ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারে দরপতন, কমিশন ব্যস্ত কক্সবাজার কেএএমএলকোতে!

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
পুঁজিবাজারে দরপতন, কমিশন ব্যস্ত কক্সবাজার কেএএমএলকোতে! বিএসইসি লোগো

ঢাকা: চলতি বছরের প্রথম তিন মাস পর থেকে দরপতনের বৃত্তে আটকা পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। এ কারণে পুঁজি হারানোর ভয়ে বড় ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা হাতগুটিয়ে বসে আছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আস্থার সংকটে পড়েছে। বাজারে সৃষ্টি হয়েছে তারল্য সংকট। ফলে লেনদেন ২ হাজার কোটি টাকার গড় থেকে নেমে ৫’শ কোটি টাকার গড়ে এসেছে। 

এসবের ফলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি (বাজার মূলধন) হারিয়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। ব্রোকারেজ হাউজগুলোও তাদের ব্যবসায় আবারো লোকসান গুণতে হচ্ছে।

তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে।  

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারের এ পরিস্থিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দরপতনের কারণ খুঁজে বের করে তা ঠেকানোর ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে ব্যস্ত হয়েছে পড়েছে কক্সবাজারে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেগুলোর প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে পরিপালন কর্মকর্তা সম্মেলন (কেএএমএলকো, camlco) ২০১৭ নিয়ে।

গত বছর ঢাকায় এ সম্মেলনটি করা হয়েছিল। এবার কক্সবাজারের হোটেল ওশান প্যারাডাইসে ৫ ও ৬ মে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দু’দিনব্যাপী সম্মেলনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সব ট্রেক হোল্ডার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও সিকিউরিটি কাস্টডিয়ানের প্রধান মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছে বিএসইসি।

দু’দিনের এ সম্মেলনে ৫-৬শ কর্মকর্তাদের দু’বেলা করে লাঞ্চ ও ডিনার করাবে কমিশন। ফলে এ কর্মকর্তাদের আসা-যাওয়া এবং থাকার খরচ বহন করতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকদের। মালিকরা বলছেন, সম্মেলনে জনপ্রতি ১জনের ন্যূনতম খরচ বহন করতে হবে ১৫-২০ হাজার টাকা। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফাও আরেক দফা বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রণ সংস্থার এ সিদ্ধান্ত প্রতিবাদে ডিএসই’র পর্ষদের সঙ্গে মঙ্গলবার আলোচনায় বসেছিল ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সদস্যরা। সংগঠনের সভাপতি আহমেদ রশিদ লালীর নেতৃত্বে ১৫ পরিচালকদের সবাই কমিশনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করেন।

তারা বলেন, এ মুহূর্তে পুঁজিবাজারের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দরপতন থামানো। হঠাৎ করেই কেন দরপতন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখা। কারা গুজব ছড়িয়ে বাজারকে অস্থিতিশীল করছে তাদের বিচারের আওতায় , কিন্তু কমিশন তা না করে বিনা খরচে যে প্রোগ্রাম ঢাকায় শেষ করতে পারতো, সেই প্রোগ্রাম আমোদ-প্রমোদের জন্য কক্সবাজারে করছে।

ডিবিএ সদস্যদের মতে, প্রমোদ ভ্রমণের প্রয়োজন হলে কমিশন নিজে তার কর্মকর্তাদের জন্য করুক। আমাদের কেন সেখানে যেতে বাধ্য করলো। এমনিতে দরপতনের জ্বালায় আমরা নি:স্ব। তার উপরে আবার কেন নির্যাতন? ডিএসইকে বিষয়টি নিয়ে কমিশনে আলোচনা করে ঢাকার সম্মেলন করার অনুরোধ জানানো হয়।

সভায় ডিএসইর এমডি কেএএম মাজেদুর রহমান এবং চার শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শাকিল রিজভী, রকিবুর রহমান, শরিফ আতাউর রহমান এবং হানিফ ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্বব্যাংকের নেওয়া প্রকল্পটিতে সম্মেলনের জন্য ৪০ লাখ টাকা খরচ বরাদ্দ রেখেছে কমিশন। এর মধ্যে ভেন্যু ম্যানেজমেন্ট, সাউন্ড সিস্টেম, ৩টি স্ন্যাকস, দু’বার লাঞ্চ ও ডিনার, হল রুম ভাড়া, পানি, কালচারাল প্রোগ্রাম বাবদ কমিশনের ব্যয় দেখানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১৭
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।