ঢাকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আক্রমণ চালায় নিরস্ত্র বাঙালির উপর। ওই আক্রমণের বিরুদ্ধে সেদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের তৎকালীন বাঙালি সদস্যরা।
এরপর সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ সদস্যরা একে একে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে থাকে।
জীবন বাজি রেখেই দেশ ও দেশের মানুষের জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিল তৎকালীন বাঙালি পুলিশ সদস্যরা। মুক্তিযুদ্ধের এই ৯ মাসে পুলিশের ৭৫১ জন্য সদস্য শহীদ হন। আহত হন অনেকেই।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালোরাতে পাক-হানাদার বাহিনীর সঙ্গে লড়াইয়ের সময় সারাদেশে ২৪ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন। এর মধ্যে ২২ জন রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে, একজন সিলেট জেলায় এবং একজন রাজশাহীতে শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের তালিকা
ঢাকা জেলা: কং/৩৫৫৮ আবুল কাশেম, কং/২৩১৪ খলিল মিয়া, কং/৪৩৪০ শেখ আহামদ মিয়া, কং/২৮০৩ নায়েক আলী মিয়া, কং/ ১৫৭৫ বীরেন্দ্র কুমার রড়ুয়া, কং/৫০৬৬ সিরাজুল ইসলাম, কং/ ৫৩৯৯ হাছেন আলী খান, হাবিলদার/১১৫২ জারদাদ খান, কং/১৯৯৭ তোবারক আলী, কং/৪৮২ বিমলেন্দু নাগ, কং/৩২৪৪ আব্দুল আজিজ মিয়া, কং/৫০২৩ আব্দুর রাজ্জাক, কং/৭৬ আবদুস ছালাম, কং/১৩৪ মোফাজ্জল হোসেন, কং/১২১১ হাবিবুর রহমান, কং/১৬২ জাহাঙ্গীর আলম, কং/৯২৭ হাসেম আলী, কং/৯৯৮আ: ছামাদ, কং/২১০৬ মোজাম্মেল হক, কং/২১১৩ তোফায়েল আহমেদ, সিলেট জেলায়: কং/১৩৮৪ সৈয়দ আহমদ এবং রাজশাহী জেলায়: কং/৬৩৯ দয়াবক্স মজুমদার।
এর পরদিন অর্থাৎ, ২৬ মার্চ ৮৯ জন্য পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল হাছান বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমণ চালায়। আর সেই আক্রমণে প্রতিরোধে গড়ে তোলে তৎকালীন পুলিশের বাঙালি সদস্যরা। তারা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা।
তিনি বলেন, এই সশস্ত্র প্রতিরোধটিই বাঙালিদের কাছে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌঁছে দেয়। শুধু তাই নয়, এরপর পুলিশ সদস্যরা ৯ মাসজুড়ে দেশব্যাপী যুদ্ধ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়েও সহায়তা করেছে তারা। বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের প্রশিক্ষণও দিয়েছে তারা।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলোদেশ পুলিশের অবদান অনেক বেশি। এ কারণে সরকার ২০১১ সাল থেকে পুলিশ সদস্যদের জন্য মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক চালু করেন।
‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে শহীদ হন মুন্সী কবির উদ্দিন আহমেদ। তিনি তৎকালীন কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ছিলেন। ’
‘২৬ মার্চ ভোরে পাকিস্তানিরা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশ করে। তখন কুমিল্লা জেলা পুলিশ প্রতিরোধ করলে সেখানে লড়াইয়ে আমার বাবা শহীদ হন। ’ –বলেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যের সন্তান কামাল উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন,‘আমার বাবা ছিলেন একজন নির্র্ভীক পুলিশ অফিসার। তিনি অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান ছিলেন। বাবা আমাদের বলতেন দেশকে ভালোবাস, দেশের মাটিকে ভালোবাস। আজ আমার বাবা নেই, কিন্তু খুব গর্ব হয়, যে আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
তিনি ক্ষোভ নিয়ে বললেন, ২০১৪ সালে আমার বাবাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। গেজেটে তার নাম এখনও ওঠেনি। আমরা দরখাস্ত করার পরও মন্ত্রণালয়ে ওই কাগজ আটকে আছে। এ বিষয় মন্ত্রণালয়ে অনেক ঘোরাঘুরি করেও কোনো কিছুই হচ্ছে না।
ঢাকা: পুলিশের ঢাকা জেলার ১’শ ৯০ জন সদস্য শহীদ হন। এর মধ্যে ঢাকা জেলার রিজার্ভ পুলিশের ১’শ ৪০ জন শহীদ সদস্য রয়েছেন।
ফরিদপুর: মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে ফরিদপুরের ৪ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
ময়মনসিংহ: শুধু ময়মনসিংহ জেলায় ২৩ জন্য পুলিশ সদস্য শহীদ হন। ।
টাঙ্গাইল: এই জেলায় ৬ জন পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
ঢাকা জেলার এআইজি টেলিকম অফিস: ঢাকা জেলার এআইজি টেলিকম অফিসে ৭ জন শহী হন।
ঢাকা জেলার সিআইডি: ২ জন।
ঢাকার দূর্নীতি দমন সংস্থা: ৩ জন।
চট্টগ্রাম : ৭১ জন।
পার্ব্যত চট্টগ্রাম জেলা: এই জেলায় ২৩ জন শহীদ হন।
কুমিল্লা: ২৫ জন।
নোয়াখালী : ১৯৭১ সালে এই জেলায় মোট ৮ জন্য পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
সিলেট: ১৩ জন।
রাজশাহী: ৬০ জন।
রংপুর: ২৩ জন।
বগুড়া: ২১ জন।
পাবনা: ৩০ জন।
দিনাজপুর: ২১ জন।
সারদা পুলিশ একাডেমি: সারদায় ৩৯ জন।
খুলনা: খুলনায় ৪ জন।
যশোর: ৭০ জন শহীদ হন।
কুষ্টিয়া: ৩৩ জন।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ: ১৪ জন্য।
পটুয়াখালী: এই জেলায় ৬ পুলিশ সদস্য শহীদ হন।
চট্টগ্রাম জেলার রেলওয়ে পুলিশ: ৪৩ জনের নিখোঁজের তালিকা প্রকাশ করেছে।
**পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
এসজেএ/এএ