মানিকগঞ্জ: জেলার সবচেয়ে বড় সতেজ সবজির পাইকারি আড়ত সাটুরিয়ার পল্লী হাটে সবজির দাম একেবারে কমে গেছে। খুচরা আর পাইকারি বাজারে দামের পার্থক্য অনেক।
সবজি চাষে খ্যাতি পাওয়া এ উপজেলার হাজার খানেক চাষি নিজেদের উৎপাদিত সবজি নিয়ে আড়তে এসে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ফলে তাদের মধ্যে বেশ হতাশা কাজ করছে। চাষি তার উৎপাদিত সবজির পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও দেখা নেই কাঙ্ক্ষিত পাইকারের আর এ কারণেই দরপতন হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া ও সদরের একাংশ থেকে প্রতিনিয়তই সবজি আসছে উপজেলার ধানকোড়ার কামতা এলাকার পল্লী হাটে। প্রতিদিন কাক ডাকা ভোর থেকে চাষি অটোরিকশা, ভ্যান, পিকআপ ভ্যান বা মাথায় করে সবজি নিয়ে হাজির হন এ পাইকারি বাজারে। এখানে সবজি বিকিনিকি হয় সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে কাঙ্ক্ষিত পাইকার না থাকায় অল্প দামে বিক্রি করতে হচ্ছে সবজি।
শুক্রবার (২৩ মে) সকালে ধুন্দুল প্রতি কেজি ১৫ থেকে ১৮ টাকা, চিচিঙ্গা প্রতি কেজি ১৫ থেকে ১৮ টাকা, ঝিঙে প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৫ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি আট থেকে ১২ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি পিস ১৫ থেকে ১৮ টাকা, চালকুমড়া প্রতি পিস আট থেকে ১২ টাকা, লাউ প্রতি পিস ১০ থেকে ১২ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা, করলা প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৫ টাকা এবং লালশাক, লাউশাক, কমলিশাক, দাড়াশাকসহ বিভিন্ন জাতের শাক প্রতি কেজি পাঁচ থেকে আট টাকা দরে পাইকারিভাবে বিক্রি হচ্ছে। সবজি বিক্রি না করলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় রয়েছে। ফলে পাইকার যে মূল্য বলছে, সেই দরেই সবজি বিক্রি করে দিচ্ছেন চাষিরা। তবে পাইকারি বাজারে সবজির মূল্য কম হলেও খুচরা বাজারে কিন্তু উল্টো চিত্র।
কামতা এলাকার ধুন্দুল চাষি ইমরান বলেন, সকালে এক খাঁচি ধুন্দুল নিয়ে পল্লী হাটে আসছি বিক্রি করতে। তবে আজ তুলনামূলক বাজার দর অন্য দিনের চেয়ে কম। প্রতি কেজি ধুন্দুল ১৫ টাকা কেজি করে বিক্রি করলাম অথচ গত দুদিন আগেও ২২/২৫ টাকা করে বিক্রি হয়েছে।
ফুকুরহাটির কুমড়া চাষি লতিফ মিয়া বলেন, ভোর বেলায় ভ্যানে করে তিন খাঁচি (এক খাঁচিতে শতাধিক কুমড়া থাকে) কুমড়া নিয়ে আড়তে আসছি। এখনও কেউ কোনো দরদাম করেনি। আশপাশে চাষিদের কাছ থেকে শুনতেছি, প্রতি পিস কুমড়া আট/১০ টাকা করে দরদাম হচ্ছে। আজ যে বাজারদর, তাতে করে লাভ তো দূরের কথা, পরিবহন খরচ ওঠানো কষ্ট হয়ে যাবে।
সাটুরিয়ার রাধানগর থেকে আসা সবজি চাষি মোয়াজ্জেম মিয়া বলেন, প্রথম কদিন ভালো দামে সবজি বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন সবজি উঠছে প্রচুর পরিমাণে। তার ওপর তেমন পাইকার নেই। শুক্রবার হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা তেমন একটা আসেনি। ফলে সবজির বাজারে দরপতন হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারে দরপতন হলেও চরা মূল্যে সবজি বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে।
কাওরান বাজার থেকে আসা পাইকার সুমন মিয়া বলেন, গত কয়েক তিন ধরে সবজির বাজার তেমন একটা ভালো যাচ্ছে না। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি হওয়ায় সবজির দাম কমেছে। এমনিতেই আজ বন্ধের দিন বলে পাইকারও কম, এর মধ্যে সবজি উঠেছে প্রচুর, তাই কম দামেই বাধ্য হয়ে সবজি বিক্রি করছেন চাষিরা।
পল্লী হাটের ইজারাদার অ্যাডভোকেট শরিফুল হক রতন বলেন, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি, পাইকার এসেছে কম, যার কারণে আজ সবজির বাজারে দরপতন হয়েছে। আশা করছি, আগামী দিন সবজির বাজার চাঙ্গা হবে।
এসআই