ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারির বছর ২০২০। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির কারণে এ বছর দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে ছিল শোকের ছায়া।
করোনা কেড়ে নিয়েছে জাতির বাতিঘর জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, বরেণ্য চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর, সাংবাদিক-সংস্কৃতিজন কামাল লোহানী, বরেণ্য অভিনেতা আলী যাকেরের মতো গুণীজনকে। যারা প্রত্যেকেই এ দেশের সংষ্কৃতি অঙ্গনকে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন।
দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি জগতের অভিভাবক জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রয়াত হন গত ১৪ মে। বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনরত গুণী এ মানুষটির মৃত্যুতে দেশের সংষ্কৃতি অঙ্গন হারায় তার অভিভাবককে। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগলেও শেষ মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যুর শোক না কাটতেই গত ২০ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান দেশের প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। ৮৭ বছর বয়সে রাজধানীর মহাখালীতে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শোকের দিন ১৫ আগস্ট সকালে দেশের সংস্কৃতি জগতের আরেক দিকপাল মুর্তজা বশীর করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভাষা সংগ্রামী মুর্তজা বশীরের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
বছরের শেষ প্রান্তে ২৭ নভেম্বর ভোরে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গন হারায় আরেক দিকপাল নাট্যজন আলী যাকেরকে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান।
গত ৯ আগস্ট মারা যান প্রথিতযশা সুরকার-সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী। দেশের শ্রেষ্ঠ সংগীত ব্যক্তিত্বের অন্যতম তিনি। অডিও ও সিনেমা মিলিয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন আলাউদ্দিন আলী। সিনেমার গানে শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
প্রখ্যাত লেখক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক রশীদ হায়দার গত ১৩ অক্টোবর সকালে মারা যান। মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হিসেবে তার সবচেয়ে বড় কাজ ১৩ খণ্ডে ‘স্মৃতি: ১৯৭১’। দেশের আনাচে-কানাচে থাকা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবার খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের পরিবারের কোনো সদস্য বা কোনো ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে স্মৃতিকথা লিখিয়েছেন তিনি।
চলতি বছরের ১৬ মে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান দেশবরেণ্য সুরস্রষ্টা ও সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান। তিনি ছিলেন বাংলা খেয়াল গানের প্রবর্তক।
নয় মাসেরও বেশি সময় ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গত ৬ জুলাই মারা যান প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। সিনেমার পাশাপাশি অডিও মাধ্যমে অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন তিনি।
গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশের পথনাটকের অন্যতম পুরোধা নাট্যজন মান্নান হীরা না ফেরার দেশে চলে যান।
এর আগে ২০ ডিসেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয় বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক কবি-প্রাবন্ধিক মনজুরে মওলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান জিয়াউদ্দিন তারিক আলী।
মহামারির এ বছরের ১৫ জুলাই মারা যান ভাষা সংগ্রামী ও শহীদ মিনারের উদ্যোক্তা ডা. সাঈদ হায়দার। রম্য লেখক সাজ্জাদ কবীর মারা যান গত ১০ মে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৮ নভেম্বর মারা যান প্রখ্যাত সরোদবাদক ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান।
গত ৮ জুলাই জনপ্রিয় ছড়াকার ও বাংলাদেশ শিশুসাহিত্যিক ফোরামের উপদেষ্টা আলম তালুকদার মারা যান। বাংলাদেশ টেলিভিশনের অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকের নির্মাতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ বরকত উল্লাহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩ আগস্ট রাজধানীর গ্রিন লাইফ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ