মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চুরি-ছিনতাই কমছেই না। ঋণ নিয়ে অটোরিকশা কিনে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন অনেকে।
তবে চোরচক্রকে আইনের আওতায় এনে অটোরিকশা চুরি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে দাবি পুলিশের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় এরকম হরহামেশাই ঘটছে সিএনজি চুরির ঘটনা। দিনে-দুপুরে কিংবা রাতে এই চক্র প্রতিনিয়তই অটোরিকশা চুরি করছে। এতে করে উদ্বিগ্ন চালকরা। অনেকে অটোরিকশা হারিয়া যেমন নিঃস্ব আবার অনেক চালক চোরচক্রকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহের সম্বলটি ফেরত পাচ্ছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার উত্তর কালাপুর গ্রামের সেলিম মিয়া কিস্তিতে লোন নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিনেছিলেন। মাসখানেক আগে সেই গাড়ি চুরি করে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। নিজের শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে সেলিম এখন দিশেহারা।
সিএনজিচালক সেলিম মিয়া বলেন, বাড়িতে ভাইয়ের ও আমার দুটি অটোরিকশা ছিল। দুটি গাড়িই লোন নিয়ে কিস্তিতে কিনেছিলাম। একদিন রাত আড়াইটার দিকে গাড়ি দুটো চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। এখন আমি ভাড়ায় গাড়ি চালাই। আমার লোনও পরিশোধ করতে হয়েছে। কত জায়গায় গিয়েছি, আমার গাড়ি (অটোরিকশা) কেউ উদ্ধার করে দিতে পারেনি।
আরেক ভুক্তভোগী চালক জসিম বলেন, আগে নিজের গাড়ি ছিল। গাড়ি চুরির পর বিপাকে পড়েছি। এখন ভাড়ায় গাড়ি চালাচ্ছি। চুরির পর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়লাম।
চালক শফিক অভিযোগ করে বলেন, আমরা জানি, এই সিএনজি চুরির পেছনের গডফাদারের নাম - লেংরা। তার সঙ্গে আমাদের কিছু শ্রমিক নেতাও জড়িত।
আরেক ভুক্তভোগী চালক সালাউদ্দিন বলেন, শুনেছি মৌলভীবাজারের বড় একটা সিন্ডিকেট চুরির গাড়ি কালেকশন করে। আমার গাড়ি চুরি হয়েছিল। দুই লাখ চল্লিশ হাজার টাকা দিয়ে গাড়িটা ফেরত পাই।
মৌলভীবাজার জেলার পার্শ্ববর্তী সিলেট ও হবিগঞ্জকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ এক দশক ধরে গড়ে উঠেছে সিএনজি চোরচক্র। এতে জড়িত চোরচক্রের সর্দার, মৌলভীবাজারের শ্রমিকনেতাসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সম্প্রতি এদের একজন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেও বাকিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় উদ্বেগ জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন জানায়, বিগত দুই বছরে মৌলভীবাজার জেলায় সিএনজি চুরির ঘটনা ঘটেছে শতাধিক। অনেক ক্ষেত্রে চালককে হত্যা করেও সিএনজি চুরির ঘটনা ঘটছে। তাই সংঘবদ্ধ চোরচক্রকে আইনের আওতায় আনার দাবি চালকদের।
মৌলভীবাজার জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল হক সেলিম বলেন, যেসব চোর ও নামধারী শ্রমিক নেতারা জড়িত তাদের তালিকা পুলিশ প্রশাসনের কাছে আছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, গ্রেপ্তারও হচ্ছে। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে আবার চোরেরা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। তালিকাভুক্ত এসব আসামিদের ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চুরির রহস্য উদ্ঘাটন হবে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আন্তঃজেলা সিএনজি চোরচক্রের তালিকা রয়েছে পুলিশের হাতে। তালিকাভুক্ত আসামিদের আইনের আওতায় আনতে আমাদের অভিযান কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এসব সিএনজি কেনাবেচার সঙ্গে যারা জড়িত তাদেরকেও শনাক্তের কাজ চলছে। কোন জায়গায় গিয়ে তারা বিক্রি বা যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করছে সেই সংশ্লিষ্টতা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২৫
বিবিবি/এসএএইচ