ইসলামের দৃষ্টিতে ঋণখেলাপি দুই ধরনের। অনেকে বাস্তবিক কোনো সমস্যার দরুণ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না।
জাকাতের হিসাবের সময় অনেকেই ঋণের অর্থের কী হবে এটা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। তাদের জন্য আজকে এই আয়োজন।
অন্যের কাছে যে ঋণ পাবেন
জাকাতদাতা যে ঋণ অন্যের কাছে পাবে তার বিধান হলো- অন্যের হাতে থাকাকালীন সেই সম্পদে মূল জাকাত ফরজ হবে। কিন্তু এখনি আদায় করা ফরজ হবে না। বরং ওই টাকা হাতে পাওয়ার পর জাকাত আদায় করা আবশ্যক। কেননা সম্পদ তো জাকাতদাতার হাতে নেই। তবে হাতে আসার পর পেছনের বছরের কাজাসহ জাকাত আদায় করতে হবে।
যার কাছে ঋণ পাবেন তিনি সম্পদশালী হলে এবং ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে কোনোরূপ টালবাহানা করার সম্ভাবনা না থাকলে জাকাতদাতা ইচ্ছা করলে চলমান জাকাতের সঙ্গে সেই ঋণের জাকাতও পরিশোধ করে দিতে পারেন। এতে তার জিম্মা থেকে দায়িত্ব মুক্ত হয়ে যাবে। অন্যথায় তা হাতে পাওয়ার পর হিসাব করে বিগত প্রত্যেক বছরের জাকাত আদায় করতে হবে।
কেননা তা সম্পদশালী লোকের হাতে ছিল। আর তা তলব (পরিশোধ) করাও সম্ভব ছিল। সুতরাং ঋণদাতার ইচ্ছাতেই তলব করতে বিলম্ব করা হয়েছে। এভাবে অগ্রিম পরিশোধ করলে পরতর্তীতে সেই ঋণ পাওয়ার পর কাজা আদায়ের ঝামেলায় যাওয়া লাগবে না।
তবে যেসব ঋণ অভাবী লোকের হাতে থাকার কারণে উঠানোর (পরিশোধের) সম্ভাবনা কম, বা ধনী লোকের হাতেই আছে তবে সে টালবাহানা করছে, সেসব ঋণের জাকাত অগ্রিম প্রদান করবে না।
আর যেসব ঋণ একেবারেই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, পরবর্তীতে হঠাৎ করে পাওয়া যায়, সেসব ঋণ হস্তগত হওয়ার পর ওলামায়ে কেরামের কারও কারও মতে তখন থেকে নতুন করে বর্ষ গণনা শুরু করবে।
আবার কেউ বলেন, বিগত এক বছরের জাকাত আদায় করবে এবং পরবর্তী বছর আসলে আবার জাকাত আদায় করবে।
স্বামীর কাছে স্ত্রী যে মোহরানা পায় তা হস্তগত হওয়ার আগ পর্যন্ত তাতে জাকাত ফরজ হয় ন। হস্তগত হওয়ার পর যদি স্ত্রীর কাছে আগে থেকেই জাকাতযোগ্য সম্পদ নিসাব পরিমাণ না থাকে তাহলে এখন থেকে নতুন করে বছর গণনা শুরু করবে। এক বছর পূর্ণ হলে জাকাত আদায় করবে।
স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার আগ থেকেই যদি নিসাব পরিমাণ টাকার মালিক থাকে তাহলে সদ্যপ্রাপ্ত মোহরানার টাকা অন্যান্য সম্পদের সঙ্গে যোগ হয়ে যাবে এবং পুরনো সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত প্রদান করতে হবে।
অন্যরা যে ঋণ পাবে
ঋণ সাধারণত দুই কারণে নেওয়া হয়। ক. মৌলিক প্রয়োজন পূরণের জন্য ঋণ নেওয়া।
খ. ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ বা উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য ঋণ নেওয়া।
মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য ঋণ নিয়ে থাকলে তা জাকাতের অর্থ থেকে বাদ দেওয়া যাবে। এ ধরনের ঋণ সম্পদ থেকে বাদ দেওয়ার পর যদি নেসাব বাকি থাকে জাকাত ফরজ হবে, অন্যথায় ফরজ হবে না। -মুয়াত্তা মালেক ও বাদায়েউস সানায়ে
কিন্তু উন্নয়নমূলক ঋণ অর্থাৎ যেসব ঋণ ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য, ভাড়া দেওয়া বা বিক্রি করার জন্য ভবন নিমার্ণের উদ্দেশ্যে নিয়ে থাকে, তা জাকাতের অর্থ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। অর্থাৎ এ ধরনের ঋণের কারণে জাকাত কম দেওয়া যাবে না। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক
বর্তমানের শিল্পপতিরা এ ধরনের ঋণ বেশি নিয়ে থাকেন। উন্নয়নমূলক ঋণ বাদ দিলে অনেক শিল্পপতি আছেন তাদের ওপর কোনো জাকাতই ফরজ হবে না। কারণ তাদের সম্পদের চেয়ে ঋণের পরিমাণ বেশি।
স্ত্রীর মোহরানার টাকা স্বামীর ওপর ঋণ হলেও এই ঋণ জাকাতের সম্পদ থেকে বাদ দেওয়া যাবে না। -রদ্দুল মুহতার
অন্যকে যে টাকা ঋণ দিয়েছে যা উঠে আসার সম্ভাবনা প্রবল বা ব্যবসায়ী বাকীতে যে পণ্য বিক্রি করেছে সেসব টাকা জাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে মিলিতভাবে হিসাব করলে যদি নিসাব পূর্ণ হয় তাহলেও জাকাত দিতে হবে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক
ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
এমএইউ/