তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছিলেন গাইবান্ধা শহরতলির ‘ফিরোজা সালেক’ বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত আব্বাস আলী (৭০) ও কোহিনুর বেগম (৭৩)। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে বসুন্ধরা শুভসংঘের কর্মীরা কম্বল নিয়ে বৃদ্ধায়াশ্রমে গেলে প্রবীণরা তাদের দুঃখের ঝাঁপি খুলে বসেন।
কোহিনুর বেগম জানান, তিনি মানুষের বাসায় ঘুরে ঘুরে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনিও এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
চার বছর আগে ফিরোজা সালেক বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই পান তিনি। সেই থেকে এটিই তার ঠিকানা। আশ্রম কর্তৃপক্ষ অনেক কষ্ট করে তাদের প্রতিদিনের খরচ ওষুধপত্র, কাপড়চোপড়ের ব্যবস্থা করে। এবার শীতে আশ্রিত ২০ জন সত্তরোর্ধ্ব নারী-পুরুষ চরম বিপাকে পড়েন।
তিনি নিজের ভাষায় বলেন, ‘কাইল আইতোতো (রাতে) খুব জার (শীত) নাগচিলো। ঘুমে ধরে ন্যাই। আজ তোমরা ঘরের চেংরা-চেংরিগুলাক দেকিয়্যাই হামার ঘরের মোন ভালো হইয়া গেচে। ’
বৃদ্ধাশ্রমের পাশেই নানা ধরনের কাঠের গাছ।
পড়ন্ত দুপুরে সেই গাছের ব্যানার লাগিয়ে শুরু হলো কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান। বসুন্ধরা শুভসংঘের মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে শুভেচ্ছা জানালেন আশ্রমের পরিচালক শাহানা ইয়াছমিন লাকী।
তিনি বলেন, ‘মায়ের মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলি। মায়ের নামে গড়া প্রতিষ্ঠান অনেক কষ্ট করে চলছে। ভবনটি নিজের হলেও বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিতদের পেছনে মাসিক খরচ অন্তত ২০ হাজার টাকা।
শুভসংঘের কর্মীরা শীতার্তদের পাশে উষ্ণতা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আমি তাদের কাছ থেকে আরো মানবিক কর্মকাণ্ড প্রত্যাশা করি। ’
কম্বল বিতরণ উদ্বোধন করেন শুভসংঘের জেলা সম্পাদক শাহানা বেগম শানু ও সাংগঠনিক সম্পাদক আহছানিয়া স্নিগ্ধা। এ সময় কালের কণ্ঠের জেলা প্রতিনিধি অমিতাভ দাশ হিমুন উপস্থিত ছিলেন।
আহছানিয়া স্নিগ্ধা বলেন, ‘এই বৃদ্ধাশ্রমের ২০ বাবা-মাকে কম্বল দেওয়া হলো। এর আগে সকালে ছিন্নমূল ২৫ শিশুকে কম্বল দেওয়া হয়েছে। গত তিন দিনে সড়কের নিরাপত্তা প্রহরী, রিকশাচালক, অলাভজনক সংগঠনের কর্মচারীদের মধ্যে আরো ১৫ জনকে কম্বল দেওয়া হয়েছে। ’
কম্বল হাতে পাওয়ার পর মালেকা বেগম (৭২), সোনাভান (৬৯), আজিরনসহ (৬৫) আশ্রমের অনেকে আনন্দিত হন। চোখে কান্না নিয়ে নুরজাহান বেগম (৭০) বলন, ‘আল্লাহ তোমার ঘরের সগলের ভালো করুক। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
নিউজ ডেস্ক