এসে পৌঁছায়নি। একা থাকার সুযোগে শিক্ষক মোজাম্মিল তার ব্যক্তিগত কক্ষে নেন ছাত্রীটিকে। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানগুলো স্পর্শ করে। এসময় তাকে জড়িয়ে ধরে শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করলে সে ওই কক্ষ থেকে দৌড়ে বের হয়ে পাশের বাড়ির এক নারীর শরণাপন্ন হয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে সেখান থেকে নিয়ে যায়।  

প্রধান শিক্ষক মোজাম্মিল আগেও অনেক ছাত্রীর সঙ্গে এমন আচরণ করছেন বলেও উল্লেখ করেন ওই ছাত্রীর বাবা।
 
শিক্ষকের পিটুনিতে দশম শ্রেণির ছাত্রী অচেতন
গত ৯ এপ্রিল দুপুরে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সাবিকুন নাহার মীমকে পিটিয়ে আহত করেন সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান। অচেতন অবস্থায় সাবিকুন নাহার মীম নামে ওই ছাত্রীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত মীম মাধবপুর উপজেলার কালিকাপুর এলাকার মাহবুব তালুকদারের মেয়ে।

মেয়েটির চাচা অ্যাডভোকেট সাজিদুর রহমান বলেন, ওই দিন দুপুরে টিফিন বিরতিতে শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় মীম এবং তার সহপাঠীরা। নির্দিষ্ট সময়ের ৪ মিনিট দেরিতে ক্লাসে ফেরায় তাদের ওপর চড়াও হন সহকারী শিক্ষক হাবিবুর রহমান। এক পর্যায়ে তিনি বেত ও ডাস্টার দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকলে অচেত হয়ে পড়ে মীম। পরে সহপাঠী ও অভিভাবকরা তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেটে পাঠায়।  

এর আগেও ওই শিক্ষকের মারপিটে আরও তিন ছাত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বলে জানা যায়।
 
শিক্ষকের ছুড়ে মারা বেতের আঘাতে চোখের আলো হারায় হাবিবা
৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বেতের আঘাতে হাবিবা আক্তার (০৮) নামে একটি শিশুর চোখ নষ্ট হয়ে যায়। হাবিবা যাদবপুর গ্রামের শাহিন মিয়ার মেয়ে এবং ওই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

ওইদিন বেলা ১২টার দিকে ক্লাস চলাকালে সহকারী শিক্ষক নিরঞ্জন দাশ তার হাতের একটি বেত ছুড়ে মারলে তা সরাসরি হাবিবার চোখে লাগে। এতে তার চোখ থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরে সমগ্র স্কুলে হৈ চৈ শুরু হলে স্থানীয় লোকজন হাবিবাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মিঠুন রায় পরীক্ষার পর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে সিলেটে নিয়ে যেতে বলেন। পরে তার স্বজনরা হাবিবাকে ঢাকা চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মেয়েটির একটি চোখ শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে দেওয়া হয়।
 
বাহুবলে ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করেন খণ্ডকালীন শিক্ষক
২৩ জুলাই মঙ্গলবার হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী শরৎ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র রায়হান আহমেদকে পিটিয়ে আহত করেন খণ্ডকালীন শিক্ষক শাহজাহান মিয়া। পরে তাকে সাময়িক বহিস্কারও করা হয়।

জানা যায়, ওইদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার ক্লাস চলাকালে অমনযোগী ছিল দশম শ্রেণির ছাত্র রায়হান। এ সময় শিক্ষক শাহজাহান মিয়া তাকে বেত্রাঘাত করতে থাকেন। মারপিটে রায়হানের বাম হাতের একটি আঙুল ভেঙে যায়। এক পর্যায়ে তাকে তালাবদ্ধ করে রাখেন ওই শিক্ষক। পরে স্থানীয় লোকজন এবং পরিবারের লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।  

রায়হানের সহপাঠীদের অভিযোগ, খণ্ডকালীন শিক্ষক আইনুল হক ও স্বপন চন্দ্র পাল কিছুদিন আগেও শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড বেত্রাঘাত করে আহত করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।