মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার একটি সমৃদ্ধ বন রাজকান্দি। এই বনের বাঁশের চাহিদা ব্যাপক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাঁশমহাল ইজারা না হওয়ায় চোরাকারবারিরা দিন-রাত বন থেকে বাঁশ চুরি করে পাচার করছে। অধিকাংশ বাঁশ পাচার হচ্ছে নদীপথে। তাই চলমান পরিস্থিতির প্রকৃত ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন বিভাগে কর্তব্যরত এক ব্যক্তি জানান, ইজারা দেওয়া হলে নিয়ম মেনে বাঁশ কাটা হয়। সেটি না হওয়ায় বনের কোথাও কোথাও চোরেরা বাঁশ কেটে প্রায় ফাঁকা করে ফেলেছে। আবার কোথাও পচে নষ্ট হচ্ছে। এটিকে ইস্যু করে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী পাচারকারীদের সঙ্গে মিলেমিশে বাঁশ কেটে নিচ্ছে, যেগুলো বিক্রির টাকা কোষাগারে জমা পড়ছে না।
জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে বড় রেঞ্জ হচ্ছে রাজকান্দি। এই বন রেঞ্জের অধীনে কুরমা, আদমপুর ও কামারছড়া বনবিট। বিটগুলোর মধ্যে আদমপুর ও কুরমা বনবিটে রয়েছে বাঁশমহাল। এসব বিটের মধ্যে রয়েছে লাউয়াছড়া, চম্পারায়, বাঘাছড়া, ডালুয়াছড়া, কুরমাছড়া, সোনারাইছড়া, সুনছড়া বাঁশমহাল। এসব মহালে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির বিপুল সংখ্যক বাঁশ রয়েছে। প্রতিবছর মহালগুলো ইজারা দিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করত। তবে গত এক দশক ধরে মহাল ইজারা হচ্ছে না। দর কমানো এবং বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিতে ইজারাদাররা সিন্ডিকেট করে মহাল নিলাম নিচ্ছেন না।
এদিকে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সিন্ডিকেটের লক্ষ্য পূরণে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন, যেহেতু মহালে বাঁশের দাম নির্ধারণের ব্যাপারে তাদের ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া মহাল থেকে বাঁশ পাচারের সঙ্গে এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত পিকআপ, ট্রাক ও ঠেলাগাড়িযোগে বাঁশ পাচারের ঘটনা ঘটছে। বাঁশমহালের ইজারার ব্যবস্থা না করা হলেও পাচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা ঠিকই যুক্ত আছেন। এতে বাঁশের ব্যবসা চলমান থাকলেও টাকা কোষাগারে না গিয়ে ঢুকছে সিন্ডিকেটের পকেটে।
আদমপুর ও কুরমা বনবিট এলাকায় বসবাসরত কয়েক বাসিন্দা নিজেদের নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, আগে যেভাবে মহাল থেকে বাঁশ চুরি হয়েছে, তেমনি এখনও হচ্ছে। সম্প্রতি ট্রাক, পিকআপ ও নদীপথে মহাল থেকে বাঁশ পাচার হচ্ছে। স্থানীয় রেঞ্জ কর্মকর্তা, বনবিট কর্মকর্তা ও অফিসের যোগসাজশে বাঁশ পাচার হয়। কেউ অভিযোগ জানালে বন বিভাগ এগুলো বাড়িঘরের বাঁশ বলে চালিয়ে দেয়।
বন বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রাজকান্দি রেঞ্জের সাতটি বাঁশমহালের বেশির ভাগ বাঁশ কেটে নেওয়া হয়েছে। বাঁশের পরিত্যক্ত অংশ রেখে মূল্যবান অংশ বিক্রির জন্য নেওয়া হয়েছে। পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এক সময় মৌলভীবাজারের পাহাড়ি এলাকার বাঁশমহাল বৈধভাবে ইজারা দেওয়া হতো। চলতি বছর একটি মহালও কেউ ইজারা নেয়নি। ইজারা বন্ধ, কিন্তু বাঁশ কাটা চলমান।
ইজারাদারদের কয়েকজন জানান, একটি বাঁশ ২০ টাকায় বিক্রি করেন। অথচ দরপত্রে দেখা যায় ক্রয়মূল্য বিক্রির দামের চেয়ে বেশি। এজন্য কেউ বাঁশমহাল ইজারা নিতে চান না।
মৌলভীবাজার বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক নাজমুল আলম বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে বাঁশমহালগুলো ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না। বাঁশমহালে কী পরিমাণ বাঁশ আছে, তা পরিমাপ করছে ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগ।
বিবিবি/এএটি