জামালপুর: ২৬৩.৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সরিষাবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত জামালপুর-৪ আসন।
এক সময়কার পাটের দ্বিতীয় ড্যান্ডি হিসেবে পরিচিত এ উপজেলা গত ১৬-১৭ বছরে হারিয়েছে তার বেশির ভাগ ঐতিহ্য।
বিগত সংসদ সদস্যদের নানা টানা পোড়েনে জেলার মধ্যে উন্নয়নের ছোঁয়া কিছুটা কম লেগেছে যমুনা বিধৌত এ অঞ্চলে। আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ক্ষমতার সময় পুরো জেলায় ৬০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হলেও এ আসনে কাজ হয়েছে নামমাত্র।
উন্নয়ন না হলেও এ আসনের সংসদ সদস্যদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিলো সব সময়।
দেশের বৃহত্তর শিল্প প্রতিষ্ঠান পাটকল বন্ধসহ সার কারখানা থাকার পরও এখানকার মানুষ ভুগছেন কর্মসংস্থান সংকটে। এছাড়া অতীতের সংসদ সদস্যদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ না হওয়ায় ভোটাররা উন্নয়ন থেকে হয়েছেন বঞ্চিত।
উন্নয়ন ও সমস্যার হিসেবে গত ১৬ বছর কি পেয়েছেন সরিষাবাড়ির বাসিন্দারা- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। যেখানে উঠে এসেছে প্রার্থীদের কাছে ভোটাদের প্রত্যাশা, বর্তমান সরিষাবাড়ীর চিত্র ও সম্ভবনার পাশাপাশি সমস্যাগুলোও।
বর্তমানে কেমন আছে সরিষবাড়ি:
১৮৮টি গ্রামের এ উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১ হাজার ৪৫। একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত দেশের ১৪১তম এ আসনটি। কৃষি (ধান, সরিষা, পাট) এবং অতীতে গড়ে ওঠা পাটকল ও সার কারখানাগুলো এখানকার অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল। কিন্তু চলমান বাস্তবতা হলো যমুনা সার কারখানা বন্ধ হয়ে প্রায় ২০ মাস ধরে ক্ষতি মেটাতে পারছে না। রেল যোগাযোগ ও রেল স্টেশন নানা সমস্যায় জর্জরিত। উপজেলার প্রধান সড়কের অবস্থা খারাপ।
অনেক রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নদীভাঙন এবং নদীতীরে অবস্থা জরাজীর্ণ। জমি ও ফসল বিনষ্ট হচ্ছে ভাঙনে। বেকারত্ব, যোগাযোগ বিঘ্ন, অবকাঠামো ঘাটতি সবই রয়েছে এ উপজেলায়।
গত ১৬ বছরে কী পেলেন এ আসনের ভোটাররা:
বড় কোনো উন্নয়ন না হলেও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে পৌরসভার ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু কাজ হয়েছে। এর মধ্যে দিগপাইত থেকে তারাকান্দি পর্যন্ত একটি দুই লেনের হাইওয়ে সড়ক তৈরি হচ্ছে।
শিক্ষার্থী ও নতুন ভোটার মাহমুদুল হাসান বিবেক বাংলানিউজকে বলেন, গত ১৬ বছর তো মানুষ ভোট দিতে পারেননি। আমি তখন ভোটার না হলেও বিষয়গুলো দেখেছি। এর মধ্যে গত ২০০৮ সালের নির্বাচনের কথা তো মনে আছে। এছাড়া ১৪, ১৮ ও ২৩ সালে নির্বাচন একদমই পাতানো নির্বাচন ছিলো। এটা সবাই জানে। এখান থেকে যারা সংসদ সদস্য হতেন, তাদের কাছে আর কি উন্নয়ন চাইবো আমরা। তারা তো নিজেদের আখের গুছিয়েছেন।
আগামী সংসদের নতুন এমপির কাছে প্রত্যাশা:
সরিষাবাড়িতে পড়ে থাকা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানিয়েছেন ভোটাররা।
সরিষাবাড়ি পৌর এলাকার বাসিন্দা সিয়াম আহম্মেদ বাংলানিউজকে বলেন, নির্বাচন আসার আগে প্রার্থীরা অনেকে অনেক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখালেও আমরা বাস্তবে কি দেখি? নিবার্চন শেষে আমাদের সাধারণ ভোটারদের কেউ চেনেন না। কেউ আমারদের কথা মনে করেন না। সবাই সবার আখের গোছান।
আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের সরিষাবাড়ী দেশের মানুষ এক নামে চিনতে পারতো এ পাটকলগুলোর জন্য। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে ধীরে ধীরে কারখানাগুলো একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আমরা আমাদের নতুন জনপ্রতিনিধির কাছে এসব কারখানা চালু করার দাবি জানাবো। যেই নির্বাচিত হবেন, এখানে যেনো কারখানাগুলো চালুর ব্যবস্থা করে দেন। এছাড়া একটা বৃহত্তর সার কারখানা রয়েছে, সেটাও বন্ধ থাকে, এটিও যেনো চালু থাকে।
সচেতন ব্যক্তি, কবি ও প্রাবন্ধিক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর বলেন, জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যমুনা, ঝিনাই, সুবর্ণখালি বিধৌত উপজেলা সরিষাবাড়ী এক সময় শিল্পনগরী হিসেবে পরিচিত ছিল। ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে পাটকলগুলো, রাজনৈতিক সমন্বয়হীনতা ও সদিচ্ছার অভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানের জমি বিক্রি হচ্ছে আবাসিক প্লট আকারে। বেকার হয়ে গেছে হাজার হাজার শ্রমিক। দেশের গর্ব যমুনা সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ দীর্ঘদিন ধরে। শক্তিশালী সিন্ডিকেটের থাবায় এখন এটিও পুরোপুরি বন্ধের পথে।
তিনি মনে করেন, আগামী দিনে যিনি এমপি নির্বাচিত হবেন, হারানো শিল্প-ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনাই হওয়া উচিত তার প্রধান লক্ষ্য। এছাড়া মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন তার কাছে কাম্য। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ইতিবাচক রাজনীতির বিকাশ, বেকার সমস্যার নিরসন ও অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে। চরাঞ্চলের মানুষদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য নদীর তীরবর্তী এলাকার জন্য যুগোপযোগী পরিকল্পনা করতে হবে।
যারা ছিলেন এ আসনের সংসদ সদস্য:
১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে আব্দুস সালাম তালুকদার, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মো. নুরুল ইসলাম, ২০০১ সালে বিএনপি থেকে আনোয়ারুল কবির তালুকদার, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে ডা. মুরাদ হাসান, ২০১৪ সালে জাতীয় পার্টি মামুনুর রশিদ, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে মুরাদ হাসান ও সবশেষ ২০২৪ সালে স্বতন্ত্র হয়ে আবদুর রশিদ সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন।
আগামী ত্রয়োদশ নির্বাচনে সম্ভব্য প্রার্থী যারা:
জামালপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম, প্রয়াত সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম তালুকদারের মেয়ে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সালিমা বেগম আরণী ও
জামালপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুল আওয়াল আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন।
এছাড়া সরিষাবাড়ি উপজেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর সিদ্দিকী, এনসিপি থেকে প্রার্থিতা প্রকাশ করেছেন ড. মোশারফ হোসেন।
এরই মধ্যে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়েতসহ বিভিন্ন দলের নেতারা ভোটারদের কাছে যেতে শুরু করেছেন।
এসআই