ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ আশ্বিন ১৪৩২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

ধর্ষণের শিকার শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চিকিৎসক বরখাস্ত 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০০, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫
ধর্ষণের শিকার শিশুর অভিভাবকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, চিকিৎসক বরখাস্ত  ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আবুল কাশেমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

রাতে পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিকেল ৩টার দিকে ই-মেইলের মাধ্যমে বরখাস্তের আদেশটি পেয়েছেন।

আদেশ বলা হয়েছে, যেহেতু, ডা. মো. আবুল কাশেম (১২৪৫৮৭), আবাসিক মেডিকেল অফিসার, সদর হাসপাতাল, পঞ্চগড় কর্তৃক রোগীর আত্মীয়ের সঙ্গে অপেশাদারসুলভ আচরণ, অশ্লীল কথাবার্তা ও দুর্ব্যবহার করেন যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। যেহেতু, তার এহেন আচরণ সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি মোতাবেক 'অসদাচরণ' হিসেবে গণ্য।

সেহেতু, তার এহেন অপেশাদার আচরণের জন্য তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তাকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর ১২(১) বিধি মোতাবেক আদেশ জারির তারিখ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।

আদেশে আরও বলা হয়েছে, প্রচলিত নিয়ম মোতাবেক তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন সময়ে খোরপোশ ভাতাদি প্রাপ্য হবেন।

ডা. আবুল কাশেম গত বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার পাঁচ বছর বয়সী শিশুটির বাবার কাছ থেকে মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এরপর তিনি শিশুটির বাবাকে গালিগালাজ ও ক্ষিপ্ত হয়ে শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে দেন।  

এদিকে সেই ঘটনার একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ভিডিওটিতে দেখা যায়- চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার এক শিশুর বাবা-স্বজনের সঙ্গে তিনি অশালীন, অপমানজনক আচরণ করে নানা হুমকি দেন এবং আক্রমণাত্মক ভাষায় কটূক্তি করেন।

ঘটনার পরপরই সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান ডা. আবুল কাশেমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেন এবং তাকে আরএমও পদ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সরিয়ে দেন।

পঞ্চগড় সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ডা. আবুল কাশেম শোকজের জবাব দেন। এরপর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। এর পর মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে বলেও সিভিল সার্জন নিশ্চিত করেন।

এ বিষয়ে জানতে বরখাস্ত চিকিৎসক ডা. আবুল কাশেমের মোবাইল ফোনে একাধীকবার যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এর আগে গত রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দেবীগঞ্জ পৌরসভার একটি এলাকায় পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী কণিক রায় (১৭) নামে এক কিশোরের বিরুদ্ধে। এদিকে শিশুটিকে পরিবারের সদস্যরা প্রথমে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে শিশুটির বাবা বাদী হয়ে দেবীগঞ্জ থানায় ওই কিশোরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এর মাঝে হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এদিকে কাজের চাপে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ভুল স্বীকার করেন অভিযুক্ত চিকিৎসক। ওই চিকিৎসকের দাবি পরিবারটির কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।

দেবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোয়েল রানা বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্ত কিশোর রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পঞ্চগড় আদালতে আত্মসমর্পণ করেছে। এর পর আদালতের বিচারক তাকে যশোর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।