সদর দক্ষিণ-লালমাই (কুমিল্লা): দুই হাত-পা বাঁকা। ঘাড় ও পিঠ সোজা হয়নি কখনো।
তীব্র শীত বা বৃষ্টি তাকে কখনো আটকাতে পারেনি। জামাতে নামাজ পড়া নিশ্চিত করতে অনেক সময় আসরের নামাজের পর মসজিদেই বসে থাকেন। মাগরিব ও এশার নামাজ পড়ে তারপর বাড়ি ফেরেন। কর্মযুদ্ধে হেরে যাওয়া জাবেদের ধর্মচর্চার সাফল্যের গল্প স্থানীয়দের মুখে মুখে।
দৈনিক কালেরকণ্ঠের অনলাইন সংস্করণে 'আজান হলেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মসজিদে যান প্রতিবন্ধী ওমর' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের দোশারীচোঁ গ্রামস্থ প্রতিবন্ধী জাবেদ ওমরের বাড়িতে উপহার নিয়ে যান বসুন্ধরা শুভসংঘের লালমাই উপজেলা শাখার বন্ধুরা।
সংগঠনটির পক্ষে তাকে ২৫ কেজি চাউল, ৩ কেজি আটা, ২ লিটার সয়াবিন তৈল, ২ কেজি পেয়াজ, ২ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ৪টি সাবান, ১টি নামাজী, ১ টি টুপি, ১ টি শীতবস্ত্রসহ কিছু পোশাক উপহার দেওয়া হয়।
উপহার হস্তান্তরের সময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক কালেরকণ্ঠের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলা প্রতিনিধি জহিরুল ইসলাম, বসুন্ধরা শুভসংঘের লালমাই উপজেলা শাখার সভাপতি ডেন্টিস্ট মফিজুল ইসলাম মুন্না, সহ-সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন, নাফিউ জামান, সাধারণ সম্পাদক কাজী ইয়াকুব আলী নিমেল, দপ্তর সম্পাদক হাবিব মজুমদার ও অর্থ সম্পাদক সৈকত।
প্রতিবন্ধী জাবেদ ওমরের দাদি মরিয়ম বেগম বলেন, জন্মের ছয় মাস থেকেই বুঝতে পেরেছি আমার নাতি শারীরিক ও বাকপ্রতিবন্ধী। ৭-৮ বছর বয়স পর্যন্ত চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে নিয়েছি, কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে নামাজ পড়লে আল্লাহ সুস্থ করে দেবে, এ আশায় মসজিদে দিয়ে আসা শুরু করি। প্রথম প্রথম কোলে করে দিয়ে আসতাম। এরপর উদ্দীপন সংস্থা থেকে তাকে একটি হুইল চেয়ার দেয়। সেই চেয়ারে বসেই মসজিদে চলে যেত। কয়েক বছর ধরে আর চেয়ার ব্যবহার করা লাগে না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে যায়। অন্ধকারে মসজিদে আসা যাওয়ার জন্য ছোট একটি লাইট কিনে দিয়েছি।
প্রতিবন্ধী জাবেদ ওমরের বাবা জাফর আহমেদ বলেন, আমার শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে খাদ্য সহায়তা ও শীতবস্ত্র উপহার দেওয়ায় বসুন্ধরা শুভসংঘকে ধন্যবাদ।
দোশারীচোঁ উত্তরপাড়া জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম হাফেজ ইসমাইল বোখারী বলেন, আমি এক বছর ধরে এ মসজিদে দায়িত্ব পালন করছি। শারীরিক প্রতিবন্ধী জাবেদ ওমর এ মসজিদের একজন নিয়মিত মুসল্লি অনেক সময় ফজরের সময় দেখা যায়, আমি ইমাম আর মুসল্লি একমাত্র সে। তখন দুজনই জামাতে নামাজ আদায় করি। শুনেছি আগে সে হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করত। নামাজ পড়ার কারণে এখন সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারে। তাকে সহায়তা করায় বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘকে ধন্যবাদ জানাই।
বসুন্ধরা শুভসংঘ লালমাই শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী ইয়াকুব আলী নিমেল বলেন, আমরা এখন যে মানুষটির পাশে দাঁড়িয়ে আছি সে জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেও, ধর্মচর্চায় রয়েছে তার অসাধারণ সাফল্য। আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘ লালমাই উপজেলা শাখার বন্ধুরা সামান্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। আমরা জাবেদ ওমরের পাশাপাশি দাঁড়াতে পেরে খুবই আনন্দিত। সে একজন বাক প্রতিবন্ধী, জন্মের পর থেকেই সে কথা বলতে পারে না তবে ইনিয়ে বিনিয়ে সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে। আমরা তার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে পূর্ণ সুস্থতা দান করেন।
বসুন্ধরা শুভসংঘ লালমাই উপজেলা শাখার উপদেষ্টা, শিক্ষানুরাগী মো. কামাল হোসেন বলেন, শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধী জাবেদ ওমরের মতো সমাজের পিছিয়ে পড়াদের পাশে থাকবে বসুন্ধরা শুভসংঘ। এ প্রত্যাশা করছি।
লালমাই প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও উদ্দীপন'র পরিচালক মো: কামাল হোসেন বলেন, প্রথম দিকে প্রতিবন্ধী ছেলেটি হামাগুড়ি দিয়ে মসজিদে যেত। চলাফেরার জন্য ৫ বছর আগে আমরা তাকে একটি হুইল চেয়ার দিয়েছিলাম। শুনেছি এখন আর তার হুইল চেয়ার ব্যবহার করতে হয় না। হেঁটেই মসজিদে যেতে পারে। খাদ্য ও শীতবস্ত্র নিয়ে জাবেদ ওমরের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বসুন্ধরা শুভসংঘের দায়িত্বশীলদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০২৫
জেএইচ