হবিগঞ্জ:জন্ম নিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান অনেকভাবে। তবে কিছু মানুষ পৃথিবীতে এসে হয়ে ওঠেন ব্যতিক্রম।
মেজর জেনারেল সিআর দত্ত
মুক্তিযুদ্ধের চার নম্বর সেক্টরের কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সি আর দত্ত) বীর উত্তম গত ২৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি আসামের শিলংয়ে তার জন্ম। পৈত্রিক বাড়ি হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার মিরাশি গ্রামে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য চিত্ত রঞ্জন দত্ত বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। এছাড়া ঢাকার কাঁটাবন থেকে কারওয়ানবাজার সিগন্যাল পর্যন্ত সড়কটি বীরউত্তম সি আর দত্ত সড়ক নামে নামকরণ করা হয়।
চিত্ত রঞ্জন দত্ত ১৯৭২ সালে রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে সরকার। এ বিষয়ে চিত্ত রঞ্জন দত্তকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীকালে তিনি সীমান্ত রক্ষা প্রহরী গঠন করেন এবং নাম দেন বাংলাদেশ রাইফেলস। এখন এ বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চিত্ত রঞ্জন দত্ত ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ডিরেক্টর জেনারেল। এছাড়া ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত তাকে নানা ধরনের দায়িত্ব পালন করতে হয়। ১৯৭৪ সাল থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৭ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৯ সালে বিআরটিসির চেয়ারম্যান হিসেবে কিছুদিন দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮২ সালে তিনি পুনরায় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি অবসর নেন।
আল্লামা তাফাজ্জুল হক
আল্লামা তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী ছিলেন একজন ইসলামি চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ, হানাফি সুন্নি আলেম এবং সমাজ সংস্কারক। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি ছিলেন। তিনি জামিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া উমেদনগরের আচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সম্মানে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ পৌরসভার মেইন রোড থেকে দক্ষিণমুখী বিরামচর-সাবাজপুর এলাকার রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে হাফেজ তাফাজ্জল হক (রহ.) সড়ক।
তাফাজ্জুল হক ১৯৩৮ সালে হবিগঞ্জ শহরের অদূরে কাটাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আব্দুন নূর ছিলেন একজন আলেম। তার নানা আল্লামা আসাদুল্লাহ বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তাফাজ্জুল হক বড়। মৃত্যুবরণ করেছেন ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি। তাকে জামিয়া উমেদনগরের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সৈয়দ আফরোজ বখত
হবিগঞ্জের কৃতি সন্তান ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ আফরোজ বখত মারা যান গত ২৩ ডিসেম্বর। তিনি ১৯৩৫ সালের ৩১ মার্চ বানিয়াচং উপজেলার করচা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা সৈয়দ খুরশেদ আলী ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। সৈয়দ আফরোজ বখত হবিগঞ্জ বৃন্দাবন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর বামপন্থী ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে যান। ছাত্র থাকাকালীন তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
১৯৫৫-১৯৫৬ সেশনে কলেজের ছাত্র সংসদের জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালে বি এ পাস করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা সিটি ল কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ন্যাপের (ওয়ালি-মোজাফফর) হবিগঞ্জ মহকুমার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের ত্রিপুরায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। আমৃত্যু তিনি হবিগঞ্জ জজ কোর্টে স্বনামধন্য আইনজীবী হিসেবে কাজ করে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১২৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বরে ৩১, ২০২০
এসআই