ঢাকা: অনাস্থা ও তারল্য সঙ্কট পুঁজিবাজারকে কালো মেঘের মতো ঘিরে ফেলেছে। কোনোভাবেই এ সঙ্কট থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার।
সর্বশেষ এপ্রিলের তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রথম সপ্তাহে সূচক বাড়ে। তবে শেষ দুই সপ্তাহে ক্রমাগতভাবে সূচকের পতন হয়েছে বাজারে। পাশাপাশি কমেছে শেয়ারের দাম ও বাজার মূলধন। বাজারে প্রতি আস্থা এতোটাই কমেছে যে, ভালো মৌলভিত্তি সম্পূর্ণ শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সীমা বাড়ানো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের টালবাহানা, একমিসহ কয়েকটি কোম্পানি আইপি’র মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার পাশাপাশি শেয়ার কেলেঙ্কারির রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে।
জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা বাড়ানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু এখনও প্রকাশ্য কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ফলে বিষয়টি ধোঁয়াশায় রয়ে গেছে। অথচ পুঁজিবাজারে মহাধসের আগে বাজারে আগ্রাসীভাবে বিনিয়োগ করে ব্যাংকগুলো। ওই সময়ে বিনিয়োগের সীমা ছিলো ব্যাংকের মোট আমানতের ১০ শতাংশ। কিন্তু এসময় আইনের তোয়াক্কা না করে ব্যাংকগুলো বাজারে বিনিয়োগ করতে থাকে। কোনো কোনো ব্যাংক আমানতের ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করে। ফলে মৌলভিত্তি উপেক্ষা করে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম সীমাহীনভাবে বেড়ে যায়। এরপর ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ তুলে নিলে বাজারে বিপর্যয় নেমে আসে।
এদিকে, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়।
সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ ধারায় বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে তাদের পরিশোধিত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন আর্নিংয়ের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশের বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে না। তবে বর্তমানে কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি থাকলে তা তিন বছরের মধ্যে কমিয়ে আনতে হবে। চলতি বছরের ২১ জুলাই এ সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা এই সীমা ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। সরকারও দুই বছর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংলাদেশ ব্যাংক কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।
এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয় নিয়ে দীর্ঘদিন কথা হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে পরিষ্কারভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখে বাজারে বিভ্রান্তি ছড়ানো উচিত নয়।
বাজার পরিস্থিতি
বিদায়ী সপ্তাহে (১৭ থেকে ২১ এপ্রিল) দেশের দুই বাজারে একদিন উত্থান ও চারদিন দরপতনের মধ্যদিয়ে মোট পাঁচ দিন লেনদেন হয়েছে। এ সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৬৮ পয়েন্ট কমে চার হাজার ৩৪০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ১১৬ পয়েন্ট কমে আট হাজার ১৩০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এর আগের সপ্তাহে ডিএসইতে সূচক কমে ৩৪ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে গত সপ্তাহে ঢাকার বাজারে দাম বেড়েছে ৮৪টির, কমেছে ২২৭টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর আগের (১০ থেকে ১৫ এপ্রিল) সপ্তাহের দাম বেড়েছে ৮০টির, কমেছে ২২২টির আর অপরিবর্তিত ছিলো ২৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর চট্টগ্রামের বাজারে গত সপ্তাহে দাম বেড়েছে ৭৩টি, কমেছে ১৯৪টির আর ১১ কোম্পানির শেয়ারের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
তবে সপ্তাহের ঢাকার বাজারে লেনদেন বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। গত সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা। আর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিলো এক হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ারের লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। তবে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ কমেছে ১১ শতাংশ হারে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বাজারে লেনদেন হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিলো ১০৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৬
এমএফআই/এসএনএস