ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারে বিদেশি কোম্পানির অবদান ২৬ শতাংশ

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৭ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
পুঁজিবাজারে বিদেশি কোম্পানির অবদান ২৬ শতাংশ

ঢাকা: সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশের পুঁজিবাজারে (বাজার মূলধনের দিক থেকে) ২৬ শতাংশে আটকে আছে বিদেশি কোম্পানির অবদান। চার শতাধিক বিদেশি কোম্পানি দেশে ব্যবসা করলেও মাত্র ১৩টি কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

আর বাকী কোম্পানিগুলো সরকারের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে দেশের পুঁজিবাজারে আসছে না।

এ সুযোগে ভালো মুনাফা করে শতভাগ মালিকানা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক (বিদেশি) এই কোম্পানিগুলো। আর ভালো কোম্পানির শেয়ারের অভাবে খারাপ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে পুঁজি হারিয়ে প্রতিনিয়তই নিঃস্ব হচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারীরা।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সর্বশেষ ২০০৯ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে গ্রামীণফোন কোম্পানি। এতে সাধারণ মানুষও পুঁজিবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এরপর থেকে কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ করে প্রতিনিয়তই লাভ বা মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। নতুন করে হাজার বিনিয়োগকারী বিদেশি কোম্পানি বাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।

তাই বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থ রক্ষায় দ্রুত এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের সঙ্গে এক মত পোষণ করে সম্প্রতি সংসদের আলোচনায় ওইসব কোম্পানিকে বাজারে আনার দাবি জানিয়েছেন এমপিরাও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক আবু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিকে বাজারে আনতে সরকারের চেষ্টা নাই। দেশি কোম্পানির মতো সরকার যদি বিদেশি কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবজারে আসার জন্য বাধ্যতামূলক আইন করলেই তো হতো। তাও না করলে, অন্তত পুঁজিবাজারে আনতে তাদের জন্য বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে, এমন কিছু লোভনীয় অফার দিলেই তো তারা বাজারে আসবে।

তিনি আরও বলেন, ভালো ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে এলে একদিকে বিনিয়োগকারীরা মুনাফা পাবে। অন্যদিকে বাজারে ইপিএস কারসাজি কমে আসবে। এর ফলে বিনিয়োগকরীরা গুজবে পড়ে বিভ্রান্ত হবে না। দেখে শুনে বিনিয়োগ করতে পারবেন। তাতে ঝুঁকিও কম হবে।

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, পুঁজিবাজারে অবদান রাখা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশ, ম্যারিকো বাংলাদেশ, লিন্ডে বাংলাদেশ, রেকিট বেনকিজার বাংলাদেশ, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেড, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটা সু, ফুয়াং ফুড এবং ফুয়াং সিরামিক। এ কোম্পানিগুলোর মধ্যে পুঁজিবাজারে গ্রামীণফোনের একাই অবদান ১১ দশমিক ০৮ শতাংশ। আর বাকি ১২ কোম্পানির অবদান ১৪ শতাংশ।

অপরদিকে লেনদেনের দিক থেকে ৫৫-৫৬ শতাংশ অবদান রয়েছে এই কোম্পানিগুলোর। এপ্রিলে ডিএসইর মোট লেনদেনের ৫৫ আর মে মাসে ৫৬ শতাংশ অবদান ছিলো বিদেশি কোম্পানিগুলোর।

রেজিস্টার অব জয়েন্ট স্টক বাংলাদেশের তথ্য মতে, দেশে ব্যবসা করে আসা বিদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে মুনাফার দিক দিয়ে সবার উপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি শেভরন। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রায় অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করছে এ কোম্পানিটি। ১৮৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি বিশ্বব্যাপী প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি তেল ও উৎপাদনমুখী শিল্পে প্রভাব বিস্তারকারী একটি প্রতিষ্ঠান।

এরপরের স্থানে রয়েছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে এদেশে স্থায়ী ব্যবসা শুরু করে। দেশের প্রসাধনসামগ্রীর বাজারে শীর্ষে রয়েছে কোম্পানিটি।

ব্যাংকিং খাতে বহুজাতিক কোম্পানির নেতৃত্ব দিচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি) লিমিটেড ও সিটিব্যাংক এনএ। এছাড়াও রয়েছে সিমেন্স, এরিকসন, মবিল, নেসলে, এভেরি ডেনিসন, ইয়ংওয়ান, নোভারটিস বাংলাদেশ, কোস্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, জিআইজেড, গ্রে-অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেড, এশিয়ান পেইন্টস, এসিএস টেক্সটাইল, এমসিসি ট্রান্সপোর্ট, হোটেল আমরাই, নিউ ভিশন সলিউশন, ডেনিম এক্সপোর্ট, আরএকে পেইন্টস, ভিনারো ইন্টারন্যাশনাল ও সিপি বাংলাদেশের মতো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী বাংলানিউজকে বলেন, ডিএসই’র পক্ষ থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনতে সরকার ও কোম্পানিগুলোকে প্রস্তাব করেছি। সরকারকে এসব কোম্পানির দাবিগুলো পূরণ করার জন্যও বলেছি। কিন্তু কোনো ধরনের সুখবর এখনো পায়নি।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো বাজারে আনতে পারলে পুঁজিবাজারের চেহারাটাই পাল্টে যেতো। দেশের বিনিয়োগকারী ও স্থিতিশীল পুঁজিবাজারের স্বার্থে বিদেশি কোম্পানিগুলোকে সরকারের কাছে দ্রুত অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নিবার্হী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, এ কোম্পনিগুলোকে পর্যাক্রমে পুঁজিবাজারে আনতে অর্থমন্ত্রণালয় ও কোম্পানির সঙ্গে অনেক বার কথা বলেছি। এখনো কাজ করছি। কিন্তু দুঃখ জন হলেও সত্য, এরা পুঁজিবাজারে আসতে চায় না।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির চেয়ে প্রতিবছর ১০ শতাংশ আয়কর রেয়াত সুবিধা পায়।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৪ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৬
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।