বেশ খোলাখুলিই কথা বলছিলেন, সিঙ্গাপুরের গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক (বিজ্ঞান ও প্রকৌশল কাউন্সিল) অধ্যাপক তান সেজ উই। কোন রাখঢাক নেই।
এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপের অংশ হিসেবে একটি দিন কাটে এখানকার গবেষণা প্রতিষ্ঠান এ*স্টারে। সরকার গবেষণা খাতে বেশ বড় অংকের বাজেট খরচ করে। সেটা কয়েকটি দেশের মোট বাজেটের চেয়েও বেশি। তবে সেটা কত, তা বলেননি তান সেজ।
তান সেজ বলেন, এখানে যত জন বিজ্ঞানী রয়েছেন তাদের ষাট ভাগেরও বেশি বিদেশি। তাদের অনেক মোটা বেতনে এবং অনেক সুবিধা দিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন মেয়াদের চুক্তি রয়েছে। বেসরকারি পর্যায়ের নতুন নতুন উদ্যেক্তাদের গবেষণার জন্যও আমরা আমাদের গবেষকদের নিয়োগ দেই। বেতনও দেই আমরা।
তিনি জানান, চুক্তির মেয়াদের মধ্যে বিদেশি গবেষক অন্য দেশের কোম্পানিতে যেতে পারেন না। তবে যদি সিঙ্গাপুরের কোম্পানি তার প্রয়োজনে নিয়োগ দেয় সেক্ষেত্রে যেতে পারেন।
কি ধরনের গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়? সাবলীল উত্তর, অবশ্যই কৃষি নয়। কারণ সিঙ্গাপুর কৃষি প্রধান দেশ নয়। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ নেই বললেই চলে। আর নিশ্চয়ই ক্যান্সারের ওষুধ আবিস্কার নতুন জাতের ধান উৎপাদনের চাইতে বেশি লাভজনক। আমরা তাই করতে চাই।
তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে ব্যবসাও নেই। আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বলি এখানে বিনিয়োগ করতে। আমরা সুন্দর ব্যবসার পরিবেশ দেবো। আমরা গ্রাহক ব্যবসায়ীকে বলি, এখানে এসে বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলতে। এখানে ক্রয়ের পরিবেশ ভাল। এখানে কোম্পানি করতে বলি। তাদের পরিকল্পনা দেই ব্যবসার। তারা ব্যবসা করেন আর আমরা চাকরি করি। এটাই সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি।
এরপর ঘুরে দেখালেন এ*স্টার। এখানে গবেষণা করা হয় কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে। এখানে মাত্রিকতার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ নিয়ে গবেষণা করা হয় আর ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের ওষুধ তৈরিতে গবেষণা করা হয়। এখানে রয়েছে একটি রোবোটিক কম্পিউটার যেটি আপনার মনের ভাষাও বলে দিতে পারবে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের চাহিদাগুলো জানিয়ে দেয় এই রোবট।
হাত ভাল না চামচ!
দেখতে দেখতে এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপের ৮২ দিনের মধ্যে পঞ্চাশ দিন চলে গেলো। এটা সত্যি এক পরিবারের মতো। একের সঙ্গে অপরের সর্ম্পকগুলো এখন অনেক স্বাভাবিক। এখন আর দেখলেই খুব উচ্ছ্বাস নয়। একের সঙ্গে অপরের যেমন ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠছে, আবার দূরত্বও বেড়েছে কারো কারো। তবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, শেষ দিন আর এই দূরত্ব থাকবে না।
দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ বরাবরই হাত দিয়ে ভাত খেতে পছন্দ করেন। অন্যদিকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মানুষ খাবারের জন্যে চপস্টিক (দুটি কাঠি) ব্যবহার করেন। আমাদের রুমে রান্না করা হলে একরাতে লাওসের পাতিতিন খেতে আসেন। আমার হাত দিয়ে খাওয়া দেখে তিনি ভিডিও করেন এবং হাসতে থাকেন। কিছুটা অপ্রস্তুত লাগছিল। তবে তিনি বললেন, এটা তার কাছে অসাধারণ লাগছে যে, আমি পাঁচটি চপস্টিক ব্যবহার করছি।
এরই মধ্যে আমার হাতের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন চায়নার জিং চিন। তার ছেলে উইলিয়াম বেশ কয়েকদিন ছিল তার সঙ্গে। আমাকে বেশ কয়েকবার হাত দিয়ে খেতে দেখে উইলিয়ামও এখন হাতের ব্যবহার শুরু করেছে। বিষয়টি সহজভাবে নেয়নি জিং। তবে আমি তাকে বললাম, হাত নিশ্চয়ই চামচ বা চপস্টিকের চেয়ে বেশি নিরাপদ।
আমাকে সহযোগিতা করলেন শ্রীলংকার শানিকা। তিনি জিংকে বললন, আমরা হাত ধুয়ে খাই। হাত পরিষ্কার তখন নিশ্চিত হই। আর তোমার চামচ বা স্টিক যে পরিষ্কার তার নিশ্চয়তা কি! এছাড়াও চপস্টিক ব্যবহার করলেও তোমাকে মাংস ছেড়ার সময় ঠিকই হাত ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাই একবারে হাত ব্যবহারই ভাল।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
এমএন/জেডএম