ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

ডেকে এনে বিনিয়োগকারীদের ফকির বানানো হচ্ছে

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
ডেকে এনে বিনিয়োগকারীদের ফকির বানানো হচ্ছে

ঢাকা: বিভিন্ন ইস্যুতে চলতি বছরের শুরু থেকেই টালমাটাল পুঁজিবাজার। সম্প্রতি আস্থা ও তারল্য সংকটে মারাত্মক বিপর্যয়ে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীদের বলছেন- ‘পুঁজিবাজার আর ভালো হবে না’ ‘শেয়ার কিনলেনই লোকসান হচ্ছে’।

এমন অবস্থাতেও ডিএসই-সিএসই প্রতিদিন মিছিল-মিটিং করার পরের দিন একটু দাম বাড়াচ্ছে। বিনিয়োগকারীরা একটু অশ্বস্ত হচ্ছে।

এরপর আবারও চলছে দরপতন।  

বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ ডিএসই-সিএসইসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগকারীদের ডেকে এনে ফকির বানাচ্ছে। এতে পুঁজি হারানোর ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে শেয়ার ব্যবসায়ীরা লোকসানের ভারে অথৈই সাগরে ডুবছে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) অবস্থিত লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজ, শাকিল রিজভী স্টক, ব্র্যাক ইপিএলসহ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।  

জানতে চাইলে লঙ্কা বাংলা সিকিউরিটিজ লিমিটেডের বিনিয়োগকারী হাবিব বাংলানিউজকে বলেন, সরকার  ইচ্ছা করলেই পুঁজিবাজার ভালো হবে। এটা সরকারের জন্য ওয়ান টু’র ব্যাপার। কিন্তু সরকার বিনিয়োগকারীদের ডেকে এনে ধীরে ধীরে পুঁজি কেড়ে নিচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের সর্বশান্ত করছে।

তিনি বলেন, ডিএসই’র অংশীদারিত্ব চীনা কনসোর্টিয়ামকে দিয়ে দিলেই এখন বাজার ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু সরকার এটা করছে না। ফলে সরকার (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কারণে পুঁজিবাজার দিন দিন বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। ফলে ডিএসই ও বিএসইসির যাতাকলে আমরা সর্বহারা হয়ে গেলাম।

মিছিল-মিটিং করে বাজারে এ অবস্থা থেকে উত্তোলন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন একই হাউজের বিনিয়োগকারী শহিদুল ইসলাম ইকবাল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, টানা কয়েক দিন পরপর দরপতন ঠেকাতে ডিএসইতে মিটিং করা হয়। লাইফ সাপোর্ট দিয়ে দু-একদিন বাজার ভালো রাখা হয়। এরপর আবারও চলে দরপতন। আর এই দরপতনের প্রতিবাদে ডিএসইর সামনে বিক্ষোভ হয়। ফলে বাজারে নিয়ে কোনো ভরসা পাচ্ছি না। প্রতিদিনই পুঁজি কমছে, খুব আতঙ্কে আছি।

ব্র্যাক ইপিএলের বিনিয়োগকারী ইমরুল গালিব বাংলানিউজকে বলেন, পৃথিবীর এমন কোন পুঁজিবাজার আছে, যে ৮ বছরেও গতিশীল হয়নি। বরং যখনই বাজার যখন আপন গতিতে একটু ঘুরে দাঁড়ায়, ঠিক তখনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসিসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বাজারটাকে অস্থিতিশীল করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক পুঁজিবাজার বিরোধী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কিন্তু বিএসইসি ইগো প্রবলেমের কারণে সেগুলো সমাধান করছে না। পাশাপাশি কমিশন নিজে চীনা কনসোর্টিয়ামকে ডিএসইর অংশীদারিত্ব না দিয়ে ভারতেকে দিতে চাচ্ছে। এতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

শাকিল রিজভী স্টকের বিনিয়োগকারী আতারউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এডি রেশিও, ডিএসইর অংশীদারিত্বে চীন-ভারতের টানাটানির কারণে পুঁজিবাজারে দরপতন চলছে। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বাজারটাকে ঠিক করা দরকার।

এদিকে চলতি বছরের শুরু থেকেই দেখা গেছে, যখনই বাজারে টানা কয়েকদিন দরপতন হয়েছে। এরপরপরই ডিএসই-সিএসইসহ কয়েকটি জায়গায় বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি মিটিং করা হয়। এরপর মিটিং শেষে সংবাদ সম্মেলন করে বাজার ভালো হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়। আশ্বাসের পর দু-একদিন পুঁজিবাজার ভালো থাকে কিন্তু তারপর আবার শুরু হয় দরপতন। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার ছাড়ছেন। আর যারা রয়েছেন তারাও পুঁজি হারানো ভয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন।

সর্বশেষ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক হয় ১৩ মার্চ। ওদিন মিটিং শেষে ডিএসই ব্রোকারর্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট মোস্তাক আহমেদ সাদেক সাংবাদিকদের জানান, মারাত্মক ফান্ড সংকটে রয়েছে পুঁজিবাজার। এই তারল্য সংকট থেকে উত্তরণে ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) ১ শতাংশ কিংবা দশমিক ৫০ শতাংশ কমানো এবং ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার লিমিটের ক্ষেত্রে সাবসিডারি কোম্পানির বিনিয়োগ, বন্ড এবং পুঁজিবাজারে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিনিয়োগের আওতায় না আনা এবং মার্ক টু মার্ক (মার্কেট প্রাইজে নয়, অভিহিত মূল্যে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ) ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার লিমিট নির্ধারণ করা হলেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়বে। বাজারে গতি ফিরবে।

এছাড়াও সরকারি ব্যাংক, সরকারি ব্যাংকের মার্চেন্ট ব্যাংক, সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোকে মার্কেট সাপোর্টের জন্য আহ্বান জানানো হয়। যা প্রস্তাব আকারে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হবে। এরপর বুধ ও বৃহস্পতিবার সূচকের ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদনে হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৮
এমএফআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।