ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

জীবন বিমার সম্পদ পুঁজিবাজারেই বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
জীবন বিমার সম্পদ পুঁজিবাজারেই বিনিয়োগ ৭০ শতাংশ

ঢাকা: স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির ৭০ শতাংশই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ রেখে জীবন বিমা কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগ নীতিমালা করা হচ্ছে। কিছু শর্তসাপেক্ষে বন্ড, ডিবেঞ্চার বা সিকিউরিটিজ, অগ্রধিকার বা সাধারণ শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে এ সম্পদ বিনিয়োগ করা যাবে।



এজন্য ‘লাইফ বিমাকারীর সম্পদ বিনিয়োগ’ শিরোনামে প্রবিধানমালার খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ
(আইডিআরএ)। বর্তমানে চূড়ান্ত খসড়াটি গেজেট আকারে প্রকাশের প্রক্রিয়াধীন।

নীতিমালায় জীবন বিমা কোম্পানির সম্পদের ৩০ শতাংশ অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বাকি অর্থ শর্তসাপেক্ষে পুঁজিবাজার, স্থায়ী সম্পদ, ব্যাংকে আমানত ও সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হচ্ছে। এছাড়া আইডিআরএ’র অনুমোদন নিয়ে অন্যান্য সম্পদেও বিনিয়োগ করা যাবে।

এ বিষয়ে চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, জীবন বিমা কোম্পানি তার সম্পদের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ সাধারণ শেয়ার বা অগ্রাধিকার শেয়ার অথবা উভয় প্রকারের পুঞ্জিভূত বিনিয়োগ করতে পারবে।

এ বিনিয়োগ হতে হবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) অনুমোদিত ও স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে। তবে কমপক্ষে তিন বছর (বিনিয়োগের তারিখের অব্যবহিত আগের ৩ বছর) ধরে যেসব কোম্পানি ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে শুধু সেই সব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতে হবে।

আর একক কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ওই কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ এবং জীবন বিমা কোম্পানিটির সম্পদের ৫ শতাংশের বেশি বিনিয়োগ করা যাবে না।

মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিএসইসি অনুমোদিত বা নিয়ন্ত্রিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও ইউনিট ফান্ডে সম্পদের সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে।

ডিবেঞ্চার বা সিকিউরিটিজের বিষয়ে বলা হয়েছে, বিএসইসি অনুমোদিত স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ডিবেঞ্চারে সম্পদের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারবে জীবন বিমা কোম্পানি।

এ বিনিয়োগ কমপক্ষে ৩ বছর (বিনিয়োগের তারিখের অব্যবহিত পূর্বের ৩ বছর) ধরে যেসব কোম্পানি সাধারণ শেয়ারে ১০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দিচ্ছে এবং বিনিয়োগ তারিখের আগের ৫ বছর থেকে ডিবেঞ্চারের উপর সম্পূর্ণ সুদ পরিশোধ আছে এমন কোম্পানি করতে হবে। এছাড়া সিটি করপোরেশন থেকে ইস্যু করা ডিবেঞ্চার বা সিকিউরিটিজেও বিনিয়োগ করা যাবে।

বন্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের গ্যারান্টিযুক্ত ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে ইস্যু করা বন্ড ও বাংলাদেশে অনুমোদিত রেটিং সংস্থা থেকে ‘এএ’ বা তার উপরের রেটিং মান পাওয়া বন্ডে সম্পদের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে।

ভৌত অবকাঠামো বলতে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, বিমানবন্দর, বন্দর, রেলপথ, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা, পানি সরবরাহ প্রকল্প, স্বাস্থ্যকর ও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা, বিদ্যুতের উৎপাদন ও বিতরণ অথবা সঞ্চালন, টেলিযোগাযোগ ও আইডিআরএ নির্ধারিত অন্যজন সুবিধা বুঝাবে।

ব্যাংকে আমানতের বিষয়ে বলা হয়েছে, অনুমোদিত রেটিং সংস্থা থেকে ‘সিঙ্গেল এ’ বা তার থেকে ভালো রেট পাওয়া তফসিলি ব্যাংকে সম্পদের ৬০ শতাংশ পর্যন্ত গচ্ছিত রাখা যাবে। তবে স্থায়ী, চলতি, আংশিক স্থায়ী, আংশিক চলতি যেভাবেই আমানত রাখা হোক একটি ব্যাংকে সম্পদের ১০ শতাংশের বেশি গচ্ছিত রাখা যাবে না।

স্থাবর সম্পত্তির বিষয়ে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন ও জেলা সদরের পৌরসভায় অবস্থিত দায়হীন স্থবর সম্পত্তিতে সম্পদের ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করা যাবে।

আর আবাসিক, দাপ্তরিক বা দোকান হিসেবে ব্যবহৃত প্রথম বন্ধকী স্থাবর সম্পত্তিতে সম্পদের ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা যাবে। তবে এই বন্ধকী সম্পত্তি ৩০ বছরের বেশি সময়ের জন্য ইজারাবলে অধিকৃত হতে পারবে না। সম্পত্তির মূল্য নির্ধারিত হবে বন্ধকী সম্পত্তির মূল্যের এক তৃতীয়াংশ এবং দালানসহ সম্পত্তি হলে বন্ধকী সম্পত্তির মূল্যের অর্ধেক বা তার কম।

এছাড়া সাবসিডিয়ারি কোম্পানিতে সম্পদের ২০ শতাংশ এবং আইডিআরএ’র অনুমোদন নিয়ে অন্য সম্পদে ৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে জীবন বিমা কোম্পানির সম্পদ বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রবিধানমালার চূড়ান্ত খসড়ায়।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জীবন বিমা ব্যবসা করা প্রতিটি কোম্পানিকে পঞ্জিকা বৎসর আরম্ভ হওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে আগের বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত
কোম্পানির মোট সম্পদের বিবরণ ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে পাঠাতে হবে। এতে কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তার সই থাকতে হবে এবং নিরীক্ষকের সত্যায়িত হতে হবে।

প্রবিধান অনুযায়ী, আইডিআরএ যে কোনো জীবন বিমা কোম্পানির সম্পদ পরিদর্শন ও সত্যপ্রতিপাদন করতে পারবে। এজন্য কোম্পানির কাছে আইডিআরএ কোনো তথ্য চাইলে প্রতিষ্ঠানটি তা দিতে বাধ্য থাকবে। যদি তথ্য চাওয়ার পর দুই মাসের মধ্যে কোম্পানি তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়, তবে বিমা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে আইডিআরএ।

এ বিষয়ে আইডিআরএ চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, জীবন বিমা কোম্পানির সম্পদ বিনিরয়োগের প্রবিধানমালা করা হচ্ছে। প্রবিধানমালা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়ে আসলে তা কার্যকরের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৫
এএসএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।