ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

বাজেটে প্রণোদনা না থাকায় পুঁজিবাজারে বাড়ছে সংকট

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৪৯ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৬
বাজেটে প্রণোদনা না থাকায় পুঁজিবাজারে বাড়ছে সংকট

ঢাকা: ২০১০ সালের মহাধসের পর ক্রমাগত পুঁজি হারিয়ে চরম দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে দেশের পুঁজিবাজার। বাজারের এ ক্রান্তিকাল থেকে উত্তোলনে নতুন অর্থবছরের বাজেটের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বিনিয়োগকারী, ব্রোকার মালিক, স্টক এক্সচেঞ্জসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কোনো প্রণোদনা না রাখায় সবাই হতাশ। এ কারণে নতুন করে আস্থা সংকটে পড়েছে বাজার। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তারল্য সংকট। এর ফলে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবের পর নতুন করে ফের দরপতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে পুঁজিবাজার।

এর আগে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) থেকে বিনিয়োগকারীদের জন্য স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে উৎসে কর সংগ্রহের হার কমানো, করমুক্ত লভ্যাংশের পরিমাণ ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়।

দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে থাকা ব্রোকার হাউজগুলোর লোকসান কমাতে স্টক এক্সচেঞ্জের স্টেকহোল্ডাররা সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর আরোপিত উৎসে কর কমিয়ে শূন্য দশমিক ১৫ শতাংশ করার পাশাপাশি ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন পরবর্তী দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে ৫ (পাঁচ) বছরের জন্য শতভাগ কর অবকাশ দেওয়াসহ কিছু প্রণোদনার জন্য সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে বাজারের জন্য কোনো ধরনের প্রণোদনা রাখা হয়নি। এতে বাজেট ঘিরে যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিলো তা না পেয়ে হতাশ হয়েছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাবিত বাজেট ‘পুঁজিবাজার বান্ধব হয়নি’ বলে ক্ষোভ প্রকশ করেছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একাংশের নেতা রুহুল আমিন। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের স্বার্থে কালো টাকা বিনা শর্তে বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়াসহ যেসব দাবি জানিয়েছিলাম তার কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি বলেন, ২০১০ সালে পুঁজিবাজার ধস হয়েছে। এতে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত ৬ বছরেও বাজার স্থিতিশীল হয়নি। স্থিতিশীল করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে না। সবশেষে এবারের বাজেটে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা ছিলো। কিন্তু সেই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলানিউজকে বলেন, বাজেটে বিনিয়োগকারীদের কোনো প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তাই নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পরোক্ষভাবে বাজারে প্রতি তাদের আস্থার সংকট আরো বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি।    

ডিএসইর সাবেক সভাপতি আহসানুল ইসলাম টিটো বাংলানিউজকে বলেন, পুঁজিবাজারের জন্য এবারের বাজেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে বাজেটে আমরা কিছু পাইনি।

তিনি বলেন, পুঁজিবাজার চলছে প্রত্যাশার ওপর। বিনিয়োগকারী ও এখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা নতুন বাজেটে যা প্রত্যাশা করেছিলেন তা পূরণ হয়নি। তাই তারা আশাহত হয়েছেন।

ডিএসইর সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বাংলানিউজকে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে নতুন কোনো কিছু আসেনি। তবে বিনিয়োগকারীদের বিপক্ষেও কিছু নেই। এতে বিনিয়োগকারীদের প্যানিক হওয়ার কিছু নেই।

মডার্ন সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য খুজিস্তা নূর-ই নাহরীন বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের এ বাজেটে বিনিয়োগকারীদের কোনো লাভ কিংবা ক্ষতি নেই। তবে পরোক্ষভাবে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা মন্দায় পুঁজিবাজারে চরম ক্রান্তিকালে চলছে। বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। ব্রোকারেজ হাউজগুলো লোকসান পোষাতে না পেরে বন্ধ হতে শুরু করেছে। পুঁজিবাজারের এই দুঃসময়ে যেসব প্রণোদনা চাওয়া হয়েছিলো সেগুলো দিলে বাজারে সুফল আসতো। টার্নওভার বাড়তো। সরকারও এ খাত থেকে বেশ রাজস্ব আয় পেতো।

সিএসইর পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বাজেটে বিনিয়োগকারীসহ বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারো প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সরকারেরও লাভ হয়নি। বরং বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশের ওপর কর আরোপ, ব্রোকার হাউজের আয়ের ওপর অতিরিক্ত উৎসে কর আরোপের কারণে বাজারে লেনদেন প্রতিনিয়তই কমছে। ফলে এ খাত থেকে সরকার রাজস্ব আয়ও কম পাচ্ছে।

বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই ও সিএসই’র পক্ষ থেকে পুঁজিবাজারের স্বার্থে বাজারে চলমান সংকট এবং আস্থাহীনতা দূর করতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রণোদনা এবং নীতি সহায়তা দিতে ডিএসই ও সিএসইর দাবিগুলো পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করে উভয় কর্তৃপক্ষ।

এগুলো দিলেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে আস্থা ও তারল্য সংকট কেটে যাবে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারমুখী হবেন। এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুঁজিবাজারের ভূমিকাও বহুগুণ বাড়বে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, জুন ১৪,২০১৬
এমএফআই/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।