বান্দরবান: অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতিসত্তা ও ভাষাভিত্তিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষাসহ সব সংগ্রাম এবং আন্দোলনের উৎস-প্রেরণা। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।
নৃগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খেয়াং, লুসাই, বম, ম্রো, খুমি, চাক, পাংখোয়া। তাদের রয়েছে স্ব স্ব ভাষা ও বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বান্দরবান জেলা শাখা ‘মায়ের কথা, আমার ভাষা’ শিরোনামে ভাষার প্রতি আবেগ-অনুভূতি, সম্মান ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেছে।
বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে শহীদ মিনার চত্বরে আয়োজনটি সম্পন্ন হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা শুভসংঘ বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি উয়ই সিং মার্মার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বালাঘাটা বিলকিছ বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন।
প্রধান অতিথি বলেন, ‘আমরা বাঙালি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে বসবাস করে আসছি এবং সম্মিলিতভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করেছি। এবছরও আমরা সব সম্প্রদায় ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনে ব্যত্যয় ঘটবে না। আজকের অনুষ্ঠানটি আমাকে অভিভুত করেছে। মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করি। বসুন্ধরা শুভসংঘকে সাধুবাদ জানাই সৃজনশীল এই আয়োজনটির জন্য। ’
বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি উয়ই সিং মার্মা বলেন, ‘মাতৃভাষা’ শব্দটির ব্যাসবাক্য হলো- ‘মাতৃস্বরূপিনী ভাষা’। মানুষ যে সমাজে বড় হয়, সেই সমাজের ভাষা তাকে রপ্ত করতে হয়। সেই ভাষাই তাকে মায়ের মতো গর্ভে ধারণ করে মানুষরূপে তাকে নতুন করে জন্ম দেয়। এ কারণেই সেই ভাষা হয়ে যায় তার মা, এর নাম তাই মাতৃভাষা। মানুষ সারাজীবন যে ভাষা দিয়ে চিন্তা করে ও চিন্তাকে প্রকাশ করে থাকে সেটি আর কোনো ভাষা নয়, -একান্তই তার মাতৃভাষা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০২৫ উপলক্ষে ‘মায়ের কথা, আমার ভাষা’ শিরোনামে আমাদের আজকের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা ভাষার প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য উদযাপন, যেখানে শিশুদের সৃজনশীলতা ফুটে উঠবে প্রকৃতির ছোঁয়ায়! নতুন প্রজন্মের হাত ধরে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর হোক, তাদের সৃজনশীলতা উজ্জীবিত হোক। ’
সাংগঠনিক সম্পাদক উ অং সিং মার্মা তার বক্তব্যে বলেন, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা দিবস, একটি গৌরবময় দিন যা আমাদের ভাষার জন্য আত্মত্যাগের স্মৃতিকে স্মরণ করে। এই দিনে আমরা আমাদের মাতৃভাষাকে সম্মান জানাই এবং তার মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। ভাষা সংরক্ষণের মাধ্যমেই ভাষা টিকিয়ে রাখা সম্ভব।
সদস্য স্বর্ণা চাকমা তার বক্তব্যে সব জাতি গোষ্ঠীর মাতৃভাষা রক্ষা ও চর্চার বিষয়টি তুলে ধরেন। শিশুদের মাতৃভাষার দক্ষতা বাড়াতে এবং মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় ভাষা শিক্ষার বিশেষ প্রকল্প চালু, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ভাষা গবেষণা ও উন্নয়নে অনুদান, ভাষা উৎসব ও প্রতিযোগিতার আয়োজন, ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ তৈরি, ভাষা শিক্ষার জন্যে বৃত্তি দেওয়ার মতো পদক্ষেপগুলো চালু করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বালাঘাটা বিলকিছ বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক বিসুদ্ধানন্দ বড়ুয়া, সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) জহিরুল হক, বসুন্ধরা শুভসংঘ বান্দরবান জেলা শাখার সদস্য রবিন তঞ্চঙ্গ্যা, উ হ্লা শৈ মার্মা, চন্দ্রিমা বড়ুয়া ও শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫
এসআরএস