খুলনা: ২০১০ সালে ধসের পর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও তার কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। তাই ২০১৫ সালে পুঁজিবাজার থেকে বের হয়ে যাওয়া বিনিয়োগকারীর সংখ্যাও কোনো অংশে কম ছিলনা।
২০১৫ সালেও হতাশ হয়ে খুলনায় বছর জুড়ে বাজার ছেড়েছেন ১২ হাজার বিনিয়োগকারী। এসব বিনিয়োগকারী বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব বন্ধ করে বাজারের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। আবার কেউ কেউ মার্জিন ঋণ পরিশোধের চাপ থেকে মুক্তি পেতে বাড়ি-গাড়ি-জমি বিক্রি করেছেন।
খুলনা ইনভেস্টরস ফোরামের তথ্য মতে, শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনায় ১৮টি সিকিউরিটিজ হাউজ রয়েছে। যেখানে প্রায় এক লাখ বিনিয়োগকারী রয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, পাট ও চিংড়ি ব্যবসায়ী, এমনকি গৃহিণীও।
বাজার ছেড়ে যাওয়া আল-আরাফা সিকিউরিটিজ হাউজের বিনিয়োগকারী মো. লিটন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে পোর্টফোলিওর অবস্থা খুবই নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নতুন করে ঋণ দিলে বিনিয়োগ করে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যেতো। কিন্তু মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে বর্তমানে অপারগতা প্রকাশ করছে। যার কারণে বাজার ছেড়ে দিতে হয়েছে।
আইসিবি সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কাজী হাসিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বেশিরভাগ মার্জিন ঋণের বিনিয়োগকারীর বর্তমান পোর্টফোলিওতে ফোর্স সেল স্ট্যাটাস লেখা রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি হাউজ ইতিমধ্যে বেশ কিছু বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার ফোর্স সেল দিয়ে পথে বসিয়েছে। তবে বেশিরভাগ হাউজে ফোর্স সেলের বিনিয়োগকারী থাকলেও হাউজগুলো মানবিক দিক বিবেচনায় তা করছে না। অপরদিকে হাউজে বিনিয়োগকারীদের যে পরিমাণ অর্থ জমা রয়েছে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।
খুলনা ইনভেস্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ ডাকুয়া বাংলানিউজকে জানান, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে ক্রান্তিকাল চলছে। ইতোমধ্যে ৫ বছর অতিবাহিত হলেও বাজার স্বাভাবিক পর্যায়ে আসেনি। একই জায়গায় ঘুরপাক খাচ্ছে। বাজারে উত্থান-পতনের ব্যবধান বেশি না হলেও পরিমাণের দিক দিয়ে সূচক কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বিপুল পরিমাণ পুঁজি হারিয়েছেন। পুঁজি হারিয়ে ২০১৫ সালে খুলনার প্রায় ১২ হাজার বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়েছেন। আর যারা বাজারে রয়ে গেছেন তারা অধিকাংশই লোকসানে।
তার দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে বাজার একটু ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় কিছু বিনিয়োগকারী বাজারে প্রবেশও করছেন। তবে বাজার পুরোপুরি স্থিতিশীল না হওয়ায় কেউ আস্থা রাখতে পারছেন না।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) মহানগরীর আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ হাউজ, অ্যাসোসিয়েটেড ক্যাপিটাল সিকিউরিটিজ, স্টক অ্যান্ড বন্ড সিকিউরিটিজ, র্যাপিড সিকিউরিটিজ, এনসিসি সিকিউরিটিজ, জয়তুন সিকিউরিটিজ, ফকরুল সিকিউরিটিজ, আল-আরাফা সিকিউরিটিজ ও সিনহা সিকিউরিটিজ হাউজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক বিনিয়োগকারী হাউজে আসেন সমন্বয় করতে। আবার কেউ কেউ আসেন শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যেতে।
হাউজ কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য মতে, যারা বাজার ছেড়েছেন তারা বাজার ধসের পর পূর্বের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেননি।
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ হাউজের খুলনা শাখা ব্যবস্থাপক তাপস কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, বাজার পুরোপুরি স্থিতিশীল না হওয়ায় সিকিউরিটিজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী সবাই সঙ্কটে রয়েছেন।
তিনি জানান, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কমে যাওয়ার কারণে হাউজে আয়ও কমে আসছে। তবে সম্প্রতি সময়ে বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে কিছু বিনিয়োগকারী নতুন করে লেনদেনে অংশ নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিকিউরিটিজ হাউজ কর্মকর্তা বলেন, হাউজে এখন বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। অনেক বিনিয়োগকারী নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন। এ কারণে অনেক হাউজ এখন লোকসান গুনছে। লোকসান কমাতে কেউ জনবল আর কেউ শাখা কমিয়ে ফেলছেন।
তিনি জানান, বিনিয়োগকারীরা ২০১৫ সালেও অপেক্ষায় ছিল বাজার ভালো হবে। কিন্তু প্রত্যাশানুযায়ী বাজার ভালো না হওয়ায় হাজার হাজার বিনিয়োগকারী নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
এমআরএম/জেডএস