ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি-২০২১

জিয়ার খেতাব দিয়ে শুরু, খালেদার চিকিৎসায় শেষ

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
জিয়ার খেতাব দিয়ে শুরু, খালেদার চিকিৎসায় শেষ

ঢাকা: বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম খেতাব’ বাতিল করার ঘোষণায় বছরের প্রথমেই ফুঁসে ওঠে বিএনপি। আর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার দাবি নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে শেষ করে বছর।

গত ৯ ফেব্রুয়ারি জামুকার ৭২তম সভায় মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের একদিন পর ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জেড’ ফোর্সের ‘এ’ ও ‘বি’ কোম্পানির কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম এবং ৯ নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর শাহজাহান ওমর বীর উত্তম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের কোনো এখতিয়ার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল-জামুকার নেই্’।  

ওই একই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিক অপচেষ্টা দাবি করে এর প্রতিবাদে ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ দেশের সব মহানগর এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব জেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপর প্রায় এক মাস বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন প্রতিবাদ কর্মসূচি চালায়।

এদিকে গত ১০ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২৭ এপ্রিল কোভিডউত্তর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। দীর্ঘ ৫৩ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সে যাত্রা সুস্থ হয়ে ১৯ জুন গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সাড়ে তিন মাসের মতো বাসায় থাকার পর ১২ অক্টোবর তাকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, থাকেন ২৬ দিন। পরে ৭ নভেম্বর গুলশানের বাসায় ফিরলেও পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ায় ১৩ নভেম্বর আবারও নেওয়া হয় এভার কেয়ার হাসপাতালে। ২২ নভেম্বর রাতে তার মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। পরে সেটি গুজব বলে জানা গেলেও তিনি যে গুরুতর অসুস্থ এটা জানাতে তার চিকিৎসক টিমের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে আসেন।  

২৮ নভেম্বর রাতে গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসায় ওই সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক টিমের সদস্য প্রফেসর ডা. এফ এম সিদ্দিকী ঘোষণা দেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। ২৮ নভেম্বরের আগেই তার তিনবার রক্তক্ষরণ হয়েছে। পুনরায় রক্তক্ষরণ হলে তার মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যাবে।  

এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবিতে পুরো নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে বিএনপি নানা কর্মসূচি পালন করছে, যা বছরের শেষ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তাদের ঘোষণা মতে এরপরও যদি সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ না দেয় তাহলে তাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

জানুয়ারি
বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছিল দাবি করে ওই দিনটি কালো দিবস হিসেবে পালন করে বিএনপি। এদিন সারাদেশে বিএনপি কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন এবং দলের নেতাকর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশে থানা পর্যায়ে ৭ জানুয়ারি মানববন্ধন ও  নির্বাচন কমিশনের পদত্যাদের দাবিতে ১০ জানুয়ারি পৌরসভা ও মহানগরে মানববন্ধন করে বিএনপি।

ফেব্রুয়ারি
জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের প্রতিবাদে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন।

মার্চ
বছর শুরুর তৃতীয় মাস ছিল বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান। যিনি ছিলেন দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।  

এপ্রিল
এ বছরের এপ্রিল মাসও ছিল বিএনপির জন্য দুঃসংবাদের মাস। এই মাসের ১০ তারিখ করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার। ওই দিন একটি রিপোর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলেও পরের দিন ১১ এপ্রিল গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আনুষ্ঠানিকভাবে জানান, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার করোনা পজিটিভ।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ৫ এপ্রিল। ওই সময় দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের চলতি দায়িত্বে ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তার স্বাক্ষরিত অব্যাহতিপত্র পেয়ে মারুফ কামাল খান নিজ ফেসবুকে সেটি শেয়ার করেন। ৮ মাস অতিবাহিত হলেও মারুফ কামালের পদে আর কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

মে
ভারতের পশ্চিম বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসায় ৮ মে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে  অভিনন্দন জানানো হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিসে প্রথম আলোর সিনিয়র সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ৫ ঘণ্টা আটক রেখে পুলিশের কাছে হস্তান্তর ও তার বিরুদ্ধে জিডি করার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৮ মে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি একথা জানান।

জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের চারটি আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেয় ২৩ মে । এদিন গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সিদ্ধান্ত জানান। মূলত ওই বর্জনের পর বছরের শেষদিন পর্যন্ত দলীয় প্রতীকে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি।

জুন
অর্থনীতির নানা তত্ত্ব ও বিশাল সংখ্যার আর্থিক উপস্থাপনার বাজেট জনগণের সাথে ভাঁওতাবাজি দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইহা একটি অবাস্তবায়নযোগ্য, কাল্পনিক ও কাগুজে বাজেট ছাড়া আর কিছুই নয়। জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপনের পর ৪ জুন দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব বাজেট প্রত্যাখান করেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি শফি আহমেদ চৌধুরী দলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সিলেট-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে ১৯ জুন বিএনপি থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল অব. মো. শাহজাহান মিয়া ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর অব. হানিফ দল থেকে পদত্যাগ করেন। ২৯ জুন দুপুরে একটি ইমেইল বার্তায় তারা দুজন পদত্যাগের বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।

জুলাই
১৪ জুলাই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের একাংশ। পুরানা পল্টনে নিজেদের কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকে এই ঘোষণা দেন দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া। প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেই দলটির নেতারা জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের সরকার কারাগারে আটক রেখেছে। সরকার চাপ দিয়েই তাদের জোট ছাড়তে বাধ্য করেছে।

জুলাই মাসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেন। ১৯ জুলাই বিকালে মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে তিনি টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন।

রিজভীর টিকা গ্রহণ কেন আলোচিত?
মরে গেলেও করোনার টিকা নেবেন না এমন ঘোষণা দিয়েও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী টিকা গ্রহণ করেন ২৬ জুলাই। টিকা নেওয়ার বিষয়টি ব্যাখা দিয়ে রিজভী বলেন, তিনি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটেরের টিকা নেবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তবে যে টিকা তিনি নিয়েছেন সেটি ভারতের নয়, আমেরিকার তৈরি মডার্নার। এর আগে ১৬ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন বিএনপি নেতা রিজভী আহমেদ। ১৭ মার্চ তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘ দুই মাস হাসপাতালে থাকার পর তিনি বাসায় ফেরেন।

খালেদা জিয়ার সাথে স্থায়ী কমিটির নেতাদের সাক্ষাৎ
খালেদা জিয়া কোভিড থেকে মুক্ত হওয়ার পর ২১ জুলাই রাতে গুলশানের বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান ও সেলিমা রহমান। গত বছর দুই ঈদে খালেদা জিয়ার সাথে নেতাদের সাক্ষাৎ হলেও এবছরের রমজানের ঈদে তারা সাক্ষাৎ করতে পারেননি। ওই সময়ে করোনা পরবর্তি জটিলতা নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৫৩ দিন। পরে এ বছর নভেম্বর মাস থেকে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়া এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

আগস্ট
বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয় ২ আগস্ট। নতুন করে আহবায়কের দায়িত্ব পান দক্ষিণে আবদুস সালাম উত্তরে আমান উল্লাহ আমান।

সেপ্টেম্বর
সেপ্টেম্বর মাসের ১৪ থেকে ২৩ তারিখ দুই দফায় ছয়দিনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিরিজ বৈঠক হয়। ছয় দিনে তিন শতাধিক নেতার বক্তব্য শোনেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলের করণীয় ঠিক করতে দলীয় নেতাদের মতামত নিতে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নির্বাহী কমিটির এই সভা ডাকেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এসব বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপিতে যুক্ত হন তিনি।

২৩ সেপ্টেম্বর ছয় ঘণ্টাব্যাপি শেষ দিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে রাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, সংগঠনের অবস্থা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য কী করা যেতে পারে সেই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই সঙ্গে গণতন্ত্রের নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বাংলাদেশের মুক্তি এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যারা আলোচনা করে্ছেন তাদের সব বক্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এরপরে আমাদের দলের নীতিনির্ধারণী সভায় সেগুলো নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং তখন আপনারা জানতে পারবেন আমরা কী ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করবো।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় ধারাবাহিক বৈঠক। প্রথম দফায় তিন দিন দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ সম্পাদক মণ্ডলী এবং ৯টি অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হয়। দুই দফার ধারাবাহিক বৈঠকে ৪৯১ জন নেতা অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৩ ‘শ জন বক্তব্য রাখেন।

খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাথে এটাই তারেক রহমানের প্রথম বৈঠক। দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, ২০২১ সালে বিএনপির রাজনীতির সবচেয়ে সফল ছিল এই নির্বাহী কমিটির বৈঠকটি।

অক্টোবর
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে থাকা নিবন্ধিত দল খেলাফত মজলিস জোট ছেড়ে দেয় ১ অক্টোবর। ওই দিন বিকাল সাড়ে  চারটায় রাজধানীর পুরানা পল্টনের সিগাল রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক।

নভেম্বর ও ডিসেম্বর
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে ১৩ নভেম্বর এভার কেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হন। এরপর চিকিৎসকরা জানান, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাকে সুস্থ করতে হলে দ্রুত বিদেশে পাঠাতে হবে। চিকিৎসকদের এই ঘোষণার পর থেকেই তার মুক্তি ও চিকিৎসার দাবি জানিয়ে বছরের শেষ দুটি মাসে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
 
যুবদলে ক্ষোভ
২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় যুবদলের। এসময় সুপার ফাইভ কমিটি (পাঁচ জনের কমিটি) অনুমোদন দিয়ে তাদেরকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পাঁচ জনের ওই কমিটি দীর্ঘ তিন বছর এক মাস ক্ষমতায় থেকে ১০৯ জনকে নতুন করে কমিটিতে যুক্ত করেন ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ওই কমিটি হওয়ার কথা ২৬১ সদস্য বিশিষ্ট। ফলে অনেক পদ-পদবী খালি থেকে যায়। ২০২১ সালেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ না হওয়ায় দলটির মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।  

পূর্ণাঙ্গ হয়নি ছাত্রদলের কমিটি
প্রায় ২৭ বছর পর কাউন্সিলের মাধ্যমে গত ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের ষষ্ঠ কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সরাসরি ভোটে সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নির্বাচিত হয়।

৩ মাস পর ২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬০ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ৬০ সদস্য বিশিষ্ট ওই আংশিক কমিটিতে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী অনেক ত্যাগীদেরকে বাদ দেওয়া হয়। সেসময় কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। দুই বছর মেয়াদের কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও ২০২১ সালের শেষেও সেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি।

কৃষক দলের সফলতা
বিএনপির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে একমাত্র কৃষক দল এ বছর সফলভাবে সম্মেলন করে। সম্মেলনের শেষে প্রথমে আংশিক ও পরে ২৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের ১১তারিখ নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে তারা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও পালন করে। ১৯ ডিসেম্বর বিএনপি আয়োজিত বিজয় র‌্যালিতেও তার প্রতিফল দেখা যায়। ওই র‌্যালিতে মৃতপ্রায় কৃষক দলের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো।    

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২১
এমএইচ/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।