ঢাকা, বুধবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২১

ছোট গরুটি নিয়েই আলোচনায় ছিল সাভার

সাগর ফরাজী, সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
ছোট গরুটি নিয়েই আলোচনায় ছিল সাভার

সাভার (ঢাকা): ২০২১ সালের প্রথম থেকেই ভালো-খারাপের মধ্য দিয়ে পার করেছে সাভারবাসী। ছোটা-খাটো বিছিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা ছাড়া ভালো খবরেই ২০২১ সাল জুড়ে আলোচনায় ছিল সাভার।

এরমধ্যে সাভারের সবচেয়ে বড় পাওয়া বিশ্বের বুকে নাম লিখানো।

আর এটি হয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু রানির ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকা নাম ওঠার মধ্য দিয়ে। যা বিশ্বজুড়ে আলোচিত একটি ঘটনা। তবে ছোট গরু রানি গিনেস বুকে নাম আসার আগেই মরে যাওয়ার ঘটনায় হৃদয় স্পর্শ করেছে অনেকের।

কিভাবে আলোচনায় আসলো ভুট্টি জাতের সাদা রঙের এই গরুটি?

২০২১ এর জুলাই মাসের ৫ তারিখে বিভিন্ন গণমাধ্যমের মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসে ছোট গরু ‘রানি’। এরপর দেশে-দেশের বাইরের সংবাদ মাধ্যম সাভারের আশুলিয়ার শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রিজে এসে রানির সর্ম্পকে নানাদিক তুলে ধরে ছড়িয়ে দেয় সারাবিশ্বে। এরমধ্যে শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রানির মালিক কাজী মো. আবু সুফিয়ান বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর সনদ পেতে ২ জুলাই গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছে। ৯০ দিনের ভেতরে গিনেস বুকে নাম উঠবে তার। তিনি গরুটি দুই বছর আগে নওগাঁ থেকে নিয়ে তার খামারে পালছেন।

গিনেস বুকে নাম আসার আগেই হঠাৎ রানির মৃত্যু!

এ বিষয়ে অ্যাগ্রো ফ্রার্মের চিকিৎসক বাংলানিউজকে বলেন, গরুটি সম্পূর্ণ সুস্থ রয়েছে। এর ওজনও আর বাড়বে না। এই গরুর ওজন মাত্র ২৬ কেজি। আর উচ্চতা ২০ ইঞ্চি। তবে হঠাৎ করেই ১৯ আগস্ট গরুটি অসুস্থ হয়ে সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে মৃত্যু হয়। সেই সময় এই মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছিল ধোঁয়াশা। গরু রানির মৃত্যু নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিচ্ছেন গুরুটির মালিক ও উপজেলা পশু চিকিৎসক।

সাভার উপজেলার উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল মোতালিব বাংলানিউজকে বলেন, মূলত গরুটি দুই-তিন দিন অসুস্থ ছিল। সেই অ্যাগ্রো ফ্রার্মের নিজস্ব ডাক্তার গরুটিরে চিকিৎসা করেছে। পরে অবস্থার অবনতি হলে সাভারে পশু হাসপাতালে আনা হয়। পরে চিকিৎসা দেওয়ার সময় আধাঘণ্টা পরই গরুটির মৃত্যু হয়। মূলত গরুটির খাবারে সমস্যা হওয়ার কারণে মারা গেছে। যাকে বলে ফুড পয়জনিং। ছোট গরু হিসেবে দানাদার খাবারটা একটু বেশি দিয়ে ফেলায় এই সমস্যা হয়েছিল।

অন্যদিকে শিকড় অ্যাগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ান বাংলানিউজকে বলেন, ‘রানিকে বিভিন্ন সময় চুরির চেষ্টা চালানো হয়েছে। এছাড়া অনেকেই দেখতে আসেন। এসব কারণে তার নিরাপত্তা হুমকি ছিল। সম্প্রতি রানির মতো আরেকটি গরুও আনা হয়েছে এখানে। নতুন গরু আনার পর রানিকে আরেক ঘরে নেওয়া হয়। ওখানে নেওয়ার পরেই রানি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তবে মারা যাওয়ার খবরটি গুজব। ছোট গরু হওয়ায় অনেক সময় সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পেট ফুলে যায়। তবে ফের সুস্থ হয়ে যায়। এটা নিয়মিত প্রক্রিয়া।

এ দুই রকম বক্তব্য পেয়ে রানির মৃত্যু ঘটনায় সংবাদ সগ্রহ করতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে যায় গণমাধ্যমকর্মীরা। পরে অবশ্য গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারে গরুটি সত্যিই মৃত্যু হয়েছে। মালিক বিষয়টি মিডিয়ায় আনতে চাইনি গিনেস বুকের জন্য।

মৃত্যুর পরে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর স্বীকৃতি পেছে রানি!

গিনেস বুক রেকর্ডের অপেক্ষায় থাকা সাভারের আশুলিয়ায় খর্বাকৃতির গরু রানির মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর ৪০ দিন পর ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে স্বীকৃতি পায় সেই রানি। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ শেকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ানকে একটি ই-মেইলের মাধ্যমে গিনেস বুকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

বিষয়টি নিয়ে তখন শেকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ান বাংলানিউজকে বলেন, গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা রানির পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পাঠিয়েছিলাম। তারা মূলত দেখেছে, আমরা হরমন জাতীয় ইনজেকশন পুশ করে রানীকে বামন করেছিলাম কি না? কিন্তু এ ধরনের কোনো কিছু তারা রিপোর্টে পায়নি। তিনদিন আগে ওরা রানীকে বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ওদের প্রসেসের কারণে বিলম্বে কাল আমাদের ই-মেইল করেছে।

তিনি আরও বলেন, রানি আমাদের সবার অনেক আদরের ছিল। প্রাণী হলেও রানিকে আমরা পরিবারের একজন করে নিয়েছিলাম। কিন্তু গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে যখন রানির নাম উঠতে আর কিছু দিন বাকি, তখন আমরা রানিকে হারিয়েছি। রানির মৃত্যু কোনোভাবেই ওই সময় মেনে নিতে পারিনি আমরা। তবে অবশেষে গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ তাদের প্রসিডিউর অনুযায়ীই রানিকে বিশ্বের সবচাইতে ছোট গরুর স্বীকৃতি দিয়েছে। আমরা সত্যিই অনেক বেশি আনন্দিত। তবে রানি বেঁচে থাকলে এ আনেন্দর মাত্রা কয়েক গুণ বেড়ে যেত।

জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসেই খর্বাকৃতির গরু রানির সঙ্গে সাভারের নাম লেখা হয়েছিল গিনেস বুকে। যা ইতিহাস হয়েছে থাকবে সাভারবাসীর মনে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।