ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ওয়েস্টার্ন মেরিনের মুনাফায় ধস, ঝুঁকিতে আইপিও

শেখ নাসির হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৪
ওয়েস্টার্ন মেরিনের মুনাফায় ধস, ঝুঁকিতে আইপিও

ঢাকা: এক বছরের ব্যবধানে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড কোম্পানির মুনাফায় বড় ধরনের ধস নেমেছে। এ কারণে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য কোম্পানিটির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদরা।



একই সঙ্গে কোম্পানির ভবিষ্যৎ নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
 
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আবেদন করার সময় আর্থিক প্রতিবেদনে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) দেখানো হয় ৫ দশমিক ২৭ টাকা। আর আবেদন করার পর পরবর্তী প্রতিবেদনে কোম্পানির ইপিএস কমে দাঁড়ায় ২ দশমিক ০৯ টাকা। ফলে বছর ব্যবধানে কোম্পানির ইপিএস কমে ৩ দশমিক ১৮ টাকা।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাহাড় সমান ঋণ করে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ফলে এ ঋণের দায় বিনিয়োগকারীদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতেই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির ফন্দিফিকির করে কোম্পানিটি। এরই অংশ হিসেবে আয় বেশি দেখিয়ে আইপিওতে আসার আবেদন করা হয়।
 
সম্প্রতি কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ইতিমধ্যে কোম্পানিটি বাজার থেকে ১৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলনের কাজ শুরু করেছে।
 
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আ হ ম আতাউল্লাহ নাঈম বাংলানিউজকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা অনেক আশা নিয়ে একটি কোম্পানির আইপিও শেয়ার ক্রয় করেন। এমনকি তারা ভাবেন তালিকাভুক্তির প্রথম বছরে অন্তত কোম্পানি তাদের ঠকাবে না। কিন্তু অধিকাংশ কোম্পানি তালিকাভুক্তির অনুমোদন পাওয়ার পরেই মুনাফা কমে যায়। ফলে ভবিষ্যতে কোম্পানিটি কেমন করবে সেটা নিয়েও আমাদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়।
 
তিনি আরও বলেন, এক বছরে যেহেতু কোম্পানির ইপিএস ৩ টাকার বেশি কমে গেছে সেহেতু ভাবতে হবে এ কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে আসার কোনো যোগ্যতা ছিল না। কিন্তু উপরের মহলের চাপে বা আর্থিক প্রতিবেদনে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে তারা তালিকাভুক্ত হয়ে এখন বিনিয়োগকারীদের ঠকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে মাত্র।
 
তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে মূলত বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে কোম্পানির ব্যবসায় ধস নামায় মুনাফায় তার প্রভাব পড়েছে। যা এখন স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে সামনের অর্থবছরে কোম্পানির ভালো মুনাফা দেখানো সম্ভব হবে।
 
এ বিষয়ে ওয়েস্টার্ন ফিশার্স শিপইয়ার্ড কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এইচএম আশরাফউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব মন্দার কারণে শেষ বছরে কোম্পানির মুনাফা ও ইপিএস কমেছিল। বর্তমানে যা স্বাভাবিক হয়েছে। আশা করছি ভবিষ্যতে কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করবে। কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ার প্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্যও (এনএভি) বাড়বে।
 
তিনি আরও বলেন, আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহিত অর্থ থেকে ১৩০ কোটি টাকা দায় পরিশোধ করা হলে কোম্পানির দায় কমে যাবে। ফলে সুদের পরিমাণও কমবে। সুতরাং এই সুদের অর্থ বিনিয়োগকারীরাই পাবেন।
 
৩১ জুন, ২০১৩ সমাপ্ত অর্থবছরে এ কোম্পানির মোট দায় রয়েছে ৫১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থায়ী দায় ৪১৯ কোটি ৪৩ লাখ, চলতি দায় ৭৪ কোটি ৩ লাখ এবং স্বল্প মেয়াদী দায় ২৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে মোট ১৩০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হলে কোম্পানির দায়ের খাতায় আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা থাকবে। যার ঘানি বিনিয়োগকারীদেরও বহন করতে হবে।
 
এদিকে, গত দুই অর্থবছরে কোম্পানির মুনাফা কমে যাওয়ায় কাঙ্খিত মুনাফা না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিনিয়োগকারীরা। গত ৩০ জুন ২০১৩ সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট মুনাফা হয়েছিল ৬১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২ দশমিক ০৯ টাকা।
 
আগের বছর (৩০ জুন ২০১২ সমাপ্ত) কোম্পানিটির মুনাফা হয়েছিল ৮২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ও ইপিএস দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ২৭ টাকা।
 
সুতরাং এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানির মুনাফা কমেছে ২১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং ইপিএস কমেছে ৩ দশমিক ১৮ টাকা। আর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ওয়েস্টার্ন মেরিনের শেয়ারে বিনিয়োগ অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
 
এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষক আবু আহমদ বলেন, বিএসইসি আইপিও’র অর্থ ব্যয় নিয়ে আলাদাভাবে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করেনি। ফলে কোম্পানিগুলো বিনিয়োগকারীদের টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করছে। ফলে তা বিনিয়োগকারীদের কোনো উপকারে আসছে না।
 
তিনি আরও বলেন, আইপিও’র সিংহভাগ অর্থ দিয়ে কোম্পানিগুলোর সম্প্রসারণ করার কথা। যার একটি অংশ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারে। তবে সিংহভাগ অর্থ ঋণ পরিশোধ বিনিয়োগকারীদের জন্য সুফল বয়ে আনে না। তাই আইপিও’র মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ‍কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য এ নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি। বিএসইসিকে এ বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।