যশোর: বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে যশোর। সূর্যের দাপট যেন বেড়েই চলেছে।
তীব্র গরমে সব থেকে বেশি করুণ অবস্থায় রয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। রিকশাচালক, দিনমজুর থেকে শুরু করে দিন আনা দিন খাওয়া প্রতিটি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। আগামী দু’একদিনের মধ্যে এর থেকে পরিত্রাণের কোনো সম্ভাবনা দেখছে না স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
স্বস্তিতে নেই সাধারণ ব্যবসায়ীরাও। তীব্র গরমে কারণে দিনের বেলা বিপণিবিতানগুলোতে ক্রেতার দেখা মিলছে কম। খাদ্যাভ্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। বাজারে বেড়েছে সবজির দাম। মাঠে ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকের অবস্থা খুবই নাজুক। গরমের কারণে বেশি মজুরি দিয়ে শ্রমিক নিতে হচ্ছে। আবার বেশি মজুরি দিয়েও অনেক জায়গায় শ্রমিক মিলছে না।
এদিকে তীব্র গরমের কারণে সকর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় কয়েকদিন মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। এর মধ্যে দুদিন দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় এ জেলায়। যা ছিল গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আর বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) যশোরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
রিকশাচালক শাহজাহান বলেন, ‘গরমে সামান্য সময় রিকশা চালিয়ে কিছুক্ষণ জিরুতি (বিশ্রাম নেওয়া) না পারলি আর কাজ করা যাচ্ছে না। দু’তিনডে ভাড়া মারার পর ছাওয়ায় বসে কিছু না খেয়ে আর ভাড়া মারার ইচ্ছা হয় না। ’
যশোর রেলবাজারের সবজি বিক্রেতা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘ঠা-ঠা রোদে গা পুড়ে যাচ্ছে। খরতাপে রাস্তা থেকেও বের হচ্ছে তাপ। এ পরিস্থিতিতে রাস্তার পাশে ছাতির তলায় বসে থাকাও যাচ্ছে না। খরিদ্দাররা ভোরের দিকে এসে সামান্য কেনাকাটা করে চলে যাচ্ছে। তার ওপর বাজারে সবজি কম, দামও বেশি।
শার্শা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের ঘিবা গ্রামের কৃষক আব্দুল গণি বলেন, যে গরম আর রোদ পড়েছে মাঠে টিকে থাকা দায়। কিন্তু উপায় নেই। ঝড়-বৃষ্টির আগে যদি মাঠের পাকা ধান উঠোতি না পারি তাহলে চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
একই কথা বলেছেন লক্ষণপুর ইউনিয়নের বহিলাপোতা গ্রামের ওমর আলী। তিনি বলেন, এখনও মাঠে প্রচুর ধান পাকা পড়ে আছে। গরমের কারণে শ্রমিকের অভাবে তা কাটা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিক যাও পাওয়া যাচ্ছে, তাদের মজুরি দিতে হচ্ছে অনেক বেশি। ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় কৃষকরা বাধ্য হয়ে তাই মাঠে একযোগে কাজ করে ধান গোয়ালে ওঠানোতে সময় পার করছেন। তবে গরমের কারণে কাজে খুব একটা এগোনো যাচ্ছে না।
যশোর শহরের সিটিপ্লাজা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শফিকুর আজাদ বলেন, ব্যবসার অবস্থা খুব খারাপ। গরমের কারণে দিনের বেলায় দোকানগুলোতে খুব একটা খরিদ্দাররা আসছেন না। সন্ধ্যায় সামান্য কয়েকজনের আনাগোনা দেখা যায়। জেলা শহরের সব বিপণিবিতানগুলোতে একই পরিস্থিতি।
তিনি আরও বলেন, গরমে মানুষের খাদ্যাভ্যাসেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফাস্টফুডের দোকানগুলোতে ভাজাপোড়া বিক্রি একেবারে কমে গেছে। তবে বেড়েছে লাচ্ছি আর ফালুদার চাহিদা।
তীব্র গরম পরিস্থিতিতে সবাইকে বাইরে চলাচলে ও খাদ্যাভ্যাসে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে যশোরের ডেপুটি সিভিল সার্জন নাজমুস সাদিক রাসেল বলেন, বাইরে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। তা না হলে পানি শূন্যতা থেকে জন্ডিস, ডায়রিয়াসহ নানা সমস্যার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমনকি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে এই তীব্র গরমে।
তিনি বলেন, গরমের তীব্রতায় বিশেষ কিছু সতর্কতা মেনে চলা জরুরি। পানি শূন্যতা থেকে রক্ষা পেতে ঘন ঘন পানি খেতে হবে। ডায়রিয়া ও জন্ডিস থেকে রক্ষা পেতে ভাজাপোড়াসহ তেল জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০২৫
এসআরএস