ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ব্যাংকের এডি রেশিও কমায় পুঁজিবাজারে দরপতন

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
ব্যাংকের এডি রেশিও কমায় পুঁজিবাজারে দরপতন

ঢাকা: বাণিজিক ব্যাংকগুলো এডি রেশিও (ঋণ-আমানত অনুপাত) কমানোর কারণে পুঁজিবাজারে আবারও দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ দরপতনে সূচক, লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে। এতে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৪৮ পয়েন্ট, বুধবার কমেছে ৮৮ পয়েন্ট। অন্যদিকে মঙ্গলবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ৫২, বুধবার কমেছে ১৫৭ পয়েন্ট।

এতে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়েছে ৭ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।

এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। আর কয়েকটি কারসাজি চক্র এডি রেশি ইস্যুতে বিভিন্ন গুজব ছড়িয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দিচ্ছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও অতংকিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছে। অন্যদিকে মার্কেট সাপোর্টের জন্য গঠিত ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এসবের মধ্যে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সিএসইর পরিচালক ছায়েদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, চলতি বছর প্রথমদিন থেকেই ব্যাংকগুলোর এডি রেশিও কমানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। এ কারণে মাস জুড়েই বাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। তবে মুদ্রানীতি ঘোষণার দিন এডি না কমানোর ফলে শেয়ারের দাম বেড়েছে। কিন্তু এরপর দিন মঙ্গলবার এডি কমিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও একটি সার্কুলার জারি করেছে। এ কারণে আবারও দরপতন হচ্ছে।

তিনি বলেন, এডি রেশিও কমানো ফলে ব্যাংকের মানি সাপ্লাই কমে যাবে। আমানতের সুদ বাড়বে। ঋণের সুদের হারও বাড়বে। ফলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের চেয়ে বিনা ঝুঁকিতে ব্যাংকে ডিপজিট রাখবে।

অন্যদিকে শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে। ফলে শিল্প কারখানাগুলোতে উৎপাদন খরচ বাড়বে। এতে মুনাফা কমে যাবে। তাতে শেয়ারহোল্ডাররা ভাল মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে।  

২৯ জানুয়ারি (সোমবার) বাংলাদেশ ব্যাংক জানুয়ারি-জুন ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ের জন্য মুদ্রানীতি ঘোষণা করে। মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজার সম্পর্কে নেতিবাচক কোনো বিষয় না থাকায় ওই দিন পুঁজিবাজারে উত্থান হয়েছে। কিন্তু এরপর দিন মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) ব্যাংকগুলোর এডি ১-১ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে একটি সার্কুলার জারি করে। এরপর থেকে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত রয়েছে। এ দরপতনে ব্যাংক ও অর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি কমেছে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতি পুঁজিবাজার সম্প্রসারণ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে ডিএসই। ডিএসই মনে করে মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারকে করপোরেট গ্রাহক ও প্রবাসী বাংলাদেশির কাছে আরও গ্রহণযোগ্য ও বিনিয়োগে আকৃষ্ট করবে।

পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা, কর্মসংস্থান তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত সময়োপযোগী ও দিকনির্দেশনামূলক মুদ্রানীতি বলে উল্লেখ করা হয়।

ডিএসই বলছে, দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে করপোরেট গ্রাহকদের মেয়াদী প্রকল্প বিনিয়োগ অর্থায়নে ব্যাংকগুলোর ওপর অতি নির্ভরতার প্রবণতা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনতে হবে। এদের মূলধন বাজারে বন্ড ইস্যু করে অর্থ সংগ্রহে উৎসাহ ও সহায়তা দিতে ব্যাংকগুলোকে সক্রিয় করার কথা বলা হয়েছে। এতে পুঁজিবাজারে পণ্যের বৈচিত্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি এর গভীরতা বৃদ্ধি পাবে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এডিআর কমানোর বিষয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এটা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। বেশ কিছু ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং করেছে। আমানত না বাড়িয়ে ঢালাও ঋণ বিতরণ করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাগাম টেনে না ধরলে ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

জানুয়ারি-জুন মেয়াদের নতুন এ মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে ঋণ-আমানত অনুপাতের (এডিআর) কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন গভর্নর ফজলে কবির।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০১৮
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।