ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ডিএসইতে নতুন সফটওয়্যার: উইন্ডোজ-৮ না থাকাই লেনদেন কমার কারণ

নজরুল ইসলাম, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
ডিএসইতে নতুন সফটওয়্যার: উইন্ডোজ-৮ না থাকাই লেনদেন কমার কারণ

ঢাকা: দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ডিসেম্বরে নতুন সফটওয়্যার চালু হওয়ার পর থেকে লেনদেনে বেহাল অবস্থা চলছে। লেনদেনে মন্দার জন্য ডিএসইর সদস্যভুক্ত ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে ওই সফটওয়্যার অপারেটিং করার জন্য উইন্ডোজ-৮ এর লাইসেন্স কপি কম্পিউটারে ইনস্টল না করাকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।



একইসঙ্গে অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ দক্ষ অনুমোদিত প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে কম বেতনে নতুন প্রতিনিধি নিয়োগ করছে। যার কারণে এ সফটওয়্যার অপারেটিং করার জন্য যে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন তা নতুন প্রতিনিধিদের না থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী কম লেনদেন করছেন।  

ডিএসইতে গত ১১ ডিসেম্বর নতুন স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থার (অটোমেশন ট্রেডিং সিস্টেম) উদ্বোধন করা হয়। ওইদিন এর আগের সাড়ে ১৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়। ওইদিন ডিএসইতে লেনদেন হয় মোট ১৩৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

বাজার বিশ্লেষনে দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে ডিএসইতে নতুন সফটওয়্যার চালু হওয়ার পর লেনদেন ৫০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। সর্বশেষ গত বুধবার ডিএসইতে লেনদেন হয় ৩৯০ কোটি টাকা। অথচ গত অক্টোবরেও হাজার কোটি টাকা লেনদেন হতো।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিএসইর নতুন সফটওয়্যারটি অপারেটিং করতে প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউজকে উইন্ডোজ-৮ এর লাইসেন্স কপি সংযোজন করতে বলা হয়। একইসঙ্গে জানানো হয় এ সফটওয়্যারটি কোনো কম্পিউটারে যদি না ইনস্টল করা হয় তবে ডিএসইর স্বয়ংক্রিয় লেনদেন ব্যবস্থার ডিএসই ডিএসই-ফ্লেক্সটিপি নতুন সফটওয়্যার কাজ করবে না।

তবে ডিএসইর এ নির্দেশনা থাকার পরও অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ উইন্ডোজ-৮ এর লাইসেন্স কপি সংযোজন করেনি। তাই ডিএসইর নতুন সফটওয়্যারটি অপারেটিং করতে পারছেন না অনুমোদিত প্রতিনিধিরা।

একই সঙ্গে অদক্ষ ট্রেডাররা সফটওয়্যারটির অনেক কমান্ড এখনও বুঝতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে সিক্সথ সেন্স স্টক মার্কেট রিচার্জ সেন্টারের টেকনিক্যাল এনালিস্ট মাসুদ রানা বাংলানিউজকে বলেন, অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজের কম্পিউটারে উইন্ডোজ-৮ এর লাইসেন্স কপি নেই। তাই ডিএসইর নতুন সফটওয়্যারটি ঠিক মতো কাজ করছে না। কারণ ডিএসই-ফ্লেক্সটিপি নতুন সফটওয়্যার একটি উন্নত মানের সফটওয়্যার। তাই এটা অপারেটিং করতে হলে উইন্ডোজ-৮ এর লাইসেন্স কপির বিকল্প নেই।

তিনি জানান, অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ তাদের ব্যয় কমাতে নতুন অনুমোদিত প্রতিনিধি নিয়োগ করছেন। যার কারণে তারা বাজারে এসেই নতুন একটি লেনদেন পদ্ধতির মুখোমুখি হচ্ছেন। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের। আর ট্রেডাররা সফটওয়্যারটির কমান্ড সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা না নিতে পারলে এখনই বিনিয়োগে ফিরতে চান না তারা।  

লেনদেন কমার জন্য ব্রোকারেজ হাউজের অনুমোদিত প্রতিনিধিদের জ্ঞানের অভাব থাকার কথা স্বীকার করে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ডিএসইর নতুন সফটওয়্যারটি চালু করার জন্য উইন্ডোজ-৮ এর লাইসেন্স কপি সংযোজন করতে বলা হয়েছে।
এমনকি আমরা ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে দুটি করে সফটওয়্যার দিয়েছি। তবে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর শাখা অফিসে এ সফটওয়্যার সংযোজন না করলে তাতে তো সমস্যা হবেই।

তিনি বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর অনুমোদিত প্রতিনিধিদের জ্ঞানের অভাব লেনদেন কমছে ঠিকই। তবে বছরের শেষের দিকে লেনদেনের পরিমাণ এভাবেই কমে যায়। এছাড়া দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিনিয়োগের বিষয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নজরদারিও লেনদেন কমার কারণ।

শাকিল রিজভী বলেন, ব্রোকারেজ হাউজের অনুমোদিত প্রতিনিধিদের প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষা নেওয়া যায় কি-না তার একটি প্রস্তাব ডিএসইতে দেওয়া হবে। কারণ অনুমোদিত প্রতিনিধিরা যদি ডিএসইতে ঠিক মতো প্রশিক্ষণ নিতো তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। তাদেরও এ সফটওয়্যারটি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা নিয়ে দক্ষ হতে হবে।  

শিগগিরই লেনদেন ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

গত ডিসেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড নতুন অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডিএসই-ফ্লেক্সটিপি সফটওয়্যার চালু করে। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম চালুর জন্য গত ২১ মার্চে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লি., নাসডাক ওএমএক্স ও ফেক্সট্রেড সিস্টেমস পিটিই লিমিটেড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করে।

পরবর্তীতে গত বছরের মার্চ থেকে প্রতিষ্ঠান দুটি নতুন অটোমেটেড ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম সরবরাহের কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ডিএসই ট্রেকহোল্ডার প্রতিনিধি, সব ব্রোকারেজ হাউজের সব অনুমোদিত প্রতিনিধি, আইটি বিভাগের প্রধান এবং ক্রেডিট অ্যাডমিনিসট্রেটরদের নতুন অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা ও প্রশিক্ষণ দিতে ৩ মাসব্যাপী পর্যায়ক্রমে ট্রেনিং প্রোগ্রাম করে।

ওই ট্রেনিং প্রোগ্রাম উদ্বোধনকালে ডিএসই ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার বালা বলেন, বিশ্বখ্যাত সফটওয়্যারটি চালু হলে ডিএসই ইটিএফ, সুকুকসহ অন্যান্য নতুন ইন্সট্রুমেন্টস চালু করতে পারবে। এতে দেশের পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে। তাই এ ট্রেনিং প্রোগ্রাম অংশগ্রহণকারীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

স্বপন কুমার বলেন, অটোমেটেড ট্রেডিং সিস্টেম-এর মেচিং ইঞ্জিন নাসডাক ওএমএক্স ও ব্রোকারেজ হাউজের জন্য অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ফ্লেক্সট্রেড সিস্টেমস পিটিই লি. কোম্পানি সরবরাহ করছে।

নাসডাক ওএমএক্স এর মেচিং ইঞ্জিন এক্সস্ট্রিম বিশ্বের খ্যাতনামা পঁচিশটি স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যবহৃত হয়। ডিএসই এটির সর্বশেষ সংস্করণ এক্স-স্ট্রিম আইনেট ব্যবহার করতে যাচ্ছে, যা কিনা বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির মেচিং ইঞ্জিন। অন্যদিকে ফ্লেক্সট্রেড-এর মোত্তাই পৃথিবীর সেরা অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমগুলোর মধ্যে একটি।

বাংলাদেশ সময় : ১২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।