মাদারীপুর: দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মাসেতু মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে প্রমত্তা পদ্মার বুকে। অনেক আগেই নদীর দুই প্রান্তকে যুক্ত করেছে একই সুতায়।
পদ্মাসেতু চালু হলে দেশের অন্যতম নৌরুট মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া গুরুত্ব হারাবে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এ নৌরুটটি ব্যবহার করে থাকে। এ কারণেই এ নৌরুটের গুরুত্ব ব্যাপক।
গণমাধ্যমে এ নৌরুট কেন্দ্রিক যে কোনো সংবাদ জাতীয় সংবাদের গুরুত্বে প্রকাশ পায়। ২০২১ সাল ছিল এ নৌরুটকে ঘিরে বেশ আলোচনার বছর। শুধু মাদারীপুরবাসীর জন্যই নয়, জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত আলোচিত হয়েছে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুট কেন্দ্রিক ঘটনাগুলো। এর মধ্যে পদ্মাসেতুতে বার বার ফেরির ধাক্কা ছিল সারা বছরের আলোচিত একটি ঘটনা। আর এ ঘটনার কারণেই এ নৌরুট ব্যবহারকারীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগ আর ভোগান্তিতে। বছর শেষ হলেও এ ভোগান্তি শেষ হচ্ছে না; যতদিন না সেতু চালু হচ্ছে।
গত ২৩ জুলাই। সকাল আনুমানিক ৮টা। বাংলাবাজার ঘাট থেকে এর আগেই রো রো ফেরি শাহজালাল যানবাহন ও যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়। সেদিন সকাল থেকে থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিও হচ্ছিল। বর্ষা মৌসুম থাকায় পদ্মায় পানি এবং স্রোত উভয়ই বেশি ছিল। ফেরিটি পদ্মাসেতুর ১৭ নম্বর পিলারের নিচ দিয়ে সেতু অতিক্রম করতে গিয়ে সরাসরি ফেরির অগ্রভাগে পিলারের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে। এসময় কমপক্ষে ২০ যাত্রী আহত হন। ঘাট সংশ্লিষ্টরা প্রথম দিকে ঘটনাটি এড়িয়ে যেতে চাইলেও ধাক্কা লাগার ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে হইচই পড়ে যায়। স্রোতের তীব্রতাকে তখন দায়ী করেন ফেরি সংশ্লিষ্টরা।
এরপর ৯ আগস্ট। আবার পদ্মাসেতুতে ফেরির ধাক্কা! সন্ধ্যা ৬টার দিকে রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর পদ্মাসেতুর ১০ নম্বর পিলারে গিয়ে ধাক্কা খায়। এ ফেরিটি বাংলাবাজার থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়ার উদ্দেশে যাচ্ছিল।
তৃতীয় দফায় ১৩ আগস্ট সকাল ৮টার দিকে ওই ১০ নম্বর পিলারের সঙ্গেই আবার ফেরির ধাক্কা লাগে। কে টাইপ ফেরি কাকলী বাংলাবাজার থেকে যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়া যাওয়ার সময় এ ধাক্কাটা দেয়। ফেরি কর্তৃপক্ষ তখন জানিয়েছিল, স্রোতের তীব্রতার কারণে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে না পারায় পিলারের সঙ্গে ধাক্কার ঘটনাগুলো ঘটেছে।
বার বার সেতুর পিলারে ধাক্কা লাগার ঘটনায় ঝুঁকি এড়াতে ১৮ আগস্ট থেকে নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর টানা ৪৭ দিন ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। ফেরি চলাচল বন্ধের পর থেকেই যাত্রীদের দুর্ভোগ শুরু হয়। এ নৌরুট ব্যবহারকারীদের দীর্ঘপথ ঘুরে পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া ব্যবহার করতে হয়। একটি রুট দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগের কারণে ওই রুটেও যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটে অপেক্ষা করতে হয় পদ্মা পার হতে। এরপর ৫ অক্টোবর সীমিতভাবে বাংলাবাজার রুটে ফেরি চালু হয়। মাত্র ছয়দিন ফেরি চলাচল করে আবার স্রোতের তীব্রতার কারণ দেখিয়ে ফেরি বন্ধ করা হয়।
এরপর টানা ২৮ দিন বন্ধ থেকে গত ৮ নভেম্বর থেকে ফেরি চালু হয়েছে। তবে মাত্র চারটি ফেরি শুধু দিনের বেলা চলাচল করছে। বর্তমানে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মাত্র চারটি ফেরি চলাচল করায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। যাত্রীরা আক্ষেপ করে বলেন, সেতু চালু না হলে এ কষ্ট আর দূর হবে না! এখন পদ্মাসেতুর জন্যই আমাদের অপেক্ষা!
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এসআই