ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

কর্মকর্তাদের মুনাফার ভাগ দেবে না ডিএসই!

শেখ নাসির হোসেন ও সাঈদ শিপন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৪
কর্মকর্তাদের মুনাফার ভাগ দেবে না ডিএসই!

ঢাকা: শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের আইন মানতে চাইছে না দেশের প্রধান শেয়ারবাজর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ। অইন অনুযায়ী কোম্পানির মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে দিতে হবে।

কিন্তু ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ কর্মকর্তাদের বর্তমান বেতন কাঠামোতে এটি কার্যকর করতে রাজী নয়। এজন্য কর্মকর্তাদের বেতন কাঠানো পুর্নগঠনের অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করতে চাইছে ডিএসই পর্ষদ।
 
শ্রম আইনের ২৩৪(খ) ধারায় বলা হয়েছে, কোম্পানির মালিক প্রত্যেক বছর শেষ হওয়ার অন্যূন নয় মাসের মধ্যে, পূর্ববর্তী বছরের নেট মুনাফার পাঁচ শতাংশ অর্থ ৮০:১০:১০ হারে যথাক্রমে অংশগ্রহণ তহবিল, কল্যাণ তহবিল এবং বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন, ২০০৬ এর ধারা ১৪ এর অধীন স্থাপিত শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে দেবে।
 
আর ২৩৪(ক) ধারায় বলা হয়েছে আইন কার্যকর হওয়ার এক মাসের মধ্যে কোম্পানি শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও একটি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল স্থাপন করবে। ২০০৬ সালের শ্রম আইনটি সংশোধন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয় ২০১৩ সালের ২২ জুলাই। সে হিসেবে ১১ মাস আগেই শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন সম্পূর্ণ হওযার কথা।
 
আইনে এমন বাধ্যবাধকতা থাকলেও প্রশাসন থেকে মালিকানা পৃথক (ডিমিউচ্যুয়ালাইজড) হওয়ার পর প্রথম বছর শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে মুনাফার টাকা দিতে রাজী নয় ডিএসইর পরিচালকরা। ফলে কল্যাণ তহবিল গঠনের নির্ধারিত সময় থেকে অতিরিক্ত ১১ মাস পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয়নি।
 
এ বিষয়ে পর্ষদের দাবি বর্তমান বেতন কাঠামোতে ডিএসইর কর্মকর্তারা প্রকৃত বেতনের চেয়ে অনেক বেশি পায়। এ কাঠানো পুনঃনির্ধারণ করা হবে। এরপর শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে মুনাফার ৫ শতাংশ দেওয়া হবে।
 
ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ‘শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে মুনাফার যে অংশ দেওয়ার বিধান রয়েছে তা কার্যকার করা হবে। তবে ডিএসইর কর্মকর্তারা বর্তমানে অনেক বেশি বেতন পান। এ বেতন কাঠামো পুনঃনির্ধারণ করা হবে। তার পর ৫ শতাংশের বিধানটি কার্যকর করা হবে। বেতন কাঠামো কীভাবে পুনঃনির্ধারণ করা হবে সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ’
 
এদিকে ডিএসই এবং দেশের অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) বেতন কাঠামো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমানে ডিএসইর ৩৬৮ জন কর্মকর্তা বেতন পান ২১ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮৯ টাকা। আর সিএসইর ৯৬ জন কর্মকর্তা পান ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৮ টাকা।
অথচ ডিএসইর একজন কর্মকর্তা ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার লেনদেনের লোড বহন করেন। এর বিপরীতে সিএসইর একজন কর্মকর্তা বহন করেন মাত্র ৪১ লাখ টাকার লোড। আর মোট লেনদেনের হিসেবে ডিএসইর একজন কর্মকর্তা সিএসইর ৩ দশমিক ৩৪ জনের সমান কাজ করেন।  
 
এদিকে ডিএসইর একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ডিএসইর কয়েকটি বোর্ড সভায় এ বিষয়ে প্রস্তাব করা হলে তাতে মৌখিক ভেটো দেন ডিএসই সদস্য পরিচালকরা। তাদের দাবি ডিএসইর আরও কিছু সম্পদ হওয়ার পর মুনাফার অংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে দেওয়া হবে। তাছাড়া ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হওয়ার পর প্রথম বছরে কী পরিমাণ মুনাফা হবে সেটাও স্পষ্ট নয়। কারণ ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হওয়ার আগের ৬ মাস প্রথম অর্থবছরে গণনা করা হচ্ছে। সে হিসেবে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা অর্জিত না হলে হিসাবটা বেশ জটিল হয়ে পড়বে ডিএসই পর্ষদের জন্য।
 
সূত্রটি জানিয়েছে, ডিমিউচ্যুয়ালাইজড পরবর্তী প্রথম বছরেই কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ পেতে আগ্রহী ডিএসইর স্টেক হোল্ডাররা। সে হিসেবে মোট ১৮০ কোটি টাকা মুনাফা হতে হবে প্রতিষ্ঠানটির। যা অনেকটা অসম্ভব বলে মনে করছেন ডিএসইর কর্মকর্তারা।
 
ডিএসই সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রথম বছরের ৬ মাস ডিমিউচ্যুয়ালাইজড পূর্ববর্তী সময়ে হওয়ায় মুনাফার পরিমাণ অনেক কম হবে। সে হিসাবে প্রথম বছরে কাঙ্ক্ষিত লভ্যাংশ নাও পেতে পারেন ডিএসইর স্টেক হোল্ডাররা। প্রথম বছর ডিএসইর মুনাফার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১৩০ কোটি টাকার কিছুটা বেশি। সে হিসাবে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ নিতে ঘাটতি থাকবে প্রায় ৬০-৭০ কোটি টাকা।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী প্রথম বছর থেকেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানের মুনাফার ৫ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাবেন। ডিমিউচ্যুয়ালাইজড ডিএসই প্রথম বছর থেকেই লাভজনক। কিন্তু প্রথম বছর থেকে ডিএসইর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুনাফার ভাগ দিতে চাচ্ছেন না পরিচালকরা। ’
 
তিনি আরও বলেন, ডিএসইর পরিচালকরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুনাফার ভাগ দিতে না চাইলেও তারা ঠিক মতো লভ্যাংশ নেওয়ার পক্ষে। যেখানে স্টেক হোল্ডারদের ঠিক মতো লভ্যাংশ দেওয়া অনিশ্চিত সেখানে পরিচালকরা মুনাফার ৫ শতাংশ হারাতে রাজী নয়। তাই তারা এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করছেন। তবে পরিচালকরা চূড়ান্তভাবে বিরোধীতা করলে আমরা আইনের আশ্রয় নেব। এর আগে গ্রামীণফোনের মুনাফা দেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিজয়ী হয়েছিল।
 
এদিকে শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের আইন না মানলেও আইনটি পরিপালনের জন্য বিভিন্ন কোম্পানিকে চিঠি দিচ্ছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।
 
ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) স্বপন কুমার বালা বলেন, ব্যাংকসহ অন্য কোম্পানিগুলো মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে রাখার বিধানটি এখনও পরিপালন করেনি। তবে যেহেতু আইন আছে সেহেতু অবশ্যই পরিপালন করা হবে। এ বিধান পরিপালনে কে ভেটো দিল তা বড় বিষয় না। বিষয় হলো তা কীভাবে পরিপালন করা হবে। সেটিই পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।