ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেয়ারবাজার

পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল করতে ৬ প্রণোদনা চায় ডিএসই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
পুঁজিবাজারকে আরও গতিশীল করতে ৬ প্রণোদনা চায় ডিএসই

ঢাকা: করোনাভাইরাসের কারণে অন্য সব খাতের মতো অর্থনীতির চালিকাশক্তি দেশের পুঁজিবাজারও ক্ষতিগ্রস্ত  হয়েছে। তাই পুঁজিবাজারকে আরও বিকশিত ও গতিশীল করতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের কাছে ছয়টি প্রণোদনা দাবি করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)।

সোমবার (১৩ জুন) বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর পক্ষ থেকে এই দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-

বন্ডবাজার সম্প্রসারণ: একটি স্বতন্ত্র বন্ড মার্কেটের জন্য রেগুলেটরি এবং টেকনোলজিক্যাল কাঠামো সম্পূর্ণরূপে তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে করপোরেট বন্ড মার্কেটের আকার খুবই ছোট। আমরা মনে করি একটি সময়োপযোগী নীতি সহায়তার মাধ্যমে কার্যকর বন্ড মার্কেট তৈরি করা গেলে দেশের শেয়ারবাজার তথা সামগ্রিক অর্থনীতি উপকৃত হবে। সে জন্য জিরো কূপন বন্ডের মতো সব ধরনের করপোরেট বন্ডের উদ্ভূত সুদ বিনিয়োগকারী নির্বিশেষে কর মুক্ত রাখা প্রয়োজন।

করপোরেট করহার হ্রাস: প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে সেই  তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা অত্যন্ত সময়োপযোগী পদক্ষেপ। শেয়ারবাজারের টেকসই সম্প্রসারণের জন্য তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের ব্যবধান নূন্যতম ১০% করতে হবে।

লভ্যাংশের করমুক্ত সীমাবৃদ্ধি: শেয়ারবাজারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ৫০ হাজার থেকে ন্যূনতম ১ লাখ টাকা করা দরকার। পাশাপাশি লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর চূড়ান্ত করদায় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।

এসএমইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার হ্রাস: ২০২১ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এসএমই বোর্ড নামে একটি পৃথক বোর্ড চালু করে। যার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদী মূলধন যোগান ও করপোরেট গভর্ন্যান্স উন্নতরণ। এই বোর্ডে কোম্পানিগুলোকে আগ্রহী করার জন্য ন্যূনতম ৫ বছরের জন্য হ্রাসকৃত ১০% হারে কর ধার্য করার দাবি জানানো হয়।

বিনিয়োগকারীদের আয়ের ওপর কর হ্রাস: কোম্পানিগুলো কর পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দেয়। লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর প্রকৃতপক্ষে দ্বৈত কর। এজন্য করপোরেট শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর ২০% থেকে হ্রাস করে ১০% করতে হবে। সেই সঙ্গে করপোরেট করদাতাদের ক্ষেত্রে লভ্যাংশ আয়ের ওপর চূড়ান্ত করহার ১০% করতে হবে।

স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেকহোল্ডারদের উৎসে কর হ্রাস: শেয়ারবাজারের সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে ব্রোকারেজ হাউজকে ন্যায়সঙ্গত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করতে বিদ্যমান অযৌক্তিক করনীতি থেকে অবমুক্তি দিয়ে সিকিউরিটিজ লেনদেনের ওপর প্রদত্ত অগ্রিম আয়কর ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ (পূর্বে এটি ০.০১২৫ শতাংশ ছিল) করতে অথবা আয়কর অধ্যাদেশ মোতাবেক নিয়মিত হারে আয়কর প্রদানের আদেশ জারি ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএসই পক্ষ থেকে আগামী অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের জন্য অর্থমন্ত্রীকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পক্ষথেকে অভিনন্দন জানানো হয়।

বলা হয়, এবারের বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষি খাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষা খাতসহ বেশ কিছু খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বাজেটে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক সম্ভবানাও কাজে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। যা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই বহিঃপ্রকাশ।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ডিএসই মনে করে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি, উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী কার্যক্রমের মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করার কৌশল নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে উন্নয়ন ও উৎপাদনমুখী যে সু-পরিকল্পিত কর্মপন্থা, ব্যবসাবান্ধব ও ব্যবস্থাপনা কৌশল বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে, সে জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বাজেট প্রস্তাবনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছে।

শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও বিকাশে সরকারের নীতি সহায়তা ও বাজার বান্ধব আইন প্রণয়নের ফলে দেশের শেয়ারবাজার এগিয়ে যাচ্ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে সেই তালিকাভুক্ত কোম্পানির জন্য করহার ২২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে দেশের বৃহৎ এবং স্বনামধন্য কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহী হবে। এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

সংবাদ সম্মেলনে ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূঁইয়া, পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান, পরিচালক শরীফ আনোয়ার হোসেন, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম সাইফুর রহমান মজুমদার এফসিএমএ উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০২২
এসএমএকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।