যশোর: যশোরে চুক্তি না করায় সরকারি খাদ্যগুদামে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বিঘ্নিত হয়েছে। এজন্য যশোরের ৬২টি রাইস মিলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
যদিও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহ শাখার পাঠানো আদেশে চুক্তি অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করতে না পারা চুক্তিবদ্ধ মিলগুলোর ব্যাপারে এবং চুক্তি না করা রাইস মিলগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জেলা খাদ্য অফিসের অডিটর উজ্জ্বল কুমার বাংলানিউজকে বলেন, আপদকালের জন্য সরকার প্রতি বছর সাধারণ খাদ্য মজুদের লক্ষ্য নিয়ে চাল সংগ্রহ করে। এ চাল প্রয়োজনে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা, চলমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, ভিজিডি, ভিজিএফ এবং অন্যান্য চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
তিনি বলেন, সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মিলগুলোর কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরাসরি চাল সংগ্রহ করা হয়। মিলগুলো নিজেদের সক্ষমতা অনুযায়ী মৌসুমে কত পরিমাণ চাল সরকারি গুদামে সরবরাহ করতে পারবে সে ব্যাপারে চুক্তি হয়।
উজ্জ্বল কুমার জানান, আমন মৌসুম ২০২৪-২৫ এ যশোর জেলায় মিলগুলো থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ১৪ হাজার ২৪৭ টন সেদ্ধ চাল ও ৮০১ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু, মিল মালিকদের অসহযোগিতার কারণে সংগ্রহ করা গেছে মাত্র সাত হাজার ৩৭০ টন। যা অর্ধেকেরও কম।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেছেন, ২০২৪-২৫ মৌসুমে জেলার ১৬৩টি মিলকে চুক্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৬২টি মিল কোনো চুক্তি করেনি। যে কারণে জেলায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্ধেকেরও কম হয়েছে।
অথচ, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যশস্য সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ আদেশ ২০২২ অনুযায়ী প্রতিটি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মিল সরকারি খাদ্যগুদামে সরকার নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করতে বাধ্য। সে কারণে চুক্তি না করা ৬২ মিলের লাইসেন্স কেনো বাতিল করা হবে না তার কারণ দর্শাতে (শোকজ) নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
নোটিস পাওয়া মিলগুলোর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৫টি, মণিরামপুরে ১৩টি, কেশবপুরে আটটি, অভয়নগরে চারটি, ঝিকরগাছায় দুটি, শার্শায় পাঁচটি, বাঘারপাড়ায় দুটি এবং চৌগাছা উপজেলায় ১৩টি রয়েছে।
গত ০৯ এপ্রিল মিলগুলোর কাছে পাঠানো নোটিশের জবাব দেওয়ার সর্বশেষ সময় ছিল ২৩ এপ্রিল (বুধবার)। কিন্তু, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মাত্র ২৪টি মিলের জবাব পাওয়া গেছে। যারা জবাব দিয়েছে তাদের মধ্যে সদর উপজেলায় আট, ঝিকরগাছায় দুই, অভয়নগরে চার এবং চৌগাছা উপজেলার ১০টি মিল রয়েছে। এগুলো নিয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান জেলা খাদ্য কর্মকর্তা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. আবু নাসার উদ্দিন স্বাক্ষরিত গত ২০ মার্চ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ শাখা থেকে পাঠানো ‘অভ্যন্তরীণ আমন সংগ্রহ, ২০২৪-২৫ মৌসুমে চুক্তি না করা এবং ব্যর্থ চালকলের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ’ বিষয়ক এক চিঠি ইস্যু করা হয়েছে দেশব্যাপী। সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেও চাল সরবরাহে ব্যর্থ এবং চুক্তি না করা মিলগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে এ চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
যেসব মিল চাল সরবরাহে চুক্তিযোগ্য থাকার পরও চুক্তি করেনি তাদের লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে চিঠিতে।
পাশাপাশি চুক্তির ৬০ শতাংশ বা তার বেশি চাল সরবরাহ করতে সক্ষম মিলগুলোর জামানত ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে, যেসব মিল চুক্তির ৬০ শতাংশের নিচে চাল সরবরাহ করেছে, তাদের জামানত আনুপাতিকহারে কেটে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে যেসব মিল চুক্তি করেও কোনো চাল দেয়নি, তাদের জামানত সম্পূর্ণ বাজেয়াপ্ত করার কথা বলা হয়েছে।
সে হিসেবে যশোরের যে ৬২টি মিলের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরাসরি কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সেফাউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যশস্য সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ আদেশ ২০২২ এর ৭ ও ৮ নম্বর বিধান অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হলে তাকে কারণ দর্শানোর জন্য ১৫ দিনের সময় দিয়ে নোটিস দিতে হবে। সেটিরই বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে কয়েকজন চুক্তি অনুযায়ী চাল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের জামানতও কেটে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
এসআই
বাংলাদেশ সময়: ২:৪২ পিএম, এপ্রিল ২৭, ২০২৫ /