ঢাকা: প্রাথমিক গণ প্রস্তাব (আইপিও) ও রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানি ২০১৪ সালে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করে ৩ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮৩০ কোটি টাকায়।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালে পুঁজিবাজার থেকে আইপিও’র মাধ্যমে ১২টি কোম্পানি ৮৩০ কোটি টাকা তুলেছে। এরমধ্যে ৭টি কোম্পানিই প্রিমিয়াম নিয়েছে। আইপিও’র মাধ্যমে সাধারণ শেয়ারহোল্ডার কাছ থেকে নেওয়া ৮৩০ কোটি টাকার মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদই নেওয়া হয়েছে ৪৫৬ কোটি টাকা। তবে রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বছরটিতে কোনো কোম্পানি অর্থ উত্তোলন করতে পারেনি।
অপরদিকে ২০১৪ সালে আইপিও’র মাধ্যমে ২০টি কোম্পানি ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা তুলেছে। এরমধ্যে ১০টি কোম্পানিই প্রিমিয়াম নিয়ে ছিল। সাধারণ শেয়ার হোল্ডারদের কাজ থেকে এই কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম বাবদ নেয় ৭১৭ কোটি টাকা। বছরটিতে ৯টি কোম্পানি রাইট শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৫ সালে সার্বিকভাবে ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ভালো ছিল না। বেসরকারিখাতে বিনিয়োগ কমে গেছে। ব্যবসায়ীদের ঋণের চাহিদা কমার কারণে ব্যাংকের ঋণের প্রবাহ কমেছে। ফলে পুঁজিবাজার থেকে কোম্পানিগুলোর অর্থ উত্তোলন কমেছে। এছাড়া বছরটিতে শেয়ারবাজারের চিত্রও ভালো ছিল না। এটিও ব্যবসায়ীদের পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার অন্যতম কারণ।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান মির্জা আজিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ব্যবসায়ীরা নতুন ব্যবসায় যাচ্ছে না এবং ব্যবসার আকার বাড়াচ্ছে না। এ কারণে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন কমেছে।
তিনি বলেন, দেশে সার্বিক ভাবে ব্যবসার পরিস্থিতি খুব একটা সন্তোষজনক না। যে কারণে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। মূলত ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার পরিধি না বাড়ানোর কারণে ঋণের প্রবাহ কম।
এছাড়া আমাদের দেশে কোম্পানিগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহ কম থাকে। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসার পরিস্থিতি সন্তোষজনক না থাকায় পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন কমেছে, বলেন বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী বাংলানিউজকে বলেন, ২০১৪ সালে শেয়ারবাজার যতটা ভালো ছিল ২০১৫ সালে বাজার ততোটা ভালো ছিল না। লেনদেনও কমে গেছে। যে কারণে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন কমেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫ সালে সব থেকে বেশি অর্থ উত্তোলন করেছে ইউনাইটেড পাওয়ার গ্রীড। এই প্রতিষ্ঠানটি আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২৩৭ কোটি টাকা তুলেছে। এরমধ্যে প্রিমিয়াম বাবদই নেওয়া হয়েছে ২০৪ কোটি টাকা।
এর পরের স্থানে রয়েছে রিজেন্ট টেক্সটাইল। এ প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলেছে ১২৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রিমিয়াম হিসেবে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা। আমান ফীডস অর্থ তুলেছে ৭২ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদ নেওয়া হয়েছে ৫২ কোটি টাকা।
তসরিফা ইন্ডাস্ট্রিজের অর্থ উত্তোলনের পরিমাণ ৬৩ কোটি টাকা। এরমধ্যে প্রিমিয়াম হিসেবে নেওয়া হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ স্টিল রোলিং ৪৩ কোটি টাকা প্রিমিয়ামসহ উত্তোলন করেছে ৬১ কোটি টাকা। ৩০ কোটি টাকা প্রিমিয়ামসহ ৬০ কোটি টাকা তুলেছে সায়েম টেক্স। ১২ কোটি টাকা প্রিমিয়ামসহ ২৪ কোটি টাকা তুলেছে কেডিএস এক্সসরিজ।
এছাড়া ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ৭০ কোটি, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড ৬০ কোটি, এসইএমএল লেকচার ইক্যুয়িটি ম্যানেজমেন্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ২৫ কোটি, অলেম্পিক এক্সসরিজ ২০ কোটি এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি কনসালট্যান্টস ১২ কোটি টাকা উত্তোলন করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এএসএস/বিএস