ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪ রবিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

বিনিয়োগ সমন্বয় সময়সীমা

বাংলাদেশ ব্যাংকর ওপর ক্ষোভ বাড়ছে

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
বাংলাদেশ ব্যাংকর ওপর ক্ষোভ বাড়ছে

ঢাকা: পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ সমন্বয়ের (সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট) সময়সীমা বাড়ানো নিয়ে টালবাহানা করায় বাংলাদেশ ব্যাংকর ওপর ক্ষোভ বাড়ছেই। বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে শেয়ার ব্যবসায়ীদের পর এবার সরকারের উচ্চমহল থেকে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ ইস্যুতে সর্বশেষ এপ্রিল মাসের ১২ দিন পুঁজিবাজারে দরপতন হয়েছে। আর বাকি ৫ দিন সূচক বেড়েছে। সেটাও হয়েছে আইসিবিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেট সাপোর্টের কারণে। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে ৬৯১ কোটি ৫৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

এ কারণে বিনিয়োগকারী, বাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান- মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকারেজ হাউজ, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনসহ (বিএসইসি) শেয়ার ব্যবসায়ীরা ক্ষোভে   ফুঁসছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যক্তি বিশেষকে শিল্পায়নের জন্য ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ১৫ বছর থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত রিসিডিউল (ঋণ পুনঃতফসিল) করতে দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার জন্য হাজার  হাজার কোটি টাকা লোপাট করার সুযোগ দেওয়া হয়। তাহলে পুঁজিবাজারে জড়িত ৩৫ লাখ বিনিয়োগকারীদের রক্ষা করতে কেন বাংলাদেশ ব্যাংক এ সুযোগ দিচ্ছে না।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ে এ মুহূর্তে সময় বাড়ানো একান্ত আবশ্যক। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত। এবং আমি মনে করি, সরকারের যে পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে, সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করার কোনো যুক্তি নেই। যদি কেউ এটাকে বাস্তবায়ন না করতে চান, তাহলে তাকে শক্ত যুক্তি দেখাতে হবে যে, এর ফলে অর্থনীতির ক্ষতি হবে।

তিনি বলেন, এখন ব্যাংকে যে পরিমাণ অলস টাকা পড়ে আছে সেখানে আরও টাকা দিলে অলস টাকা বাড়বে। অলস টাকা বাড়লে ব্যাংক আমানত নিতে অস্বীকার করবে। আমার মনে হয়, এই মুহূর্তে বেশি টাকা ব্যাংকের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হবে না।

কাজেই প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত বলেও মন্তব্য করেন ড. মশিউর রহমান।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক ও সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নরের সামনে কথা দিয়েছেন, ব্যাংকের বিনিয়োগ সমন্বয়ের সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সাল পর্যন্ত করা হবে। সে সময় অর্থসচিবও উপস্থিত ছিলেন। আমরা খতিয়ে দেখলাম যে, আইনে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, সে আইন পরিবর্তন না করেই সমন্বয়ের সময় বাড়ানোর সুযোগ আছে। এখন শুনছি, কয়েক দিন আগে অর্থমন্ত্রীকে বোঝানো হচ্ছে যে, এ সুযোগ দেয়া হলে বাজার ম্যানুপুলেট (কারসাজি) ও বাবল হবে। আমরা কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছি না যে, এটাতে কিভাবে বাজার বাবল হবে।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার খারাপ কিছু তো না। প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে পুঁজিবাজারকে আনতেই হবে। আর একটি কথা- আমরা যদি ব্যক্তি বিশেষকে শিল্পায়নের জন্য ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ১৫ বছর থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত রিসিডিউল (ঋণ পুনঃতফসিল) করতে পারি, তাহলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারীর জন্য এ কাজটি (বিনিয়োগ সমন্বয় সীমা বাড়ানো) কেন করতে পারি না? আমরা টাকা চাচ্ছি না, সহায়তা চাচ্ছি না, কোনো ফান্ড চাচ্ছি না। আমরা শুধু পলিসি সাপোর্ট (নীতি সহায়তা) চাচ্ছি।

‘এখন যেভাবে আইন, নীতিমালা করা হয়েছে, সেখানে বাজার বাবল করার সুযোগ কোথায়?’- প্রশ্ন তোলেন রকিবুর রহমান।

ডিএসই’র সাবেক  সিনিয়র সহ সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক বিনিয়োগ সমন্বয় করা নিয়ে কেন এই খেলা খেলছে? আজ পর্যন্ত দেখি নাই, কোনো আইনে বিনিয়োগ সমন্বয়ের বিষয়ে তারিখ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে ধীরে ধীরে পুঁজিবাজার ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজারের গলা টিপে ধরে আছে। এ ধরনের কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার লিমিট বাড়ানো পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। এতে ৩ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকার লোকসান থেকে মুক্তি পাবেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু এমন উদ্যোগ মন্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান তিনি।

চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেট কার্যকর হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়। বাজারের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকসহ সব প্রতিষ্ঠান একাধিক বৈঠক করে। এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) তাদের সুপারিশ জমা দেওয়া হয়। কমিশন সব স্টেকহোল্ডারদের সুপারিশ আমলে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে গত বছরের নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আবেদন করে।

এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শেরেবাংলা নগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সভায় পুঁজিবাজারে স্বার্থে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত (অর্থাৎ নতুন করে আরো ২ বছর) ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের সময় বাড়ানোর আশ্বাস দেন। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে এ নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নতুন করে সময় বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।