ঢাকা, সোমবার, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জুন ২০২৫, ০৫ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

ভারতের ঢলে ডুবছে সিলেট, ভারী বর্ষণে নগরে জলাবদ্ধতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৬, মে ৩১, ২০২৫
ভারতের ঢলে ডুবছে সিলেট, ভারী বর্ষণে নগরে জলাবদ্ধতা ভারী বর্ষণে সিলেট নগরে জলাবদ্ধতা। ছবি: বাংলানিউজ

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারো প্লাবিত হলো সিলেটের নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়েছে।

শনিবার (৩১ মে) সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এতে নগরজীবনে মানুষের নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞে প্রভাব পড়েছে।

এদিকে, ভারতের চেরাপুঞ্জিসহ বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। এর ফলে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের নিম্নাঞ্চল। গোয়াইনঘাট উপজেলার সদরের সঙ্গে অন্যান্য এলাকার যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, টানা বর্ষণে ও উজানের ঢলে উপজেলার পূর্ব ও মধ্য জাফলং, আলীরগাও, পশ্চিম আলীর গাও, পশ্চিম জাফলং, নন্দিরগাও, ডৌবাড়ি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে উপজেলার রাধানগর সড়ক ডুবে গেছে। এছাড়া উপজেলা সদরের চলাচলের সড়কেও পানি উঠেছে।

গোয়াইনঘাটের বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে জাফলংয়ের পিয়াইন নদী ও গোয়াইন নদী, সারি নদী, ধলাই ও কানাইঘাটের লোভাছড়া দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।  

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রতন কুমার অধিকারী বলেন,  ‘এখন পর্যন্ত আল্লাহর মেহেরবানিতে অবস্থা ভালো রয়েছে। সব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে যাচ্ছে। তবে রাধানগর থেকে গোয়াইনঘাট রাস্তা আধফিট পানিতে তলিয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ৫৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত শুকনো খাবার রয়েছে।

কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার বলেন, উপজেলার দুটি বড় নদী সুরমা ও লোভাছড়ার পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। তবে পাহাড়ি ঢলে প্রস্তুতি হিসেবে ৩৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। অবশ্য লোভাছড়ার আশপাশ এলাকার বেশিরভাগ লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে না গিয়ে তাদের স্বজনদের বাড়িতে চলে। ইতোমধ্যে ৩০০ প্যাকেট শুকনো খাবার প্রস্তুত রাখা হয়েছে, এনজিও ও রেড ক্রিসেন্টের দুর্যোগকালীন উদ্ধার তৎপরতার জন্য ইউনিয়নভিত্তিক ৩০/৪০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

যুবে গেছে গোয়াইনঘাট-রাধানগর সড়ক

পানি উন্নয়ন বোর্ডে সিলেটের তথ্যমতে, দুপুর ১২টা পর্যন্ত সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন ও সারি নদীসহ সবকটি নদ-নদীর পানি সমানতালে আরও বাড়ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, জেলার কানাইঘাটে সুরমার পানি বেড়ে হয়েছে ১১ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার, বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সে.মি.। সিলেটে পয়েন্টে ৮ দশমিক ৯৮ সে.মি , বিপৎসীমা ১০.৮ সে.মি.।

কুশিয়ারা জকিগঞ্জের অমলসিদে ১২ দশমিক ৯৩ সেন্টিমিটার, বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০ সে.মি.। শেওলা পয়েন্টে ১০ দশমিক১৮ সে.মি., বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ০৫ সে.মি.। ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৮ দশমিক ২৪ সে.মি., বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫ সে.মি.। শেরপুর পয়েন্টে ৭ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার, বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৫৫ সে.মি.।

এছাড়া পাহাড়ি নদী কানাইঘাটের লোভাছড়ার পানি বেড়ে হয়েছে ১২ দশমিক ০৩ সে.মি, বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৫৫ সে.মি.। জৈন্তাপুরের সারি নদী ১১ দশমিক ২৮ সে.মি., বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩৫ সে.মি.। জাফলং ডাউকি ১০ দশমিক ৫৮ সে.মি., বিপৎসীমা ১৩ সে.মি.। গোয়াইনঘাট সারি গোয়াইন ১১ দশমিক ২৮ সে.মি, বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮২ সে.মি এবং একই বিপৎসীমায় জেলার কোম্পানীগঞ্জের ইসলামপুর ধলাই নদীর পানি বেড়ে ৯ দশমিক ১০ সেন্টিমিটারে পৌঁছেছে।

এদিকে, দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে নগরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বাসা-বাড়িতেও পানি উঠেছে। টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে ডুবে গেছে। অনেক সড়কে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যানবাহন বন্ধ হয়ে পড়তে দেখা গেছে।

এনইউ/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।