ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২২ মে ২০২৫, ২৪ জিলকদ ১৪৪৬

সারাদেশ

পারমিট জটিলতা কাটিয়ে আগরতলায় মাছ রপ্তানি চলছে, কমেছে রপ্তানি আয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৭, মে ২২, ২০২৫
পারমিট জটিলতা কাটিয়ে আগরতলায় মাছ রপ্তানি চলছে, কমেছে রপ্তানি আয়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: বাংলাদেশ ব্যাংকের এক্সপোর্ট পারমিট (ইএক্সপি) জটিলতা কাটিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় মাছ রপ্তানি শুরু হয়েছে।  

নিষেধাজ্ঞার ছয়টি পণ্য ছাড়া অন্যান্য পণ্য স্বাভাবিকভাবে রপ্তানি হচ্ছে।

তবে আগের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে অর্ধেক।  

বৃহস্পতিবার (২২ মে) সকালে আখাউড়া স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।  

তিনি বলেন, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ১০টি গাড়িতে করে প্রায় ৭০ টন হিমায়িত মাছ আগরতলায় রপ্তানি হয়েছে। তার আগে সকাল থেকে তিনটি ট্রাকে করে ৯০ টন পাথর ও ছয়টি ট্রাকে করে ১০৬ টন ভোজ্য তেল ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় রপ্তানি হয়েছে।  

গত বুধবার এক্সপোর্ট পারমিট জটিলতায় মাছ রপ্তানি হয়নি। তবে ওই দিন সিমেন্ট ও ভোজ্য তেল রপ্তানি হয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের মৎস্য রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, মাছ রপ্তানিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইএক্সপির প্রয়োজন হয়। ওই কাগজপত্র মাছ ব্যবসায়ীদের হাতে না পৌঁছানোয় বুধবার (২১ মে) ব্যবসায়ীরা ভারতে মাছ রপ্তানি করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার এক্সপোর্ট পারমিট জটিলতা কাটিয়ে সকাল থেকে মাছ রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চলছে।  

এদিকে ভারত সরকার হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে স্থলপথে ছয়টি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতমুখী রপ্তানি বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারতে ৪২৭ কোটি ৮৮ লাখ ৭২ হাজার ৪৩০ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়। আর চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গেলো এপ্রিল পর্যন্ত রপ্তানি হয় ৪৫৩ কোটি এক লাখ ৯৬ হাজার ৭৯৩ টাকার পণ্য।  

রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক, ভোজ্য তেল, বর্জ্য তুলা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, মেলামাইন সামগ্রী ও শুঁটকি। তবে কাঠের তৈরি ফানিচার ও তৈরি পোশাক এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয় না।

স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানান, হিমায়িত মাছের পর সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় প্লাস্টিক পণ্য, পিভিসি সামগ্রী, চিপস, বিস্কুট, ফলের স্বাদযুক্ত জুস ও তুলা। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ লাখ টাকার এসব পণ্য রপ্তানি হতো ভারতে। কিন্তু এ পণ্যগুলো আমদানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ায় রপ্তানি বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে ভারতের সঙ্গে চলা কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেই দেশটির সরকার আমদানির সুযোগ সীমিত করেছে বলে ধারণা ব্যবসায়ীদের। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার দাবি তাদের।

আখাউড়া স্থবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, নিষেধাজ্ঞার ছয়টি পণ্য এ পর্যন্ত বন্দরে আসেনি। তাই কোনো ট্রাক আটকা পড়েনি। তবে আগের চেয়ে রপ্তানি আয় কমেছে অর্ধেক।

বন্দর সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞার আগে গড়ে প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে দেড় কোটি টাকা বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করা হতো। নিষেধাজ্ঞার পরে প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে।

স্থলবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য সামগ্রীসহ কয়েকটি বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত। দেশটির মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী ইত্যাদির মতো কিছু পণ্য ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে আসায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। শনিবার (১৭ মে) ভারতের সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিন বলেন, আমাদের বন্দর মূলত রপ্তানিমুখী বন্দর। ভারত সরকার যে পণ্যগুলো আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার মধ্যে চারটি পণ্য এ বন্দর দিয়ে বেশি রপ্তানি হতো। নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এখন আমাদের মালামাল রপ্তানি করতে পারব না। আমাদের ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার রপ্তানি আয় কমে গেছে। সরকারের কাছে দাবি, আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সমস্যাটি সমাধান করা হোক।  

এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।