ঢাকা, সোমবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

‘ঘরে একমুঠো চালও নেই, ঘর-বসতি সব গেছে বানের পানিতে’ 

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৪, জুলাই ১৩, ২০২৫
‘ঘরে একমুঠো চালও নেই, ঘর-বসতি সব গেছে বানের পানিতে’  ফেনীর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি বাড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

ফেনী: মাছুম ও মাহফুজ চৌধুরী। ফেনীর পরশুরামের পশ্চিম অলকার এই দুই ভাই যখন এলাকাবাসীর সঙ্গে কাজ করছিলেন নদীর বাঁধরক্ষায়, তখনো হয়তো তারা বুঝতেও পারেননি জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্তটা অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

বাঁধ মেরামতে ব্যর্থ হয়ে যখন বাড়িতে ফিরলেন, তখন দেখেন প্রবল স্রোতের ভেতরে আটকে আছেন তাদের মা, মাছুমের স্ত্রী ও মাত্র এক মাসের শিশু সন্তান।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আধঘণ্টার চেষ্টায় প্রিয়জনদের উদ্ধার করলেও হারিয়েছেন সংসারের শেষ চিহ্নটুকুও। নেই একটি পাতিল, নেই বিছানার চাদর, নেই একমুঠো চালও। সেই মুহূর্ত বলতে গিয়ে নিজের কান্না আটকে রাখতে পারেননি মাছুম।

বর্তমানে মাছুম ও তার পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন বড় ভাইয়ের বাড়িতে। তবে মানসিক যন্ত্রণার পাহাড়টা যেন প্রতিদিন আরও ভারী হয়ে উঠেছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের দাবি, ফেনীর এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একটি টেকসই সমাধান। যাতে আর কখনো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এমন ঘটনার সাক্ষী না হয়।

বন্যা চলে গেলেও ক্ষয়-ক্ষতির এমন চিত্র ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে। সব হারানো মানুষদের হাহাকারে ভারি হয়ে উঠছে চারপাশ।  

বানের পানির তোড়ে টিকতে না পেরে ফেনীর ফুলগাজীর শ্রীপুর গ্রামের দুই গৃহিণী ঘরদোর ফেলে আশ্রয় নেন নিরাপদে। তিনদিন পর আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরেছেন বাড়িতে। কিন্তু বাড়ি এসে দেখতে পান তিলে তিলে সাজানো সংসার তছনছ হয়েছে। কোনো রকমে ঘরটা টিকে থাকলেও টেকানো যায়নি গৃহস্থালির সামগ্রী। দিন পার করছেন অনাহারে-অর্ধাহারে।  

২০২৪ সালের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার পর এবারের বন্যায় দেড় শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। প্রাণ গেছে একজনের।  

কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এবারের বন্যায় দুই হাজার ৩৫০টি মৎস্য ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে প্রায় ১২ কোটি টাকার মাছ। এক হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমনের বীজতলা নিমজ্জিত হয়েছে।  

উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ায় প্রাণিসম্পদে ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষত দেখা গেছে সড়ক জনপদের সড়কে ও মানুষের ঘর-বসতিতে। তবে তা এখনও নিরূপণ হয়নি।

মৎস্য খাতের ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম।

স্থানীয়রা জানান, অনেক এলাকা থেকে পানি নামলেও দুর্ভোগ কমেনি। ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে ফসলি মাঠ-সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি এখনো প্রাথমিক হিসাব। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি আরও বেশি হতে পারে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সর্বশেষ হিসাব মতে, মুহুরী, কহুয়া, সিলোনিয়া নদীর ১২২ কিলোমিটার বাঁধের ৩৭টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। প্লাবিত হয় জেলার প্রায় সব কটি উপজেলার দেড় শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দী ছিল লক্ষাধিক মানুষ। তবে ঠিক কী পরিমাণ মানুষের ঘর ও রাস্তা-ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার হিসাব এখনও মেলেনি।  

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৫০টির বেশি আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছিলেন তারা। সেখানে আট হাজারের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। সেসব কেন্দ্রে শুকনো খাবার থেকে শুরু করে রান্না করা খাবার এবং চাল-ডালও দেওয়া হয়। পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ বাড়ি ফিরেছে।

এসএইচডি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।