ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শেয়ারবাজার

ডিএসইকে শোকজ করলো বিএসইসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
ডিএসইকে শোকজ করলো বিএসইসি

ঢাকা: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) জীবন চন্দ্র দাসকে অনৈতিকভাবে চাকরিচ্যুত করায় এই কারণ দর্শানো নোটিশ পাঠানো হয়েছে।


 
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) ডিএসইর চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো নোটিশে দুই কার্যদিবসের মধ্যে ৪টি বিষয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়।
 
নোটিশে বিএসইসি জানতে চেয়েছে, জীবন চন্দ্রকে চাকরিচ্যুত করা ডিএসইর চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী হয়েছে কি না? তদন্তের ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে কি না? জীবন চন্দ্রকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে কি না? এবং বোর্ড সভায় বিষয়টি এজেন্ডাভূক্ত ছিল কি না?
 
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) কোনো কারণ ছাড়াই মহা-ব্যবস্থাপক জীবন চন্দ্রকে তাৎক্ষণিকভাবে চাকরিচ্যুত করে ডিএসই। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি অফিস করেন। তবে রাতে তাকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি জানানো হয়। সোমবার বিষয়টি ডিএসইর সব বিভাগকে অবহিত করা হয়।
 
ডিএসইর হিসাব শাখার জিএম পদে দায়িত্ব পালন করা জীবন চন্দ্র দাস বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কী কারণে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।
 
এদিকে কোনো কারণ ছাড়াই মহা-ব্যবস্থাপক পদের একজন উচ্চপদস্থ কার্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করায় ডিএসইর কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে প্রায় সব কর্মকর্তার মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
 
অভিযোগ উঠেছে ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক রুহুল আমিনের হস্তক্ষেপেই জীবন চন্দ্রকে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। ১৯৯২-৯৩ সালে জীবন চন্দ্র নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান রহমান রহমান হকে কর্মরত অবস্থায় রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিএএসএফে নিরীক্ষা করেন। সে সময় রুহুল আমিন এই প্রতিষ্ঠানটির অর্থবিভাগে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তখন থেকেই জীবন চন্দ্রের উপর রুহুল আমিনের ক্ষোভ রয়েছে। ডিএসইর পরিচালক হয়েই একবার তিনি কোনো কারণ ছাড়াই জীবন চন্দ্রের গাড়ির ড্রাইভার প্রত্যাহার করে নেন।
 
এছাড়া রুহুল আমিন ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) থেকে এবং জীবন চন্দ্র দাস ইনিস্টিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যাটস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই দ্বন্দ্ব রয়েছে। জীবন চন্দ্রের চাকুরিচ্যুতির ক্ষেত্রে এটিও একটি কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
 
আরও অভিযোগ উঠেছে, জীবন চন্দ্রকে সরিয়ে ডিএসইর হিসাব শাখার সব দায়িত্ব রুহুল আমিন তার আস্থাভাজন আব্দুল মতিন পাটোয়ারির ওপর ন্যাস্ত করতে চান। বর্তমানে আব্দুল মতিন পাটোয়ারি ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) পদে (প্রভিশনাল) রয়েছেন। আগামী জানুয়ারিতে তার প্রভিশনাল পিরিয়ড শেষ হয়ে চাকরি স্থায়ী হওয়ার কথা রয়েছে। এক সময় রুহুল আমিনের অধীনে বিএএসএফে কর্মরত থাকা আব্দুল মতিন পাটোয়ারিও আইসিএমএবি থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
 
আব্দুল মতিন পাটোয়ারিকে সিএফও পদে বসানো নিয়েও অভিযোগ আছে। ডিএসইর সিএফও পদের জন্য পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ বেশ কয়েকজন এফসিএ আবেদন করেন। কিন্তু সেই সব আবেদন আমলে না নিয়ে রুহুল আমিনের প্ররোচনায় পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকার পরও গত আগস্টে আব্দুল মতিন পাটোয়ারিকে সিএফও পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে ডিএসইর সিএফও পদটি স্থায়ী করা হয়। তার আগে ডিএসইর সিএফও পদটি ছিল চুক্তি ভিত্তিক।
 
যোগাযোগ করা হলে রুহুল আমিন বাংলানিউজের কাছে তার বিরুদ্ধে ওঠা সবকটি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, আমি বিএএসএফে থাকার সময় জীবন চন্দ্র দাস প্রতিষ্ঠানটিতে নিরীক্ষা করেছেন এ বিষয়টি আমি শুনেছি। কিন্তু এটি আমার মনে নেই। জীবন চন্দ্র দাসের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বও নেই।
 
জীবন চন্দ্রের চাকুরিচ্যুতর কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাকে চাকুরিচ্যুত করার বিষয়টি হয়তো দায়িত্বে অবহেলার কারণে হতে পারে। এ বিষয়ে এমডির সঙ্গে কথা বলেন।
 
তবে ডিএসইর এমডি স্বপন কুমার বালার মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 
এদিকে ডিএসইর এই স্বতন্ত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের কাজে অযাচিত হস্তক্ষেপ করারও অভিযোগ আছে। গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) এ জন্য ডিএসইর হিসাব শাখার কর্মকর্তারা আধা ঘণ্টা কর্মবিরতিও পালন করেন।
 
পরের দিন বৃহস্পতিবার সশরীরে উপস্থিত হয়ে হিসাব শাখার কাছ থেকে কিছু তথ্য উপাত্ত ও কাগজপত্র চান রুহুল আমিন। হিসাব বিভাগ থেকে ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে এসব তথ্য চাহিদা জানানোর অনুরোধ করা হয়। এতে হিসাব শাখার প্রধান জীবন চন্দ্র দাসের ওপর ক্ষিপ্ত হন এই পরিচালক।
 
অথচ স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা থেকে মালিকানা আলাদা করার (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল ব্যবস্থাপা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের ওপর পরিচালকদের অযাচিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রুহুল আমিন বাংলানিউজকে বলেন, যদি অকারণে কাউকে টাকা দিয়ে দেওয়া হয় পরিচালক হিসেবে আমি তার ব্যাখ্যা চাইতেই পারি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এএসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।